১৯৯৬-এ এক মাস পিছিয়েছিল এসএসসি পরীক্ষা ||

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের অসহযোগ আন্দোলনের কারণে আমাদের এস.এস.সি পরীক্ষা প্রায় এক মাস পিছিয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগকে হাজারও অনুরোধ করা স্বত্বেও পরীক্ষার কারণে তারা অসহযোগ কর্মসূচী বন্ধ করেনি। এখন সেই আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অনুরোধ করছে এস.এস.সি পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করার জন্য। বড় বিচিত্র এই দেশের রাজনীতি!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার সময় অবরোধ প্রত্যাহারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অনুরোধের পর এমন মন্তব্য করেছেন জাবেদ নামে এক পাঠক।

আরও একজন মন্তব্য করেন- আগে দেশ বাঁচুক, তারপর না হয় পরীক্ষা।

এক পাঠক বলেন, আপনার আটো পাশের মেসিনটা চালু কইরা দেন, ভোট না পাইয়া মন্ত্রী হওয়া গেলে পরীক্ষা না দিয়াও এ+ পাওয়া যাইবো কী বলেন।

শহীদুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, পরীক্ষা পেছানোর দরকার নাই, পদত্যাগ করুন, সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে, সাখাওয়াত হোসেন নামে এক পাঠক সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট লিখেছেন-

  আকুল আবেদন...

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারের কাছে সবিনয় আবেদন যেকোন উপায়ে বিরোধীজোটের কর্মসুচী প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত রাখুন। কেননা অত্যন্ত গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিগত সময়ে সরকার শক্তি প্রয়োগে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়া সত্বেও অনেক মানুষের প্রান গিয়েছে, অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে।

সুতরাং বিরোধীজোটের কর্মসুচী বহাল থাকা অবস্হায় যত কিছুই করা হউক না কেন চোরাগুপ্তা হামলা আর সহিংসতার হাত থেকে পরীক্ষার্থীদের জীবন নিরাপদ মনে করার কোন সুযোগ নেই।

অতএব, সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার হটকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত জীবনকে অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিবেন না। হয় দমন না হয় সমঝোতা যে কোন উপায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১/২ মাস সময় লাগলে সে পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রাখুন।

দয়া করে একটু ভাবুন সময়ের চাইতে জীবনেরর মুল্য বেশী, নাকি জীবনকে বিপন্ন করে হলেও পরীক্ষার সময়সূচী ঠিক রাখা জরুরী? আপনারা হয়ত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। কিন্তু লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীকে ঘর থেকে বের হওয়ার পর পরীক্ষা শেষে নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা কিভাবে দেবেন? তাছাড়া একজন পরীক্ষার্থী প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যু আতঙ্ক নিয়ে কিভাবে সঠিক উত্তর লিখবে? কেউ মারা গেলে বা জ্বলসে গেলে সে জীবন আর কোন দিন ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।

বিরোধী দলের কাছেও সবিনয় আবেদন কিছুদিনের জন্য কর্মসুচী স্হগিত করে পরীক্ষার সুযোগ করে দিন।

তিনি লিখেছেন, সরকার হিসাবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ক্ষমতাসীন দলের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

অতএব শক্তি প্রয়োগ বা সমঝোতার বিনিময়ে বিরোধীজোটকে কর্মসুচী প্রত্যাহারে সম্মত না করে জোর করে পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ জীবনকে ঝুকির মুখে ঠেলে দেয়া হলে যে কোন ক্ষয়ক্ষতির জন্য মানুষ সরকারকেই দায়ী করবে। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করার হাতিয়ার হিসাবে পরীক্ষার্থীদেরকে বলির পাঠা বানাবার অপচেষ্টাকে সাধারণ মানুষ কখনো সমর্থন করবে না।

বরং উল্টো পরীক্ষা বয়কটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আশঙ্কা অনেক বেশী। কারণ প্রতিটি সচেতন নাগরিকের কাছেই সময়মত পরীক্ষার চাইতেও জীবনের মূল্য অনেক বেশী। তারা প্রয়োজনে একবছর অপেক্ষা করবে তারপরও জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে চাইবে না। সবার মাঝে শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

প্রসঙ্গত, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট রোববার থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি দিলেও এসএসসি পরীক্ষা পেছানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনও মনে করি তাদের (২০-দলীয় জোট) মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে, পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার বা স্থগিত করবেন।’

পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী সোমবার থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারণে এ পরীক্ষা নিয়ে পৌনে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ২০-দলীয় জোট ৭২ ঘণ্টা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবরোধ থাকলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর হরতাল থাকলে ওই দিনের পরীক্ষা পেছানো হবে। তবে পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষা পেছানোর সময় জানানো হবে। এর আগে পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হবে।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post