পুলিশ বাহিনীর প্রতি বেগম জিয়ার খোলা চিঠি: ||

কতিপয় দলবাজ, দুর্নীতিপরায়ন ও সুবিধাভোগী পুলিশ কর্মকর্তার অগনতান্ত্রিক মারমুখি আচরণ ও গুম-খুনের সাথে জড়িত হওয়ার কারণে দেশে-বিদেশে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা ও গ্রহনযোগ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এতে করে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহনের সুযোগ বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

আপনারা হয়তো বলবেন- আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালনে বাধ্য। কিন্তু পুলিশ আইন PRB (Police Regulation of Bangladesh) প্রবিধান ১১৭, ১১৮, ২০৮ এবং পুলিশ আইনের ২৩ ধারা অনুযায়ী আপনারা কেবল বৈধ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ পালনে বাধ্য, অবৈধ কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ নয়। এই সরকার সম্পূর্ন অবৈধ, সুতরাং এই সরকারের সকল আদেশ অবৈধ, আপনারা এই অবৈধ সরকারের আদেশ পালন করতে বাধ্য নন।

৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা ভোটে আর অন্যরা মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোটে ভূয়া এমপি। এই বিনা ভোটের ভূয়া এমপিদের দ্বারা গঠিত সরকার দেশে-বিদেশে বৈধতা পায়নি। এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠেছে। দেশের সর্বত্র বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের শান্তিপূর্ন ও গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ মিছিলে ঐ কতিপয় কর্মকর্তাদের নির্দেশে আপনারা মুহুর্মুহু গুলি করে শান্তিপূর্ন মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছেন ও গ্রেফতার করছেন। আপনাদের বন্দুকের জোরে এই অবৈধ সরকার দেশ শাসন করছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, একনায়ক স্বৈরাচারী সরকার বেশীদিন টিকবে না, তাদের জন্য করুন পরিনতি অপেক্ষা করছে।

পুলিশ ভাইয়েরা,
আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হলেও এদেশেরই সন্তান। আপনারা কারো ভাই, কারো বোন, কারো বাবা বা স্বামী। আপনাদের ব্রত 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন', কিন্তু আপনারা এখন কী করছেন? আপনারা অবৈধ সরকারের সাথে দুষ্টের পক্ষে থাকছেন, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের দমন করছেন।

আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে কাজ করবেন। জনগণ বিক্ষুব্ধ হলে কেউ আপনাদের পরিবারের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। দিনাজপুরে ইয়াসমিন হত্যার পরবর্তী ঘটনা তার প্রমান। জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে জনরোষ থেকে সরকার আপনাদের বাঁচাতে পারবে না। যখন জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে, তখন পালানোর পথ পাবেন না। কয়জনকে মারবেন? দেশের ১৬ কোটি মানুষকে তো আর মেরে ফেলতে পারবেন না। তাছাড়া যখন আপনারা এই মারার কাজ করবেন তখন আপনাদের নিজেদের পরিবারও থাকবে অরক্ষিত, আপনাদের হাতে নিহতদের ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তু হয়ে। কতিপয় সুবিধাভোগী কর্মকর্তার হাতিয়ার হয়ে নিজের ও পরিবারের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না।

আজ পর্যন্ত যা করেছেন, তা থেকে সরে আসুন। তাহলে জনগণ মাফ করে দেবে।

● আজ থেকে সামনের দিনগুলোতে যা করবেন তার চুলচেরা হিসাব নেওয়া হবে। আপনাদের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কর্মকাণ্ড আজ থেকে মনিটরিং করা হবে। মনে রাখবেন, দেড় লক্ষ পুলিশের সবাই আওয়ামী পুলিশ লীগের সদস্য নয়। সব সংবাদ যথাসময়ে আমাদের কাছে পৌছে যাচ্ছে।

● যে সকল অফিসার অতি উৎসাহী হয়ে এই অবৈধ সরকারকে খুশি করার জন্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন, তাদের সাবধান করে দিয়ে বলতে চাই- সকল অত্যাচার-অবিচার, মিথ্যা মামলার দায়ভার ঐ অফিসারকে নিতে হবে। কেউ বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না।

● আপনারা কে, কোথায়, কখন, কবে, কার আদেশে কী করেছেন তার সব তথ্য প্রমাণ এমনকি ভিডিও চিত্র পর্যন্ত আমাদের কাছে পৌছে যাচ্ছে। আপনাদের অবৈধ কৃতকর্ম আপনাদের সামনে প্রদর্শন করলে বিপদে পড়ে যাবেন।

পরিশেষে সকল পুলিশ সদস্যের প্রতি আহ্বান, পুলিশ বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন' এই নীতিতে কাজ করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করুন।

আল্লাহ সকলের সহায় হোক।

ইতি,
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপার্সন, ২০ দলীয় জোট নেত্রী, ৩ বারের সাবেক ও বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post