আমি নিজে তদন্ত করিনি, কমিশনে রিপোর্ট দেইনি, উপরের নির্দেশে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করি ||

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব না দেয়ার দুদকের মামলার বাদী গতকাল আদালতে জেরার মুখে স্বীকার করেছেন তিনি এই মামলার তদন্ত করেননি এবং দুদক কমিশনের বিবেচনার জন্য কোন রিপোর্টও উপস্থাপন করেননি। তার আগে যে কর্মকর্তা ছিলেন তার রেখে যাওয়া ফাইলের ওপর ভিত্তি করে আদিষ্ট হয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।

গতকাল ঢাকার আলীয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩ এএই মামলার সাক্ষ্য প্রদানকারীদের মধ্যে মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক মো: নুর আহমদ এসব কথা বলেন। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান আদালতে বলেন, দুদকের কেউ কোন তদন্ত করে মাহমুদুর রহমানের জ্ঞাত আয় বর্হিভুত কোন সম্পদের সন্ধান পায়নি। উপরের নির্দেশে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। বাদীকে উদ্দেশ্য করে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী বলেন, রিট পিটিশনের জাজমেন্ট উপেক্ষা করে আপানাকে দুদকে নেয়া হয়েছে ,যাতে আপনি সরকারের পারপাস সার্ভ করেন? আপনি নিজে মাহমুদুর রহমানের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে কোন অনুসন্ধান করেননি। কোন নথিও (দুদক) কমিশনে উপস্থাপন করেননি। স্রেফ অনুমান নির্ভর একটি মামলা দায়ের করেছেন? তিনি বলেন, এমননি সাধারণভাবে এ জাতীয় মামলা দায়েরের পর আরেকটি মামলা হয় অনুসন্ধানে পাওয়া অবৈধ সম্পদের বিবরণ দিয়ে। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তাও করতে পারেনি দুদক। এগুলির প্রমাণ হিসেবে দুদকের নথি আদালতে উপস্থাপনের আবেদন করেন মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী। কিন্তু দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর তীব্র বিরোধিতা করেন। আগামী সাক্ষ্য গ্রহনের দিনে আরও শুনানি শেষে এ ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান আদালত। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান গতকাল মামলার বাদীদুদকের উপ-পরিচালক মো: নুর আহমদকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন। গতকাল ১০ টা ২৫ মিনিট থেকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টায় মামলার মোট ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করেন আদালত। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী দুদকের এসব সাক্ষীকে জেরা করেন। এই সাক্ষীদের মধ্যে আরও ছিলেন দুদকের দুই কনস্টেবল মো. মঞ্জুরুল হক ও সিরাজুল হক, ক্যাশিয়ার শাহজালাল ও গুলশান পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান মো: আকবর আলী। আদালতে মাহমুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তাকে আগের দিনই কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ৭২ ঘন্টার হরতালের মধ্যেও যাতে বিচারকাজ চলে সেজন্য এটা করা হয়।

