বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিব এখন আওয়ামী লীগের লালসালু। এই লালসালুকে ঘিরে থাকা ভন্ডরাই নিজেদের স্বার্থে যাকে তাকে রাজাকার আখ্যা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দাবী করে তাদের দল নাকি মুক্তিযুদ্ধের দল অথচ চোরের দল চাটার দল আখ্যা দিয়ে শেখ মুজিব নিজেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের দল হলে আওয়ামী লীগ হত্যার দায়ে শেখ মুজিবই বড় রাজাকার। বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকালীন দল বটে, তবে মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। তিনি বলেন, এটা সবার কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট - মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব ও তার পরিবারের বিন্দুমাত্র ভুমিকা ছিল না। বরং ২৫ মার্চ শেখ মুজিব সমঝোতার মাধ্যমে ‘শখের বন্দী’ হন।
স্থানীয় সময় সোমবার রাতে ইস্ট লন্ডনের দ্যা অট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত বাংলাদেশের ৪৪তম বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় তারেক রহমান প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের অবস্থান, স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র প্রমাণ সহকারে তুলে ধরেন। বক্তব্যের পাশাপাশি প্রজেক্টরে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল তিনি উপস্থাপন করেন। একইসঙ্গে তারেক রহমান আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘অশ্লীল’ প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে গালাগাল না করে এসব যুক্তি ও দালিলিক তথ্যের জবাব আহ্বান করেন। দেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার বক্তব্য যাচাই করুন। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে নতুন প্রজন্ম সহজেই এসব তথ্য যাচাই করতে পারেন। তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের অবস্থান সম্পর্কে আমার দেয়া বক্তব্য পারলে দালিলিক প্রমাণ দিয়ে অস্বীকার করুন।
তিনি বলেন, ৭১’ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদারদের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের উপ অধিনায়ক একে খন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন তাকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে কি বাংলাদেশের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি ?
তারেক রহমান দীর্ঘ ১ ঘন্টা ৫০ মিনিটের বক্তৃতার প্রায় দেড় ঘন্টাই প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন। প্রতিটি বিষয়ে একাধিক দালিলিক প্রমাণ তুলে ধরে তিনি নিজে উপসংহার টানেন দর্শকদের সঙ্গে কুইজের মাধ্যমে মতামত নিয়ে।
বাংলাদেশের ৪৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপির আটদিনের অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তÍ চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমদে, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী, জাসাস-এর সহসভাপতি হেলাল খান, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ব্যারিস্টার তারেক বিন আজিজ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, সহসভাপতি আহমদ আলী, যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মামুন, সহসাধারণ সম্পাদক তাহের রায়হান চৌধুরী পাভেল, সাদিক মিয়া, প্রচার সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, মিডল্যান্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ তাহের, কার্ডিফ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সালেহ লিটন প্রমুখ।
তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিব ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতাকামী জনগণের উপর হামলার আগ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাকামী জনগণ তা চায়নি। অসংখ্য জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে শেখ মুজিবকে জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই ইতিহাস বিকৃতির শুরু।
বক্তব্যের শুরুতেই তারেক রহমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে এম ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে স্মরণ করেন। বলেন, যারা ততকালীন পুর্বপাকিস্তানের জনগণের স্বার্থের পক্ষে সদা সোচ্চার ছিলেন তাদেরকে আমাদের স্মরণ করতেই হবে। বাকশালের জনক শেখ মুজিবুর রহমানকেও স্মরণ করছি, যিনি পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, যদিও জনগণ স্বায়ত্বশাসন নয় - চেয়েছিলো স্বাধীনতা। তারেক রহমান বলেন, তবে ব্যতিক্রম ছিলেন মাওলানা ভাসানী যিনি স্বায়ত্বশাসন নয়, চেয়েছিলেন স্বাধীনতা। মাওলানা ভাসানীই প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার আওয়াজ তুলেছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, স্মরণ করছি তাজউদ্দিন আহমদ, জেনারেল ওসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য শহীদ এবং যারা ৫৬ হাজার বর্গমাইল এলাকার ভেতরে থেকে সাহসের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধঅনতা অর্জনে লড়াই করেছেন শত্রুর সঙ্গে। শহীদ জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাচিত হিসাবেও প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, জিয়াউর রহমানও বালাদেশের স্বাধীনতার জন্য সেই তরুণ বয়স থেকেই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তত রেখেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে “একটি জাতির জন্ম” শিরোনামে জিয়াউর রহমানের একটি লেখা থেকেও উদ্ধৃতি দেন। নিবন্ধে জিয়াউর রহমান লিখেছেন, “........স্কুল জীবন থেকেই পাকিস্তানীদের দৃষ্টিভঙ্গির অস্বচ্ছতা আমার মনকে পীড়া দিতো। আমি জানতাম, অন্তর দিয়ে ওরা আমাদের ঘৃণা করে। .. .. .. .. .. সেই স্কুল জীবন থেকে মনে মনে আমার একটা আকাক্সক্ষাই লালিত হতো, যদি কখনো দিন আসে, তাহলে এই পাকিস্তানবাদের অস্তিত্বেই আমি আঘাত হানবো.. .. ..পাকিস্তানী পশুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার, দুর্বারতম আকাক্সক্ষা দুর্বার হয়ে উঠতো মাঝে মাঝেই। উদগ্র কামনা জাগতো পাকিস্তানের ভিত্তি ভূমিটাকে তছনছ করে দিতে। কিন্তু উপযুক্ত সময় আর উপযুক্ত স্থানের অপেক্ষায় দমন করতাম সেই আকাক্সক্ষাকে।” তিনি বলেন এই কারনেই দেখা যায়, শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হলেও যথাসময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে জিয়াউর রহমানের কোন সমস্যা হয়নি।
