বরিশালে এমপি জেবুন্নেসার গুলিতে ভাই আহত ||

বরিশাল সদর আসনের এমপি আওয়ামী লীগ নেত্রী জেবুন্নেসা আফরোজের বাসভবনে গুলির ঘটনায় তার বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান কুট্টির (৪৫) আহত হওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। সোমবার দুপুরের এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চললেও পরে তা জানাজানি হয়ে যায়। এমপি জেবুন্নেসা অবশ্য তার বাসায় এ ধরনের কোনো কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেছেন। এদিকে কুট্টি বলছেন যে, তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা এবং পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর তার লাইসেন্সকৃত একটি শটগান ও পিস্তল কোতোয়ালি মডেল থানায় জমা দেন স্ত্রী বর্তমান এমপি জেবুন্নেসা আফরোজ। পরবর্তী সময় ওই আগ্নেয়াস্ত্র দুটি নিজের নামে লাইসেন্স করিয়ে নেয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। এর মধ্যে সম্প্রতি শটগানটি’র লাইসেন্স তার নামে পরিবর্তিত হয়ে আসে। নিজ নামের নবায়ন ফি-ও জমা দেন তিনি। সোমবার জেবুন্নেসার ব্যক্তিগত সহকারী থানা থেকে শটগানটি এমপির বাসায় নিয়ে যান। অবশ্য ব্যক্তিগত সহকারী কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি সেখানকার মালখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর তানজিল। এমপি মহোদয় নিজে উপস্থিত হয়ে ৫১ রাউন্ড গুলিসহ শটগানটি নিয়ে গেছেন বলে জানান তিনি। তার নামে লাইসেন্স পরিবর্তিত হয়ে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই আগ্নেয়াস্ত্র হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান এসআই তানজিল।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঘটনার সময় উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নূরিয়া স্কুল-সংলগ্ন বাসায় নেয়ার পর শটগানটি নেড়েচেড়ে দেখছিলেন এমপি জেবুন্নেসা। সেটি যে গুলি ভর্তি ছিল তা তিনি জানতেন না। একপর্যায়ে অসাবধানতাবশত শটগান থেকে গুলি বেরিয়ে যায়। এসময় সেখানে থাকা তার আপন মামাতো ভাই মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান কুট্টি গুলিবিদ্ধ হন। শর্টগানের গুলির স্পি­ন্টার লাগে তার মুখমণ্ডল, ডান কাঁধ, হাত, পিঠ এবং কানে। আহত অবস্থায় তাকে নেয়া হয় বাংলাবাজার এলাকায় থাকা বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পলি ক্লিনিকে। সেখানে তার শরীর থেকে স্পি­ন্টার বের করেন ডা. আনোয়ার হোসাইন।

অবশ্য ডা. আনোয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই ক্লিনিকের এক কর্মচারী বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আনার পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কুট্টির শরীর থেকে ৭/৮টি স্পি­ন্টার বের করা হয়। তার শরীরে এখনও কয়েকটি স্পি­ন্টার রয়ে গেছে। তাছাড়া এখানে তার এক্স-রেও করা হয়। রাত ৯টার দিকে হাসপাতাল থেকে গোপনে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। হিরন পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ায় বিষয়টি চেপে গেছেন ডা. আনোয়ার।’

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ঘটনার আকস্মিকতায় বাড়িতে মূর্ছা যান এমপি জেবুন্নেসা। গুলি বেরুনোর ধাক্কায় তার কপালেও আঘাত লাগে। তবে কোনো হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে না গিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নেন তিনি। পরে যোগ দেন দিনের অন্যান্য কর্মসূচিতে। দিনের আলোয় গুলিবিদ্ধ হওয়ার এই ঘটনা ঘটলেও লোক জানাজানির ভয়ে বাসা থেকে তখন বের করা হয়নি কুট্টিকে। বাড়িতে রেখেই চলে চিকিৎসার আয়োজন। পরে সামাল দিতে না পেরে রাতে নিয়ে যাওয়া হয় ডা. আনোয়ারের পলি ক্লিনিকে।

মঙ্গলবার দুপুরে কুট্টির গোরস্থান রোডের বাসায় গিয়ে আহত এবং শয্যাশায়ী অবস্থায় দেখা যায় তাকে। মুখমণ্ডল, পিঠ, ডান কাঁধ, হাত ও কানে দেখা গেছে ব্যান্ডেজ। আহত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন তিনি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে জানান সবাইকে।

ঘটনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে এমপি জেবুন্নেসা বলেন, ‘পুরো বিষয়টিই গুজব। কে বা কারা এই গুজব রটিয়েছে। আমার বাসায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার ভাইও গুলিবিদ্ধ হননি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব গুজব রটাচ্ছে। আহত হলে আমি সোমবার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিলাম কি করে? এই অপপ্রচারের কোনো ভিত্তি নেই।’

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনার খবর শুনে আমি এমপি মহোদয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তেমন কোনো কিছুর আলামত পাইনি।’

উৎস : যুগান্তর।

Post a Comment

Previous Post Next Post