সাক্ষ্যগ্রহনের এক পর্যায়ে তিনি দাড়িয়ে আদলতকে জানান, তার মামলা করার কারণে তার একজন আইনজীবী পারভেজ হোসেনকে পুলিশ আটক করেছে। এভাবে ন্যায়বিচার হতে পারেনা। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। শুনানিতে বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, মাহমুদুর রহমানের জ্ঞাত আয়ের বর্হিভুত সম্পদের তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াই এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দির ওপর জেরাকালে মাহমুদুর রহমানকে দুদকের পাঠানো নোটিশের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তার আইনজীবীরা। কারণ ওই নোটিশের রিসিভ কপিতে নিয়ম অনুযায়ী প্রেরক ও প্রাপকের কোন ঠিকানা ছিলনা। আদালতে শুনানিতে মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান,অ্যাডভোকেট সালেহউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন নিয়ন। শুনানিতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। গতকাল সাক্ষ্যগ্রহণকালে আদালতে আরও উপস্থিত ছিলেন,পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত অহবায়ক সিনিয়র সাংবাদিক রুহুল আমীন গাজী, দৈনিক আমার দেশ’র নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, সিটি এডিটর এম আব্দুল্লাহ, ইঞ্জনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, সিনিয়র রিপোর্টার বাছির জামাল, স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদা ডলিসহ আমার দেশ পরিবারের সদস্যরা । সাক্ষী ও জেরার বিস্তারিত আদালত বসার পর পরই মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক নুর আহমদকে তার অসমাপ্ত জেরা শুরু করেন। বাদীকে আসামি পক্ষের আইনজীবীর প্রশ্ন : কবে আপনি মামলার দায়িত্ব পান ? উত্তর: ৬-৬-২০১০ সালে। প্রশ্ন: কবে মামলাটি করেন? উত্তর: ১৩-৬-২০১০তারিখে। প্রশ্ন: ৬-৬-১০ ইং মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর আপনার প্রতি কী নির্দেশ ছিল, মামলার অনুসন্ধান অগ্রগামী করার? উত্তর: এ রকম কিছু ছিল না। প্রশ্ন:১২-৬-১০ইং পর্যন্ত অনুসন্ধানকল্পে কি কি করলেন? উত্তর: অনুসন্ধান করিনি। প্রশ্ন: অনুসন্ধান কপি কবে কমিশনে উপস্থাপন করেন? উত্তর: আমি উপস্থাপন করিনি। প্রশ্ন: তা হলে মামলা দায়ের করলেন কিভাবে? কোন নথিতে এ নির্দেশ এলো? উত্তর: নথি একটাই। আমার আগে যিনি ছিলেন তিনি যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, আমি সেখান থেকে শুরু করি। প্রশ্ন: নথি আপনার কাছে ছিল, কমিশনে আপনি জমাও দেননি। নথির কোন পর্যালোচনা হলো না, নির্দেশ এলো ,আপনি মামলা করলেন? অনুসন্ধান নথি কি কখনও প্লেস করা হয়েছিল কমিশনে। উত্তর: আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এ পর্যায়ে আদালত জানতে চান নোটিশ জারির কত দিনের মধ্যে হিসাব দেয়ার নির্দশ ছিল? উত্তর: সাতদিন বাদীকে আইনজীবীর প্রশ্ন: কবে নোটিশ জারি করলেন? উত্তর:১৯-৪-১০ তারিখে। প্রশ্ন:কবে ঐ নোটিশের মেয়াদ শেষ হয় উত্তর: ২৫ তারিখে। প্রশ্ন:এই নোটিশের কার্যকারিতা হাইকোর্ট ভাগ স্থগিত করেছিল। সেটা আপনি জানেন। উত্তর: হ্যা প্রশ্ন: এজহার কি আপনি ড্রাফট করেছিলেন? উত্তর: হ্যাঁ প্রশ্ন: মিটিং হয়েছিল কি? এ পর্যায়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আপত্তি তোলেন । তিনি বলেন মিটিং হয়েছিল কিনা, এগুলি দুদকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী বলেন এতো দ্রত সবকিছু কিভাবে হলো? এ পর্ায়ে বিচারক মন্তব্য করেন এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। কাজ দ্রুত হয়। বাদীকে বিবাদীর আইনজীবীর প্রশ্ন: ১৩-৬-১০ তারিখে কখন এজহার দায়ের করলেন? উত্তর: ১৮টা ৫৫ মিনিটে। প্রশ্ন: অফিস টাইমের পর। এ পর্যায়ে বিচারক বলেন থানার আবার আফিস টাইম আছে নাকি? বাদী পক্ষের আইনজীবী বলেন: দুদকের অফিস টাইম আছে। প্রশ্ন: আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট কবে করলেন? উত্তর: এটা আইও হিসাবে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তখন বলব। প্রশ্ন: জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ মাহমুদুর রহমান সাহেবের আছে কিনা, এজহার দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ের ইতি হয়? উত্তর: নথি না দেখে বলতে পারছি না। প্রশ্ন: মাহমুদুর রহমানের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন যায়গা থেকে যে চিঠিপত্র এসেছিল সেগুলি আপনি পর্যালোচনা করে দেখেছিলেন কিনা? কোন কোন যায়গা থেকে নির্দেশ ছিল? উত্তর: ইহা জানা নেই, নথি না দেখে বলা সম্ভব না। প্রশ্ন: মাহমুদুর রহমানের জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ ছিল মর্মে আপনি এজহারের দায়েরের আগে সন্তুষ্ট ছিলেন কি? উনার এ রকম সম্পদ আছে, সে ব্যাপারে কি আপনি সেটিসফাইড ছিলেন? সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য আপনার কাছে ছিল কি? উত্তর:(এই তিনটি প্রশ্নের মাঝখানে বাদী দীর্ঘ সময় কিছু বলেননি, পরে ভেবেচিন্তে বলেন) নথিতে বিশ্বাস করার কারণ ছিল বলে নোটিশ জারি হয়েছে। প্রশ্ন: এ জাতীয় মামলা দায়েরের পর সাধারণ জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরেকটি মামলা করা হয়, মাহমুদুর রহমানের এ জাতীয় কোন সম্পদের সন্ধান আপনারা পাননি বলে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোন মামলা আপনারা করতে পারেনি। যেহেতু উপরের নির্দেশে আপনারা মামলা করেছেন সে জন্য এ নিয়ে আর কোন অনুসন্ধানও করেননি? উত্তর: ইহা সত্য নয়। প্রশ্ন: রিট পিটিশনের জাজমেন্ট উপেক্ষা করে আপানাকে দুদকে নেয়া হয়েছে ,যাতে আপনি সরকারের পারপাস সার্ভ করেন? আপনি নিজে মাহমুদুর রহমানের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে কোন অনুসন্ধান করেননি। কোন নথিও (দুদক) কমিশনে উপস্থাপন করেননি। স্রেফ অনুমান নির্ভর একটি মামলা দায়ের করেছেন? উত্তর: ইহা সত্য নহে। প্রশ্ন: এ মামলা দায়ের আগে নোটিশের কোন কার্যকারিতা ছিল না? উত্তর: ইহা সত্য নহে। প্রশ্ন: দুদক আইনের ২৬ ধারার ভুল ব্যাখ্যা করে মামলা দায়ের করেছেন? উত্তর: ইহা সঠিক নয়। এ পর্যায়ে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান দুদকের নথি আদালতে তলব করার জন্য একটি পিটিশন দায়ের করেন। তিনি বলেন, বাদী কিংবা দুদকের পক্ষ থেকে আইনজীবী ও অন্য সাক্ষীরা যেসব কথা বলছেন সেগুলি সঠিক কিনা, সেটা আদালত যাতে যাছাই করে দেখতে পারেন, সেজন্য নথি আদালতের সামনে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাদী পক্ষের আইন জীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, নথি দুদকের আভ্যন্তরীণ নিজস্ব বিষয় ২০০৭ সালের বিধি অনুযায়ী এটা দুদকের আভ্যন্তরীণ ডকুমেন্ট। এটা আসামিপক্ষের আইনজীবীর দেখার কোন এখতিয়ার নেই। আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, আমি দেখব না। মাননীয় আদালত দেখবেন। আপনারা কিসের ওপর ভিত্তি করে মামলা দায়ের করলেন এবং সাক্ষীরা যেসব কথা বলছেন সেগুলি নথি অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা, সেটা আদালতের সামনে থাকা জরুরি। কিন্তু দুদকের আইনজীবী এ ব্যাপারে জোরালো আপত্তি জানান। বিচারক আবু আহমদ জমাদার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহনের দিনে আবেদনটির অর্থাৎ দুদকের নথি আদালতে আসবে কিনা, তার বিষয়ে আরও শুনানি করে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান।এ পর্যায়ে ২০ মিনিটের বিরতি দিয়ে পুনরায় আদালত বসে। এবার দুদকের পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষীকনস্টেবল মো: মঞ্জুরুল হক সাক্ষ্য প্রদান করেন। মো: মঞ্জুরুল জানান, তিনি ও সিরাজুল হক নামে আরও একজন কনস্টেবল মাহমুদুর রহমানের সম্পদের হিসাব দাখিলের নোটিশ নিয়ে তার গুলমানের বাসায় গিয়েছিলেন সেখানে রিসিপশন থেকে বলা হয় তিনি বাসায় নেই। কারওয়ান বাজারে আমার দেশ অফিসে আছেন। পরে তারার দু’জন কারওয়ান বাজারে আমার দেশ অফিসে আসেন। সেখানে মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষ্য করে নোটিশ দিতে চাইলে মাহমুদুর রহমান সেটা স্বাক্ষর দিয়ে গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তারা ফিরে আসেন। ২ নম্বর সাক্ষীকে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীর প্রশ্ন: অফিস আদেশ সিসিতে আপনাদের কোন ঠিকানায় নোটিশ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল? উত্তর : মাহমুদুর রহমানের বাড়ির ঠিকানায়। রোড নম্বর -৭৭, বাসা ম্বর-১ গুরশান-২। প্রশ্ন: মাহমুদুর রহমানের বাসায় কি আপনারা গিয়েছিলেন? উত্তর: না রিসিপশনে বলা হয় তিনি বাসায় নেই। প্রশ্ন: বাসায় উনার পরিবার ছিলেন সেখানওতো নোটিশ দিয়ে আসতে পারতেন? উত্তর: আমাদের যেতে দেয়া হয়নি। প্রশ্ন: মাহমুদুর রহানের বাসার বিল্ডিংটি কত তলা? উত্তর:৪/৫ তলা হবে? প্রশ্ন:উনার বাসা কত তলায়? উত্তর: বলেছে দোতলায় (আসলে মাহমুদুর রহমান দোতলায় থাকেতেন না)। প্রশ্ন:অফিসে চিঠি পৌছানোর নির্দেশ ছিল কি? উত্তর: না প্রশ্ন: তাহলে গেলেন কেন? উত্তর: চিঠি পৌছে দেয়ার জন্য। প্রশ্ন: সিসি( চিঠি) কখন রিসিভ করলেন ও কখন ফেরত দিলেন? উত্তর: ১১-১৫ মিনিটে নেই এবং ১৬-৪৫ মিনিটে ফেরত দেই। প্রশ্ন: আপনি বলেছেন ১৩-৪-১০ সিসি (চিঠি) ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু যে ডকুমেন্টস দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৫ তারিখে ফেরত দিয়েছেন। সিসিতে কেবল ঠিকানা লেখা আছে কার ওপর জারি করতে হবে সেটা নেই। আপনি কখন গুলশান গিয়েছিলেন, কে আপনাকে বলল , মাহমুদুর রহমান বাসায় নেই, তার নাম ঠিকনা এগুলোর কিছুই আপনি ফেরত রিপোর্টে উল্লেখ করেননি। আসলে এগুলি সব বানানো। কর্তৃপক্ষের কথা মত আপনি তৈরি করেছেন। উত্তর: সত্য নয়। প্রশ্ন: আপনি অফিসে বসে এটা করেছেন? উত্তর: সত্য নয়। তৃতীয় সাক্ষী ছিলেন কনস্টেবল সিরাজউদ্দিন। তিনি বলেন দ্বিতীয় সাক্ষীর সঙ্গে তিনি ছিলেন। দ্বিতীয় সাক্ষীর ও তার নিজের বক্তব্য একই। সেজন্য তাকে মাহমুদুর রহানের আইনজীবী আর কোন জেরা করেননি। চতুর্থ সাক্ষী ছিলেন মো: শাহজালাল। তিনি দুদক অফিসের ক্যাশিয়ার। তিনি আদালতকে জানান, যারা নোটিশ নিয়ে