বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, ক্যাবল টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রায় ১৯ ঘন্টা পর পুনরায় সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ঐ এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। যার ফলে গুলশানে ঐ এলাকার বাসিন্দারা মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে গিয়ে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছেন বলেও জানা গেছে। তবে, কেন এসব সংযোগ বন্ধ করা হল এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট করে কিছুই জানান হয়নি।
কিন্তু সরকারের এসব পদক্ষেপ কতটা আইনসম্মত তা জানতে চাওয়া হয় সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিকের কাছে। তিনি বলেন, তর্কের খাতিরে বলা যায় সরকার এটা করতে পারে। কিন্তু এটা করতে হলে সরকারকে এর কারণ দেখাতে হবে। হতে পারে যে সন্ত্রাসী আক্রমন হচ্ছে তার আশঙ্কায় সরকার সেখানে এমন করেছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কিছু বলছে না। বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া হয়েছিল। এই কাজের আইনি ভিত্তি যদি থাকত। যদি বকেয়া বিল অনেক বাকি থাকত। তাহলে বোঝা যেত আইনি প্রক্রিয়া এটা করা হচ্ছে। কিন্তু এখন এর আইনগত কোন ভিত্তি নেই। যেভাবে এটা করা হয়েছে তাতে স্পষ্টতই আইনের কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এসব কাজ যে আইনকানুন মেনে করার সরকারের যে বাধ্যবাধকতা আছে এখন যারা সরকার পরিচালনায় আছেন তারা ওটা ভুলে গেছেন। তারা হয়ত ভাবছেন ক্ষমতা মানেই আমার যা ইচ্ছা তাই করতে পারব। ক্ষমতা মানে আইন মেনে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে এই মূল কথাটা বোধহয় এখন আর তারা আমলে নিচ্ছেন না।
মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার জন্য কার্যালয়ের আশেপাশে অনেক মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা আইনগতভাবে সরকার করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিশ্চয়ই সরকার করতে পারেনা এবং যারা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের উচিৎ হবে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করা। এমনটি না করলে সরকারকে আইনের আওতায় আনতে না পারলে তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। নিংসন্দেহে তারা এটা করতে পারে না। সরকার যদি এর কারণ দর্শাতে না পারে তবে এটি বেআইনি কাজ হবে।
সরকার যদি আসলেই মনে করে যে কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়াকে কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেবে না এবং তারা যদি এটাও চান যে খালেদা জিয়া ওখানে আর থাকবেন না এবং এর জন্য যদি আইনি পথে যেতে চান তাহলে সেটা সম্ভব কিনা, সম্ভব হলেও কিভাবে সম্ভব ?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের কারণ থাকতে হবে। একজন লোক যদি একটা জায়গায় থাকতে চায় এবং তার নিরাপত্তার যদি কোন হুমকি না থাকে তবে এতে বাধা দেয়ার আইনগত কোন যুক্তি নেই। সরকার একমাত্র বাধা দিতে পারে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে। কিন্তু তাদের কাছে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই কারণ বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই গোটা পঞ্চাশেক মামলা সরকার করে ফেলেছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে একটা মামলাও তারা প্রমাণ করতে পারছেনা, চেষ্টাও করছেনা। পারছেনা বলেই হয়ত চেষ্টা করছেনা। অতএব সরকারের এ কাজগুলো কোন যুক্তিতে সম্ভব না। আমি ক্ষমতাশালী আমার ইচ্ছা আমি করছি ঐ ভিত্তিতে এটা সম্ভব।
উৎস : বিবিসি/ ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫।