আইনজীবী সভাপতি ও আঃলীগ নেতা জোর পূর্বক গৃহবধূ ধর্ষণ করলেন ||

দক্ষিন পশ্চিম বঙ্গের যশোর জেলার রাজনীতির নেতৃত্ব চিত্র বেশ মজাদারই বটে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম শুধু যশোর নয়- খুলনা বিভাগীয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারক ও বাহক, তা কে না জানে! কিন্তু মজার বিষয় হল- যশোর জেলার আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী রাজনীতিক আলী রেজা রাজু এবং খালেদুর রহমান টিটো ঐ তরিকুল ইসলামের বাল্যবন্ধু তো বটেই সব কিছুরই বন্ধু।

দিনের বেলায় একে অন্যকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করলেও রাতের বেলায় একসঙ্গে মদ্যপান করা ছিল তাঁদের পুরোনো অভ্যাস। মূল সংবাদে যাওয়ার আগে যশোর রাজনীতি নিয়ে কিছুটা আলোচনায় যেতেই হচ্ছে।

বিএনপির নেতৃত্বের প্রশ্নে এই অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে তরিকুল ইসলাম থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখানে পঞ্চমুখী লড়াই আছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যশোর সদরের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন একদা যশোর আওয়ামী লীগের রাজনীতির হাল ধরতে চাওয়া কর্নেল (অবঃ) কাজী শাহেদ পুত্র কাজী নাবিল আহমেদ। যিনি দীর্ঘদিন দিন ধরে আবাহনী ক্লাব এর পৃষ্ঠপোষক ও অতি অবশ্যই বাফুফে সহ সভাপতি হিসাবে একজন ক্রীড়া সংগঠকও বটে।

বর্তমানে যশোর জেলার আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিতে এই কাজী নাবিল আহমেদ, সাবেক দুই সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো , আলী রেজা রাজু ,শাহিন চাকলাদার, শরীফ আব্দুর রাকিব রয়েছেন।

সময়টা ২০০১ সালের নির্বাচন হবে। মনোনয়নের জন্য সেই সময় রাকিব, রাজু ছোটছোটি করলে মনোনয়ন পেয়ে যান আলী রেজা রাজু। কিন্তু সেবার ব্যবসায়ী কাজী শাহেদ ছিলেন নাছোড়বান্দা। তিনি মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হলে স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। সে ক্ষেত্রে সঙ্গী হিসাবে পেয়ে যান শরীফ আব্দুর রাকিব কে।যিনি তাঁর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে জয়ী হন রাজুর বন্ধু বিএনপির তরিকুল ইসলাম।

এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজী নাবিল, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব তরিকুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু খালেদুর রহমান টিটো, আলী রেজা রাজু, শরীফ আব্দুর রাকিব প্রচেষ্টা নিলে জয় হয় টিটো’র। নির্বাচনে তিনি জয়ীও হন।

হালের দশম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে মাঠে ছিলেন যশোর শহরের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা শাহীন চাকলাদার, কাজী নাবিল আহমেদ, খালেদুর রহমান টিটো ও আলী রেজা রাজু। আওয়ামী লীগের বড় সড় নেতা হয়েও মনোনয়ন পর্যন্ত চাইতে পারেন নি একদা এই জেলার পরাক্রমশালী নেতা এডভোকেট শরীফ আব্দুর রাকিব। কিন্তু কেন? বার্ডস আই এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে অযাচিত সেক্স স্ক্যান্ডালের মাধ্যমে রাকিব হারিয়েছেন তাঁর ক্রেডিবিলিটি।

২০০১ সালের যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট শরীফ আব্দুর রাকিব ক্ষমতার অপব্যবহারে শহরের গোটা এক ডজন নারীকে বিছানায় নিয়ে যেতে বাধ্য করেন।তার মধ্যে একটি ঘটনা নিয়ে আলোচনায় চলে আসেন শরীফ আব্দুর রাকিব। আইনের আশ্রয় নিতে এসে রাকিবের কুনজরে পড়েন এক গৃহবধূ। আর এ অবস্থায় ধরা পড়ে জনতার হাতে গণপিটুনিরও শিকার হন তিনি। ঘটনাটি ঘটে ২০১১ সালের দিকে।

