মাহফুজা ইয়াসমীন তার আটক ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী রিফাত আব্দুল্লাহ খানকে ফিরে পেতে সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিটিতে এ আহবান জানান তিনি।
মাহফুজা ইয়াসমিন বলেন, আমার ছেলে হলিচাইল্ড স্কুলের বানিজ্য বিভাগের ছাত্র রিফাত আব্দুল্লাহ খান উত্তরা হাইস্কুল কেন্দ্রে গত শুক্রবার গণিত পরীক্ষা দিয়ে বের হবার সময় পরীক্ষার হল থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোষাকধারী পুলিশ তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
তাৎক্ষনিক র্যাব হেডকোয়ার্টার, ডিবি কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করলেও তারা রিফাতকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয় স্বীকার করেনি।
আইন-শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম, খুন হত্যা যখন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন আমার সন্তান রিফাতকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রশাসনকে জানালেও এখনও তারা আমার সন্তানের কোন সন্ধান দেয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী ও পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, পরীক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনে বাসা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা-নেয়ায় পুলিশী নিরাপত্তা দেয়া হবে।
কিন্তু এমনতর ঘোষণার পরও খোদ রাজধানীতে র্যাব হেডকোয়ার্টারের অতি নিকটে উত্তরা হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় আমি চরমভাবে উদ্বিগ্ন, চিন্তিত এবং আমি তার জীবন নাশের আশঙ্কা করছি।
গতকাল তাকে গ্রেফতারের পর আমি নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিলাম পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য হয়তো আজ তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল যখন বাংলাদেশ সফর করছেন এমন সময়েই আমার সন্তানকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখায় আমি চরম উদ্বিগ্ন।
অবিলম্বে আমার সন্তানকে সুস্থ্য স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে দিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং দেশের বিভিন্ন দূতাবাসের কাছে ঐকান্তিক অনুরোধ জানাচ্ছি।
মাহফুজা ইয়াসমীন আরো বলেন, আমার দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে রিফাত বড়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে আমার ছেলে রিফাত পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার সাথে সাথেই সাদা পোশাকের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছি তাকে গোয়েন্দা পুলিশের এএসপি শাহজাহানের তত্ত্বাবধানে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে নিয়ে আমাদের বিভিন্ন আত্মীয়ের বাসায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে একটি মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র নিয়ে যায়।
আইন অনুযায়ী কাউকে আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই থানা কিংবা আদালতে হাজির করানোর নিয়ম থাকলেও তাকে এখনো কোথাও হাজির করা হয়নি। তাকে শারীরীকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং রাতে খাবার দেয়া হয়নি জেনে আমি মর্মাহত।
যখন দেশের যত্রতত্র পুলিশী হেফাজতে হত্যা ও গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার ঘটনা নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে তখন মা হিসেবে আমি খুবই বিচলিত।
আমি অবিলম্বে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিশ্বের সকল মানবতাবাদী সংগঠনকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আনুরোধ করছি।
দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।