বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, ‘কোনো প্রেক্ষাপট ছাড়া যেমন ঐতিহাসিক ঘটনা জন্ম নেয় না, তেমনি প্রয়োজন ছাড়া সংগঠনেরও জন্ম হয় না। ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠা ছিল তৎকালীন সময়ের অনিবার্য দাবি। আর সময়ের অনিবার্য প্রয়োজনেই ছাত্রশিবির জন্ম নিয়েছে।’ তিনি রোববার রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শিবির সভাপতি বলেন, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত হয়েছিল, তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বাকশালের নামে একনায়কতন্ত্র, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের মাধ্যমে দেশকে ধর্মহীন করাসহ নানামুখী ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে দেশকে পরিণত করেছে তলাবিহীন ঝুড়িতে। মেধা, নৈতিকতা হারিয়ে ছাত্ররা গা ভাসিয়ে দেয় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং মাদকের সয়লাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছিল না শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। ছাত্ররাই দেশ পরিচালনার আশা ভরসার স্থল হলেও তাদেরকে লেলিয়ে দেয়া হয় এক ধরণের নষ্ট রাজনীতি ও লেজুড়বৃত্তির পিছনে। ফলে চতুর্দিকেই অশান্তি পরিলক্ষিত হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে দেশ, জাতি ও সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরের অনুপম কর্মসূচি, আল্লাহর পথে সাধারণ ছাত্রসমাজকে উদারভাবে আহ্বান, সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনময় সংগঠন, সংগঠিত ছাত্রদের জ্ঞান-চরিত্র ও মানবীয় গুণাবলি সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করা, ছাত্রদের অধিকার রক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে সহযোগিতা প্রদান আর যাবতীয় শোষণ, নিপীড়ন ও গোলামি থেকে তাদের মুক্তির প্রয়াসের কারণে শিবির আজ দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের ৪০ বছরের পথচলা কখনই সহজ ছিল না। অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ছাত্রশিবির তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। সকল বাধা অতিক্রম করে ছাত্রশিবির আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য মানুষের আশা-আকাঙ্খা, ভালবাসা, প্রত্যাশা, স্বপ্ন আজ শুধু ছাত্রশিবিরকে ঘিরেই। ছাত্রশিবির সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরির এক অনন্য উৎস। মেধাহীন, সন্ত্রাস নির্ভর, লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিপরীতে সৎ, যোগ্য, খোদাভীরু ও ইতিবাচক সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতির প্রবর্তক ছাত্রশিবির। এই পথচলায় আমরা হারিয়েছি অনেক তাজা প্রাণ। তবুও ত্যাগের এই পথ বেয়েই শিবির আরো সামনে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক শাহ মাহফুজুল হক, শাখা সভাপতি জামিল মাহমুদ ও সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম সজিব উপস্থিত ছিলেন।