লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান খালেদা জিয়ার ||

দেশের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে এ আহ্বান জানান তিনি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাণীটিতে স্বাক্ষর করেন।

বাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন এ দেশ। স্বাধীনতার মূল স্বপ্নই ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ কেড়ে নিয়েছে জবরদখলকারী বর্তমান অবৈধ সরকার।
তিনি বলেন, এ অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে পায়ে ঠেলে জনগণের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। নিরাপদে বেঁচে থাকার গ্যারান্টিও আজ নেই। প্রতিনিয়ত এদেশের নিরপরাধ নাগরিকদের এখন হত্যার শিকার হতে হচ্ছে। কথায় কথায় গুলি চলছে। চোখের পানি ঝরছে হাজারো মা-বাবা, স্ত্রী, বোন ও সন্তানের। এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটি উপায়, আবারো ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সেই চেতনাকে বুকে ধারণ করে আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে লড়াইয়ে। চারিদিকে একই ধ্বণি হবে- এক হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা বাকশালী গণতন্ত্র আর নয়। ভোটের অধিকার চাই, বাক স্বাধীনতা চাই, বেঁচে থাকার গ্যারান্টি চাই।

খালেদা জিয়া বলেন, ২১শে ফেব্রয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এক তাৎপর্যময় দিন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জীবনবাজি রেখে রাজপথে নেমে এসে পুলিশের গুলিতে আত্মদান করেন। তাদের এই মহিমান্বিত আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান। বায়ান্ন সালের ২১শে’র পথ ধরেই এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীকারের সংগ্রাম সমপ্রসারিত হয়েছে, অর্জিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সরকারী স্বীকৃতি না দিয়ে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এদেশের উপর নিজেদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল-এদেশকে স্থায়ীভাবে পরাধীন রাখার জন্য। কিন্তু ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তা প্রতিরোধ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন এ দেশ।

তিনি বলেন, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি এখনো বিজাতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয়নি। নিজস্ব ভাষা ও দেশজ সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন এবং সংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধ করাও তাই এবারের ভাষা দিবসের অন্যতম অঙ্গিকার।

পরিশেষে আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় এই দিবসটিতে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশ ঘটাতে অদম্য প্রেরণা লাভ করবে।

মহান ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের আয়োজিত নানাবিধ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, আমি ৫২’র ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি সমবেদনা। পাশাপাশি ভাষা সৈনিকদের জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ২০ফেব্রুয়ারি ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post