প্রিয় দেশবাসী,
আস্সালামু আলাইকুম,
ইতোমধ্যেই আপনারা অবগত হয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ অন্যায়ভাবে আমার স্বামী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জননেতা কামারুজ্জামানকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির আদেশ প্রদান করেছেন।
ট্রাইব্যুনালের এই রায়ের মাধ্যমে অবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পক্ষান্তরে ন্যায়বিচার লংঘিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমার স্বামীর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর, আর উনিশ বছরের একজন তরুণকে বানানো হয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের আলবদর কমান্ডার যা সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। প্রাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড তো দূরে থাক কোনরূপ সাজা দেয়ারই কোন সুযোগ নেই বলে আমরা মনে করি। মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর দাড়িঁয়ে আছে।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত স্বাক্ষীদেরকে প্রসিকিউশন বিভিন্ন প্রকার সুবিধা প্রদান করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসে, যাদের সবাই আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক এবং এলাকায় অসৎ ও মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত স্বাক্ষীদের কারো বিরুদ্ধে নারী অপহরণ মামলা, বিদ্যুত চুরির মামলাসহ বিভিন্ন ধরণের মামলা রয়েছে। একজন সাক্ষী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিলেও তথ্য প্রমাণে “ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা” হিসেবে প্রমাণিত হন। কেউ এলাকায় টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মামলায় সাক্ষী হয়ে থাকেন এ সংক্রান্ত কাগজ পত্রাদি আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। কারো সন্তানকে সরকারী চাকরী দিয়ে এ মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, এ সব অসৎ, বিতর্কিত, অবিশ্বাসযোগ্য এবং ধূর্ত প্রকৃতির লোকদের সাক্ষ্যের আইনগত কোন মূল্য নেই। এই মামলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সকলের অবগতির জন্য তুলে ধরছি।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত ১নং চার্জে বদিউজ্জামানের হত্যা প্রমাণে প্রসিকিউশনের পক্ষে এখানে দুজন শ্রুত সাক্ষী (হিয়ারসে) সাক্ষ্য প্রদান করে (সাক্ষী ৪, ৬)। তারা কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষী নয় এবং নিহত বদিউজ্জামানের ভাই হাসানুজ্জামান ট্রাইব্যুনালের সামনে তার স্বাক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের অসত্য বক্তব্য উপস্থাপন করে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর তার ভাইয়ের হত্যার জন্য কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছিলেন কিন্তু তিনি ট্রাইব্যুনালে এরকম কোন কাগজ দেখাতে পারেননি এবং আসামী পক্ষেও জেরায় তিনি বলেন এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তিনি পরেও দেখাতে পারবেন না।
বদিউজ্জামান তার ভাই হাসানুজ্জামানের শ্বশুর আহমদ মেম্বার যিনি শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন এবং স্বাধীনতার পরে দালাল আইনে জেলও খাটেন তার বাড়ী থেকে পাক বাহিনীর হাতে ধৃত হন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায় এই আহমদ মেম্বারই তার জামাই হাসানুজ্জামান দ্বিতীয় বিয়ে করায় প্রতিশোধ হিসেবে তার ভাই বদিউজ্জামানকে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেন।
একই ঘটনার ৪ নং সাক্ষী ফকির আবদুল মান্নানের বক্তব্য, ৬ নং সাক্ষী হাসানুজ্জামানের বক্তব্যের বিপরীত। ফকির আবদুল মান্নান আদালতে বলেন, অপহরণের সময় সাইদুর রহামান নয় মকবুল হোসেন কামারুজ্জামান সাহেবকে চিনতে পারেন। অন্যদিকে হাসানুজ্জামান বলেন সাইদুর রহমানই কামারুজ্জামানকে চিনতে পারেন মকবুল হোসেন নয়। প্রসিকিউশনের শিখানো মতে বলতে গিয়ে তারা নাম ওলট পালট করে ফেলেছেন।