যায় তাদের ভ্রমণ বিল তিনি গ্রহণ ও যাচাই বাছাই করেন। বিবাদীপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্ন: যে যায়গায় যাওয়ার সিসি (অফিস আদেশ) তাকে, সেকানের বিলইতো আপনি পরিশোধ করেন। উত্তর: হ্যাঁ। প্রশ্ন: কেউ যদি সিসির বাইরে অন্য যায়গায় যায়, তা হলে সে বিল কি আপনি পরিশোধের সুপারিশ করেন? উত্তর: না প্রশ্ন: তাহলে মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে গুলশানে যাওয়ার সিসি ছিল কিন্তু তারা কারওয়ান বাজারও গেলো, তাদের বিল পরিশোধের সুপারিশ করলেন কেন? উত্তর: লা জওয়াব(!) বিবাদীপক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও দুদকের চাপাচাপিতে একের পর সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহ অব্যাহত রাখে আদালত। এ পর্যায়ে মাহমুদুর রহমান আদালতে দাড়িয়ে কিছু বলতে চাইলে আদালত আপত্তি জানিয়ে বলেন, আপনি এ পর্যায়ে কিছু বলতে পারবেন না। তারপরও মাহমুদুর রহমান আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন,আমার একজন আইনজীবীকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে, আপনি সেটাও শুনতে রাজি হচ্ছেন না। এ বলে তিনি বসে পড়েন। মাহমুদুর রহমানকে এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায় আজকেই সব শেষ করে আজকেই রায় দিয়ে দেন। পঞ্চম সাক্ষী হিসাবে আদালতে সাক্ষ্য দেন গুলশান পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান মো: আকবর আলী। তিনি আদালতে জানান ১৯-০৪-২০১০ তারিখে তিনি দুদকের একটি চিঠি নিয়ে গুলশান-২ এর ৭৭ নম্বর সড়কের এক নম্বর রোডে মাহমুদুর রহমানের বাড়িতে যান। সেখানে বাড়ির রিসিপশনে তাকে বলা হয় সব চিঠি সেখানেই রাখা হয়। জনৈক আলম মাহমুদুর রহমানের চিঠিটি গ্রহণ করেন। তিনি আদালতে রেজিস্টার্ড এডি চিঠির রিসিট জমা দেন। এই রিসিটকে কেন্দ্র করে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তাকে নানা প্রশ্ন করেন। সেখানে চিঠির প্রেরক হিসাবে জনৈক খায়রুল আমিনের নাম রয়েছে। প্রাপক মাহমুদুর রহমান। কিন্তু কোন ঠিকানা নেই।এমনকি কোন পোস্ট অফিসের সীল ছাপ্পড়, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর স্বাক্ষর নেই। বিলিকারী পোস্টম্যানের কোন স্বাক্ষর নেই। গ্রহণকারীর নাম হিসাবে আলম লিখা থাকলেও তার ঠিকানা কিংবা অন্য কিছুই বিস্তারিত নেই। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী এগুলি জাল ও বসে বসে বানানো বলে দাবি করেন।আলম কার পক্ষে চিঠি রিসিভ করল সেটাও উল্লেখ নেই, এমনি পক্ষে রিসিভের জন্য ঠিক মার্ক দেয়ার যে সিস্টেম আছে সেটাও নেই। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী এসব বিষয় আদালতের নজরে আনেন এবং পোস্টম্যানের কাছে এগুলির ব্যাপারে জানতে চান। এগুলি নেই বলে তিনিও স্বীকার করেন। এ অবস্থায় মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী বলেন, এটা কোন বৈধ ডকুমেন্ট নয়। সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আদালত আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহনের এবং দুদকের নথি আদালতে নিয়ে আসার জন্য মাহমুদুর রহমানের অআইনজীবীর আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তির দিন ধার্য করেন।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post