দিনটি ছিল শনিবার। যশোর শহরের মৎস্য ভবনের রেস্ট হাউজে।

এডভোকেট শরীফ আবদুর রাকিব, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সে সময় তিনি একটি মানবাধিকার সংগঠনের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভাল আইনজীবী হিসেবে শহরে রাকিবের আলাদা সুনাম ছিল।

এ কারণে তিনি বার বার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ভাল আইনজীবী হওয়ার সুবাদে তার মক্কেলও বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় এক নারী মক্কেলকে কৌশলে রাকিব নিয়ে যান শহরের বাইরে জেলা মৎস্য ভবনের রেস্ট হাউজের দোতলার একটি রুমে। সঙ্গে ছিল দেশী মদ ও গরুর পোড়া মাংস।আর ক্ষমতার দাপট তো বটেই!!

প্রত্যক্ষদর্শীরা স্মরন করে বার্ডস আই কে বলেন, শরীফ রাকিব রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। সেখানে জোর করে ওই গৃহবধূকে মদ পান করিয়ে মাতাল করে তোলেন। ঘরের ভেতর যখন শরীফ রাকিব গৃহবধূর সঙ্গে ব্যস্ত তখন বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিল রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার ফজর আলী। ঘটনা চক্রে খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় একদল যুবকের কাছে। তারা রাত সাড়ে ৮টার দিকে রেস্ট হাউজের দোতলার ওই কক্ষটি ঘিরে ফেলে।

গোপনে তারা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে শরীফ আবদুর রাকিব ও মেয়েটির নগ্ন দৃশ্য। তোলা হয় স্টিল ছবিও। একপর্যায়ে তরুণরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের দু’জনকে বিবস্ত্র অবস্থায় আটক করে। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে কান্না কাটি শুরু করে শরীফ রাকিব। রাকিব যুবকদের মোটা অঙ্কের টাকাও অফার করেন ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য। ততক্ষণে খবর পৌঁছে যায় শহরে। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থলে।

শুরু হয় ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক। বয়সের ব্যবধান ভুলে শরীফ রাকিব সকলের হাত পা ধরেন ছবি না তোলার জন্য। তারা শরীফ রাকিব ও মেয়েটির যুগল ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন। এরই মধ্যে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি আর কিল ঘুষি। স্থানীয় যুবকরা শরীফ রাকিব ও গৃহবধূকে বেদম মারপিট করে। তাদের বাধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয় স্থানীয় অপর এক যুবক। এই ভাবে চলতে থাকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত।

এরই মধ্যে খবর পৌঁছে যায় যশোর কোতোয়ালি থানায়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমদাদুল হক শেখ সঙ্গীয় ফোর্সসহ রেস্ট হাউজে যান রাত সাড়ে ১০টার দিকে। তিনি যুবকদের কবল থেকে বিধ্বস্ত অবস্থায় শরীফ রাকিব ও তার মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। পরে দু’জনকে দুটি মাইক্রোবাসে চড়িয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওসি ইমদাদ। এই প্রসঙ্গে ওসি বলেন, রাকিব সাহেব যেহেতু জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মানবাধিকার সংগঠক, তাছাড়া এ ব্যাপারে যেহেতু থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি তাই রাকিব সাহেবকে ঘোপের বাসায় নামিয়ে দিয়েছি। আর মেয়েটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন মেয়েটি নিরাপত্তা হেফাজতে আছে।

এদিকে ঘটনার শিকার গৃহবধূ সম্পর্কে পাওয়া যায় লোমহর্ষক তথ্য। ঢাকার গাজীপুর এলাকার এ গৃহবধূর স্বামী যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। একটি চোরাচালান সংক্রান্ত মামলায় সে জেল খাটছে। স্বামীকে কারামুক্ত করতে এক মাস আগে যশোর আসে গৃহবধূ। জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে পরিচয় হয় সমিতির সভাপতি শরীফ রাকিবের সঙ্গে।

তিনি তার এক জুনিয়র আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটি আদালতে তোলেন। তিনি তার স্বামীকে জামিন করিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবেন এই আশ্বাস দেন। রোববার তার স্বামীর জামিনের শুনানির দিন ছিল। সেই জন্য গৃহবধূ রোববার সকাল থেকে শরীফ রাকিবের চেম্বারে অপেক্ষা করতে থাকে। বিকালে রাকিবের জুনিয়র গৃহবধূকে জানায়, ‘আজ আর জামিন হবে না, কাল সোমবার জামিন হবে।’