প্রিন্সিপ্যাল হান্নানকে (চার্জ-২) নির্যাতনের অভিযোগে আমার স্বামী জনাব কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। যাকে অত্যাচারের অভিযোগে কামারুজ্জামান সাহেবের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে সেই প্রিন্সিপ্যাল আবদুল হান্নান এখনো সুস্থতার সাথে শেরপুরে বসবাস করছেন। প্রসিকিউশন তাকে স্বাক্ষী করলেও ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপন হয়নি। প্রিন্সিপ্যাল হান্নান আদালতে সত্য প্রকাশ করে দিবেন সে ভয়ে প্রসিকিউশন তাকে ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপন করেননি।
৩ নং চার্জে বলা হয় কামারুজ্জামান সাহেবের পরামর্শে সোহাগপুরের গণহত্যা সংঘঠিত হয়। কিন্তু কোন স্বাক্ষীই তাদের স্বাক্ষ্যে বলেন নাই যে, কামারুজ্জামান উক্ত ঘটনা সংঘঠনে কি বা কোন ধরণের পরামর্শ প্রদান করেছেন। তাছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে প্রদেয় জবান বন্দীতে কোন স্বাক্ষীই বলেননি যে, সোহাগপুরের গণহত্যার সময় তারা সেখানে কামারুজ্জামানকে দেখেছেন বা সেখানে সংঘঠিত হত্যা, ধর্ষণের সাথে কামারুজ্জমান সাহেবের কোন ধরণের সম্পৃক্ততা ছিল। এই চার্জ প্রমাণে সাক্ষী হিসেবে আসা তিনজন মহিলা নিজেদের বিধবা দাবী করলেও জেরায় স্বীকার করেন যে পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন।
গোলাম মোস্তফা হত্যার (চার্জ নং-৪) অভিযোগ প্রমাণে আনীত ৩ জন সাক্ষীই হলো জনশ্রুত সাক্ষী। ২ নং সাক্ষী মোহন মুন্সি এই হত্যাকান্ড সংগঠনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখ বলেছেন। তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন সেখানে বলেছেন, গোলাম মোস্তফাকে মধ্য রাতে হত্যা করা হয়েছে আবার ট্রাইব্যুনালে এসে বলেছেন সুর্যাস্তে ৩০ মিনিট পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। গোলাম মোস্তফাকে আগষ্ট মাসে পাক আর্মিরা আগষ্ট মাসে হত্যা করলেও ১৪ নং সাক্ষী মুজিবুর রহমান পানু বলেন গোলাম মোস্তফাকে মে মাসে হত্যা করা হয় ।
এই শহীদ গোলাম মোস্তফার মা ছিলেন শেরপুরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভানেত্রী এবং তার ছোট ভাই ৫ নং স্বাক্ষী মোশাররফ হোসেন মানিকও বর্তমানে শেরপুরের ঘাদানিক নেতা। সরকার ও ঘাদানিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গোলাম মোস্তফা হত্যায় কামারুজ্জামানকে ফাসাঁনো হয়েছে।
দারা মিয়াকে আটক এবং তাকে সহ আরো ৫ জনকে হত্যার (চার্জ-৭) অভিযোগ প্রমানে কোন সাক্ষীই বলেন নাই যে, কামারুজ্জামানের নির্দেশে দারা মিয়াকে আটক ও হত্যা করা হয়েছে। ১ নং সাক্ষী হামিদুল হক এতটুকুই বলেছেন যে, দারা মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু জেরায় তিনি দারা হত্যার সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারেন নি।
৯ নং সাক্ষী আবুল কাশেম বলেন, তিনি শুনেছেন দারা মিয়া ক্যাম্পে আটক ছিলেন এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে। কখন বা কিভাবে দারাকে গ্রেফতার ও হত্যা করা হয় এ ব্যাপারে তিনি কোন তথ্যই ট্রাইব্যুনালে প্রদান করেননি এবং তার গ্রেফতার ও হত্যার সাথে কামারুজ্জামান জড়িত কিনা তাও বলেননি।
১৫ নং সাক্ষী দবির হোসেন ভূইয়া জুলাই মাসের শেষের দিকে বা আগষ্ট মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২৬/২৭ দিন ডাক বাংলোয় আটক ছিলেন। তার মতে দারা মিয়াকে ঐ সময়ের মধ্যেই আটক এবং হত্যা করা হয় (জুলাই/আগষ্টের মধ্যে)। অথচ চার্জ গঠনের আদেশে বলা হয় নভেম্বর মাসে দারাকে হত্যা করা হয় যা দবির ভূইয়ার বর্ণিত তারিখের সম্পূর্ণ বিপরীত।
আমার স্বামী জননেতা কামারুজ্জামান একজন সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা হওয়ায় তিনি বর্তমান সরকারের চক্ষুশুলে পরিনত হয়েছেন এবং এদেশের রাজনীতি থেকে তাকে বিরত রাখার কৌশল হিসেবে বর্তমান সরকার বিচারের নামে এই প্রহসনের পথ বেছেঁ নিয়েছে।
নুরুন্নাহার
কামারুজ্জামান সাহেবের স্ত্রী।
দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।