চট্টগ্রাম: গভীর রাতে বিজিবি’র অভিযানে পেট্রলবোমাসহ গ্রেপ্তার হওয়া ‘নাশকতাকারীদের’ মধ্যে খুন হওয়া যুবলীগ নেতা হুমায়ন কবির মুরাদের ভাইও আছে। মো.মুন্না (৩৩) নামে ওই যুবক নিজেও যুবলীগের সমর্থক বলে দাবি করেছে।
বিজিবি জানিয়েছে, পেট্রলবোমাসহ নাশকতার সরঞ্জাম মজুদ রাখার খবর পেয়ে তারা নগরীর টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে যায় এবং পুরো এলাকা কর্ডন করে রাখে। খুলশি থানার পুলিশ কর্ডন এলাকার ভেতরে অভিযান চালিয়ে সরঞ্জাম উদ্ধার ও ৬ জনকে আটক করেছে।
২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর নগরীর পাহাড়তলী রেলক্রসিং এলাকায় নগর যুবলীগের অর্ন্তদ্বন্দ্বে খুন হন হুমায়ন কবির মুরাদ। তিনি নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
সোমবার গভীর রাতে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনি বস্তিতে অভিযান চালিয়ে নাশকতার সরঞ্জামসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে ২৮ ব্যাটেলিয়ন বিজিবি’র কার্যালয়ে মুন্নার সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয়।
মুন্না বলেন, ‘হুমায়ন কবির মুরাদ আমার আপন ভাই। তার হত্যা মামলা নিয়ে আমি দৌঁড়াদৌঁড়ি করছি। যারা আমার ভাইকে মেরেছে তারা মামলা থেকে রেহাই পাবার জন্য ষড়যন্ত্র করে আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে।’
রেলওয়ে কলোনিতে পেট্রলবোমা কারা মজুদ করেছে জানতে চাইলে মুন্না বলেন, আমি বিডি ফুডের গাড়ি চালাই। আমি দিনে যাই, রাতে আসি। আমি কিভাবে জানব, কারা পেট্রলবোমা রেখেছে ?’
মুন্না বলেন, ‘আমি নিজেও যুবলীগের সমর্থক। আমি কিভাবে নাশকতাকারী হই ?’
খুনের শিকার হুমায়ন কবির মুরাদ ঠিকাদারি এবং বিলবোর্ড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঠিকাদারি ব্যবসা এবং টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে মুরাদ যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী খোকন চন্দ্র তাঁতীদের হাতে খুন হন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে।
মুন্নাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি’র দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মেজর সাব্বির মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ধরা পড়লে কেউ নিজেকে দোষী বলেনা। আমরা এলাকা কর্ডন করেছিলাম। সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের তদন্তেই সবকিছু উদঘাটিত হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার খুলশি থানার ওসি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়াকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পুলিশ ও টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মুন্না নিজেও অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত। অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ে তার সঙ্গে যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম শামীমের অনুসারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে। টাকার বিনিময়ে তার নাশকতায় জড়িত হবার বিষয়টি অবিশ্বাস্য নয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
মুন্না চাঁদপুর জেলার সদর থানার তর্পচন্ডী গ্রামের মো.রতনের ছেলে। নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে টাইগাপরপাস রেলওয়ে কলোনিতে সিআরবি বিল্ডিংয়ের নিচতলায় মুন্না থাকে।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের মধ্যে বাবা-ছেলেও আছেন। এরা হলেন আবুল কালাম (৪০) ও তার ছেলে হারুন মিয়া (১৮)।
আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ করি। সারাদিন কাজ শেষে রাতে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। গভীর রাতে বিজিবি আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আমার ছেলেকেও ধরে আনে।
গভীর রাতের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া বাকি তিনজন হল, ওসমান গণি (৩০), শরিফ খাঁন (৩৫) এবং জাহাঙ্গীর আলম (৩৮)।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে আছে, ৮টি পেট্রলবোমা, ২টি ককটেল, ২টি রামদা, ৭টি কিরিচ, ৯টি লোহার পাইপ, ২টি স্কচটেপ এবং ১টি রশি।
দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ৪ফেব্রুয়ারি ২০১৫।