সরকারের অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা এবং দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোটের ঘোষিত ৩৬ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করায় দেশবাসীকে আন্তরিকভাবে মুবারকবাদ জানিয়ে এবং দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও গণঅবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান গতকাল সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের জনগণ ২০ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হরতাল কর্মসূচি সফল করে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে যে, অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে জনগণ তা কখনো মেনে নিবে না এবং জালেম সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কাজেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অন্যায় ও অযৌক্তিক পাঁয়তারা বন্ধ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জালেম সরকার সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বাঁচার অধিকার আদায়ের গণআন্দোলন দমন করার জন্য দেশের আইন, সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধভাবে দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মত ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, গুম ও গণগ্রেফতার অভিযান চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসীরাও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটিয়ে দেশকে সন্ত্রাসের চারণভূমিতে পরিণত করছে। গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে ফেনী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আঃ করিমের ভাতিজা আজিম উদ্দিনকে ৭টি পেট্রোল বোমাসহ পুলিশ আটক করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বাসে আগুন দেয়ার মিথ্যা অভিযোগে তিন জন সাধারণ ছাত্রকে ধরে পুলিশের হাতে দিয়ে পুলিশের সাথে মিলে তাদের বেদমভাবে মারপিট করেছে। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, দেশে বর্তমানে বাসে পেট্রোল বোমা হামলা করে মানুষকে পুড়িয়ে মারা ও অগ্নিদগ্ধ করা এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই জড়িত। সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার সমর্থক সংবাদপত্র ও মিডিয়া ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ গত ২৫ জানুয়ারি খুলনায় প্রদত্ত বক্তব্যে ‘বাংলাদেশে কোন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নেই’ মর্মে যে তথ্য পরিবেশন করেছেন তা মোটেই সত্য নয়। বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট এ কথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে দিনের পর দিন থানায় আটক রাখা হয়। কাউকে কাউকে গুলী করে হত্যা করার পর প্রচার করা হয় ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে বলে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ১৯ জানুয়ারি নড়াইলের নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনার এডভোকেট ইমরুল কায়েসকে গুলী করে হত্যা করা হয়, ২০ জানুয়ারি সোমবার দিবাগত রাতে খিলগাঁওয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদককে গুলী করে হত্যা করা হয়, ২৪ জানুয়ারি রামপুরায় ২ জনকে গুলী করে হত্যা করা হয়। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কেউ গ্রেফতার হলেই তার পরিবার-আত্মীয়-স্বজন ও দেশবাসী গুলী করে হত্যার আতঙ্কে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত থাকেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করার জন্য বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের আহবান আমলে নেয়া হয়নি। র্যাবের ডিজি যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে।
তিনি বলেন, হরতাল চলাকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আছেন সাভার পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর আমীর লুৎফর রহমান। সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
জালেম সরকারের হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গণগ্রেফতার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস উপেক্ষা করে ২০ দলীয় জোটের ঘোষিত গণঅবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে অব্যাহত রেখে গণআন্দোলন তুঙ্গে তুলে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/২৭জানুয়ারি ২০১৫।