বেশি ঘাঁটাবেন না, হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব : সোহেল  তাজ ||

বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে আখেরে সরকারেরই বেশি ক্ষতি হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেছেন পদত্যাগের জালে আটকে পড়া সাংসদ তানজিম আহমেদ- সোহেল তাজ। তিনি বলেছেন, কারও মুখোশ উন্মোচন করতে চাই না। তবে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করা হলে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব। সরকারের খাতায় দফতরবিহীন প্রতিমন্ত্রী হয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সোহেল তাজ সমকালকে বলেন, যেখানে নিজের বিচারবুদ্ধি এবং যুক্তি দিয়ে কিছুই করা যায় না; সেখানে আর যা-ই হোক রাজনীতি করা যায় না। তাতে জনগণের সঙ্গে কেবল প্রতারণাই করা হয়। প্রতারণা করা হয় নিজের সঙ্গেও। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিফোনে সমকালের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তাজ।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক_ সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে উত্থাপিত এ বক্তব্য চ্যালেঞ্জ করে সোহেল তাজ বলেন, কেউ এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদদের কমপক্ষে ১০-১২ জন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ব্রিটেনের নাগরিক।

তাজ বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেকের মুখোশের আড়ালের চেহারাটা দেখে ফেলেছেন তিনি। তাদের সে কাজকর্ম সমর্থন করতে পারেননি বলেই চার মাসের মাথায় মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন তিনি। এর ফলে তার অনেক শত্রুও জন্ম হয়েছে। শত্রুতা আর বাড়াতে চাননি বলেই তিনি সরকার থেকে  সরে যান। তারপরও তাকে নিয়ে খেলা বন্ধ হয়নি।

সোহেল তাজের অভিযোগ, তার শত্রুরাই তার ১৭ বছরের ভাগ্নেকে পুলিশ দিয়ে পিটিয়েছে। তার ভাগ্নের একমাত্র অপরাধ ছিল সোহেল তাজ তার মামা আর তাজউদ্দীন আহমদ তার নানা। প্রতিমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করার পর গত বছর জুনে দেশে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চাইলেও পাননি বলে অনুযোগ করেন সোহেল তাজ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেলে হয়তো তাকে অনেক কিছু জানাতে পারতেন। এসব দুঃখ-অভিমান আর পেছনের কিছু 'খেলা' তাকে সংসদ সদস্যের পদও ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।

সোহেল তাজ সমকালকে বলেন, আমি জানি, আমি যত বেশি কথা বলব বিরোধী দল তত বেশি খুশি হবে। তারা চাইবে আমি মুখ খুলি। বেশি বেশি কথা বলি। সরকার এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু আমি বলতে চাই না। দয়া করে আমাকে কথা বলতে বাধ্য করবেন না।

যতই মুখ না খুলুন, এই পদত্যাগে কি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগই আরও বিপদে পড়ছে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে আমি খুবই স্পর্শকাতর কারণে পদত্যাগ করেছি। গত বৃহস্পতিবারও সরকারের এক মন্ত্রী একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বলেন, সোহেল তাজের তো পদত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। সবাই জানে সে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় এমনিতেই তার সদস্যপদ চলে যেতে পারে। সমকালের কাছে এমন বক্তব্য শুনে সোহেল তাজ বলেন, যে মন্ত্রী এমন কথা বলেছেন, তার সঙ্গীয় কয়েকজন মন্ত্রী ভিন্ন দেশের নাগরিক। তাদের অনেকেই এখনও সেসব দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। সোহেল তাজের জানা মতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্তত ১০ থেকে ১২ জন রয়েছেন, যারা দ্বৈত নাগরিক। সোহেল তাজ বলেন, এতদিন তো কেউ বলেনি সোহেল তাজ দ্বৈত নাগরিক। যখন পদত্যাগ করেছি তখন এসব অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আমি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক প্রমাণ করতে পারলে যে শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেব। ১৫ বছর বয়স থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছি। দেশকে ভালোবাসি বলেই অন্য দেশের নাগরিক হইনি।

গত বুধবার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানানোর সময় স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটও বলেন, সোহেল তাজ যদি দ্বৈত নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে তার সদস্যপদ এমনিতেই চলে যাবে। এর জন্য পদত্যাগের প্রয়োজন হবে না।

এ প্রসঙ্গে সোহেল তাজ বলেন, স্পিকারকে বলেছি এখানে জোরাজুরির কোনো বিষয় নেই। নিজের ইচ্ছাতেই সংসদ সদস্যের পদ ছাড়ছি। তারপরও তিনি কেন সন্তুষ্ট হচ্ছেন না, তা জানি না।
এখন পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, দেশে এসে পদত্যাগ করবেন নাকি যুক্তরাষ্ট্রেই বাংলাদেশ দূতাবাসে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন? এমনসব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি সোহেল তাজ। তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি যেভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, তাতে তার মনে নানা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। পদত্যাগ করলে সেটি প্রত্যাখ্যানের সুযোগ স্পিকারকে সংবিধান দেয়নি। কেন তিনি এটি করবেন!
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনই তিনি দেশে আসতে চান না। লাল পাসপোর্টে আর ভ্রমণ নয়। যত দ্রুত সম্ভব সবুজ পাসপোর্ট পেতে চেষ্টা করবেন তিনি।

তিনি বলেন, অহেতুক আমার পেছনে কেন লাগছে বুঝতে পারছি না। তাহলে কি আমাকে নিয়ে যা বলা হচ্ছে আর আমার পরিবারের সদস্যদের প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে সেগুলো একই সূত্রে গাঁথা? প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে বেতনভাতা বন্ধ করে দেওয়া; এরপর আবারও কারও নির্দেশে একসঙ্গে পুরনো দু'বছরের বেতনভাতা তার অ্যাকাউন্টে জমা করে 'সাংবাদিকদের খবর' দেওয়া_ এসব বিষয় সন্দেহের চোখেই দেখছেন তিনি।

সোহেল তাজ বলেন, তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে এখনও নিয়মিত কথা হয় তার। তারা জানিয়েছেন, তার নির্বাচনী এলাকা গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উন্নয়ন কাজ বন্ধ। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, তার কারণে তার এলাকায় উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি আবারও বলেন, রাজনীতিতে ফেরার কোনো ইচ্ছাই তার নেই। সাত সমুদ্র তেরো নদী দূরে থেকেই জানতে চাই দেশের মানুষ ভালো আছে। দেশে অনেক সমস্যা আছে। অহেতুক তার পেছনে সরকারের সময় নষ্ট না করে বরং সেগুলো সমাধানের জন্য কাজ করাই যুক্তিযুক্ত।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post