এ কথা শুনে মেয়েটি বাড়ি চলে যেতে চাইলে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে একটি রাত যশোরে থাকার জন্য বলা হয়। এ জন্য শহরের একটি আবাসিক হোটেলে থাকারও ব্যবস্থা করেন ওই জুনিয়র আইনজীবী। এরপর সন্ধ্যার দিকে শরীফ রাকিব ওই জুনিয়রের মাধ্যমে তার চেম্বারে ডেকে নেন এবং মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে শলাপরামর্শ করার কথা বলে তার সঙ্গে যেতে বলেন। গৃহবধূ সরল বিশ্বাসে শরীফ রাকিবের সঙ্গে তার কালো জিপে চড়ে বসেন। তারপর কৌশলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জেলা মৎস্য ভবনের রেস্ট হাউজে। তার পরই ঘটে এই ঘটনা।

দুই কন্যা সন্তানের জনক রাকিব ছাত্রজীবনে গোপালগঞ্জ থেকে যশোর চলে আসেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি শুরু করেন ছাত্র রাজনীতি। ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষ করে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন। ’৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে রাকিব পত্নী আলেয়া আফরোজ মহিলা কোটায় এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচিত-সমালোচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে রাকিব দলীয় প্রার্থী আলী রেজা রাজুর বিরোধিতা করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী শাহেদ আহমেদের চশমা মার্কার পক্ষে নির্বাচন করেন।

দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও তিনি রাজু’র পক্ষে নির্বাচন না করায় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শুরু হয় রাকিবের রাজনৈতিক পতন। যশোর পৌর নির্বাচনেও তার ভরাডুবি ঘটে। পরবর্তীকালে দলের জেলা সম্মেলনেও তিনি পরাজিত হন। একপর্যায়ে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে তাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। দলের একাধিক নেতা মনে করেন, রাকিবের এই অধঃপতনের জন্য তার চারিত্রিক দুর্বলতা অনেকটা দায়ী।

এদিকে ঐ ঘটনায় রেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার ফজল আলী জানিয়েছেন, রাকিব স্যার গত মাসের ২১ তারিখেও ওই মহিলাকে নিয়ে রেস্ট হাউসে আসেন। ঘণ্টা দুই অবস্থান করে চলে যান। যাওয়ার সময় তাকে ২শ’ টাকাও দিয়ে যান। ঘটনার দিন তিনিসহ মহিলাটি আসে। দরজা খুলে দিতে বললে আমি দোতলার রুমটি খুলে দিই। তাদের হাতে একটি বোতল ও একটি প্যাকেট ছিল। রাকিব স্যার আমাকে গ্লাস দিতে বলেন। আমি গ্লাস নিয়ে আসি।
তিনি আমাকে গ্লাস রেখে চলে যেতে বলেন। আমি বের হলে তিনি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। আমি রেস্ট হাউসের নিচ তলায় কাজে ব্যস্ত ছিলাম। প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা পরে হৈচৈ শুনে উপরে উঠে দেখি এ অবস্থা।

এদিকে কোনো এক সময়ে রাকিব বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিজের করে নিতে একটি বিশেষ মহল আমাকে ফাঁসিয়েছে।

অন্যদিকে যশোরের রাজনীতিতে প্রবাদ আছে- নেশার বন্ধু বড় বন্ধু। তরিকুল-রাজু-টিটো’র একত্রের নেশা করা যশোর রাজনীতির বৈচিত্র্যময়তা। সুযোগে মাঠ নিজের করে নিতে শাহীন চাকলাদার কর্তৃক রাকিবের নৈতিক চরিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে তাকে কৌশলে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু ক্ষমতার দাপটে এরা সবাই কমবেশি সমাজের ধিক চরিত্র। রাকিব এগিয়েছিল নারী কেলেংকারীর ঘটনায়। তিনি ডজন খানেক মেয়ে কে বলেছেন, “আমি উকিল,আছে ক্ষমতা- কাজেই এসো বিছানায় যাই, না গেলে তোমারই বিপদ।

উৎস : http://jononeta.com/ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post