নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জে ৭ জামায়াত-শিবির কর্মীর শাহাদাৎ দিবস আজ

মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার কর্মী এলাকা ছাড়া

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুর হাটে পুলিশের গুলীতে নিহত জামায়াত- শিবিরের সাত শহীদের শাহাদাৎ দিবস আজ রোববার। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসির প্রতিবাদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলী চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের সাত নেতাকর্মীকে হত্যা করে। এসময় আরো ১৫ জনের মত গুলীবিদ্ধসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়।

এদের অনেকে পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছে। ওই দিন পুলিশের গুলীতে গুরুতর আহত ওসমান (১৮) ও রায়হান (২০) এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি। শহীদ পরিবারগুলোর আর্তনাদ এখনও চলছে। প্রিয় সন্তান, ভাই, বাবাকে হারিয়ে শহীদ পরিবারগুলো কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অর্ধশতাধিক আহত ও ৭ নিহতের বাড়িতে বুকফাটা আর্তনাদ থামেনি আজও। ঘটনার পর পরই মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ র‌্যাব দিয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে ঘর-বাড়ি ছাড়া করেছে জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। বিগত এক বছর মামলার বোঝা নিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া।

শহীদদের পরিচয় :

→মোঃ আব্দুল আজিজ, পিতাঃ আব্দুর রাজ্জাক, চরহাজারীর আলীপুর,

→মতিউর রহমান সজিব, পিতাঃ আব্দুর রহমান, বসুরহাট,

→সাইফুল ইসলাম পিতাঃ মুজিবুর রহমান, রামপুর,

→আব্দুস সাত্তার, আব্দুল খালেক, মুসাপুর,

→সাইফুল ইসলাম, আবুল কাশেম, চর কাঁকড়া,

→মাহমুদুল হক মিশু, মাবুল হক, চর পার্বতী ও

→আসাদুন নূর রাসেল, সফিউল্লাহ, সিরাজপুর।

কোম্পানীগঞ্জে কিলিং মিশনে ছিলো আওয়ামী-যুবলীগ :

কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের সাথে কিলিং মিশনে ছিলো আওয়ামী-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রুমেল, সরকারি মুজিব কলেজের সেক্রেটারি মুন্না, উপজেলা ছাত্রলীগ কর্মী তুহিন, সিরাজপুর ইউনিয়ন সভাপতি মিকন, একই ইউনিয়নের যুবলীগ সেক্রেটারি ফোরকান, একই ইউনিয়নের যুবলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ, এছাড়া চরহাজারীর যুবলীগ নেতা রাসেল মেম্বার প্রত্যক্ষভাবে কিলিং মিশনে অংশ নিয়ে ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর।

৪ জনকে পোস্টমর্টেম ছাড়া দাফন :

পুলিশের গুলিতে নিহত ৭ জনের ৪ জনকে পোস্টমর্টেম ছাড়া দাফন করা হয়েছে। পোস্ট মর্টেম ছাড়া দাফন করা শহীদরা হলেন- মোঃ আব্দুল আজিজ, মতিউর রহমান সজিব, সাইফুল ইসলাম, চর কাঁকড়া ইউনিয়নের, সাইফুল ইসলাম। এদের স্বজনরা দাফন করে ফেলে ওই দিন রাতেই।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আমীর প্রফেসর বেলায়েত হোসেন ও সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন জানান, তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল করার জন্য কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নেন। এবং একই বিষয় স্থানীয় আওয়ামী লীগকে অবহিত করেন। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কেন্ত্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে উপজেলা জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিপুল সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে বেলা ৩.৩০ টায় বসুর হাট পৌরসভার খান সুপার মার্কেট থেকে মিছিল শুরু হয়ে সামনে অগ্রসর হলে পুলিশ বাধা দেয় এবং গুলি ছোড়ে। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের নির্বিচারে গুলীতে ৭জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৭ জন কে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা ও নোয়াখালীতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।

সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন আরো জানান, কোম্পানীগঞ্জে কোথাও শিবির কোন আগুন লাগায়নি। পুলিশের গুলীর মুখে তা সম্ভব ছিলো না। বরং আমরা জেনেছি নোয়াখালীর স্বনামধন্য বিদ্যালয় বসুর হাট মডেল হাই স্কুল (কেজি স্কুল) আওয়ামী লীগ আগুন লাগানোর পর সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে আমাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেয়। তিনি আরো জানান এলাকায় সর্বত্র আতংকজনক পরিস্থিতি এখনও কাটেনি।

কোম্পানীগঞ্জের ইতিহাসে এ রকম পরিস্থিতি আর ঘটেনি। বর্তমানে জামায়াত-শিবির উপজেলায় প্রকাশ্যে কোনো মিছিল মিটিং করতে পারছে না। পুলিশের মিথ্যা মামলার কারণে হাজার-হাজার জামায়াত শিবির নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া।

১৮ দলের বিবৃতি :

এদিকে নোয়াখালী জেলা বিএনপি সভাপতি ও ১৮ দলের নোয়াখালী জেলা আহ্বায়ক আলহাজ্ব মোঃ শাহ জাহান, জামায়াতের জেলা আমীর মাও. আলাউদ্দিন, জামায়াত সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন ফারুক, বিএনপি জেলা সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ আজাদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল হাই সেলিম, সেক্রেটারি নুরুল আফছার সিকদার ও দক্ষিণ জেলা শিবির সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া এ নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষী পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী-যুবলীগ কর্মীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

৭ শহীদের জন্য জামায়াতের কর্মসূচি :

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াত ৭ শহীদের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে ১৪ ডিসেম্বর সকালে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহীদদের কবর জিয়ারত, দোয়া অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, কুরআন খতম এবং শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ। শহীদ পরিবারের গরীব, অসহায়দের খাওয়ানো উপজেলা জামায়াত।

সেনবাগ প্রতিনিধি/এম এ এইচ আর/দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/১৪ ডিসেম্বর ২০১৪।

Post a Comment

Previous Post Next Post