তারেক রহমান বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই, বাক স্বাধীনতা নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনই মানুষ গুম হচ্ছে খুন হচ্ছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে এসব গুম খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা জড়িয়ে পড়েছেন। দুর্নীতি লুটপাট এখন সর্বগ্রাসী। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। র্যাব নামের রক্ষীবাহিনীর বন্দুকের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন শেখ হাসিনা। এই দখলদার হাসিনার অবৈধ সরকারের অবৈধ মন্ত্রীদের অতিকথনে জনগণ অতিষ্ঠ। খোদ শেখ হাসিনার মুখে নোংরা ও অশ্লীল কথাবার্তা জাতি হিসেবে প্রায়শই জনগণকে লজ্জায় পড়তে হয়।
তারেক রহমান বলেন, একটার পর একটা অপকর্ম করে শেখ হাসিনা বিপদে পড়লেই জনগণকে ধোকা দিতে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করেন।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে নয়, আন্দোলন করেছিলেন পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের জন্য। শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি বলেই সুযোগ পেয়েও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি। তারেক রহমান অভিযোগ করেন, পাকিস্তান আমলের পুরো সময়টাতে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনে কোথাও কোন সমাবেশে প্রকাশ্যে কখনোই তার মুখ থেকে কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হতেও শোনেননি। শেখ মুজিব চেয়েছিলেন ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব তো নয়ই, তার পরিবারও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি ভাষা সৈনিক অলি আহাদের ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-১৯৭৫’ বই থেকে ডেপুটি এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী ক্রিস পারভেন এর মার্কিন সিনেট সাব কমিটির শুনানীর একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেন। শুনানীতে বলা হয়, “শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকায় অবস্থানকারী পরিবারের ব্যয় বহনে বেগম ফজিলাতুন্নেসাকে প্রতিমাসে ১৫ শ টাকা করিয়া মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।” তারেক রহমান বলেন, আধাবেলা একবেলা খেয়ে না খেয়ে লাখো মানুষ যখন রণাঙ্গনে শেখ মুজিবের পরিবার তখন খুনী ইয়াহিয়া খানের পয়সায় খানসেনাদের পাহারায় নিরাপদে দিন কাটাচ্ছেন ঢাকায়।
তারেক রহমান প্রশ্ন রাখেন, তাহলে শেখ মুজিবকে ‘পাকবন্ধু’ বলায় কি ভুল হয়েছে? শেখ মুজিবকে “পাকবন্ধু“ বলায় আওয়ামী লীগের নাকি সম্মানহানি হয়েছে। তিনি ফের প্রশ্ন রাখেন, শেখ হাসিনার আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় এক দুর্বৃত্ত ব্যাংক থেকে জনগণের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। অথচ বর্তমান অবৈধ সরকারের এক রাবিশ মন্ত্রী বলেন, এটা নাকি তেমন কিছুই না। অবৈধ হাসিনা সরকারের এক মন্ত্রীর এক মন্ত্রীর জামাতা র্যাবের পোশাক পরে নারায়ণগঞ্জে সাত জনকে নির্মমভাবে খুন করেছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা তুলে নিয়েছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে কোন কোন কেন্দ্রে ভোটারের পরিবর্তে টেলিভিশনের পর্দায় কুকুর দেখা গেছে, বিশ্ব¦জিৎ নামে এক যুবককে ছাত্রলীগ রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করেছে। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ জ্বালিয়ে দিয়েছে। শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িতদের শেখ হাসিনা বৈধ মন্ত্রিসভায় তার পাশে বসিয়েছে, শেখ মুজিব বিনা বিচারে ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দিয়েছে, আওয়ামী লীগকে চোরের দল চাটার দল বলে শেখ মুজিব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে, এসবের জন্য কি আওয়ামী লীগের কারো সম্মানহানী হয়নি?
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের নামে শেখ হাসিনা অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাখায় গণতন্ত্রের সম্মানহানি হচ্ছে। দেশের জনগণের সম্মানহানি হচ্ছে। বিনা ভোটে ১৫৪ জনকে এমপি নির্বাচন করায় জাতীয় সংসদের প্রাণহানী হচ্ছে। আগে এসব অপকর্মের বিচার হতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতা অন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য শেখ মুজিব নিজেও প্রস্তুতি নেননি, আওয়ামী লীগকেও প্রস্তুত করেননি। আওয়ামী লীগও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল নয়। তিনি মহিউদ্দিন আহমদ লিখিত ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বই থেকে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সিরাজুল আলম খানের একটি মন্তব্য তুলে ধরেন, “আওয়ামী লীগ ছিল অ্যান্টি লিবারেশন ফোর্স। আওয়ামী লীগ তো ছয় দফা থেকে এক ইঞ্চিও আগে বাড়তে চায়নি। এদের সত্যিকার চেহারা জানতে পারলে মানুষ এদের গায়ে থুতু দেবে।
তারেক রহমান বলেন, ৭ মার্চ শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হতো না। এতো মানুষের প্রাণহানির দায় শেখ মুজিব এড়াতে পারেননা বলেও মন্তব্য করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধের উপ অধিনায়ক আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে খন্দকার, কলামিস্ট বদরুদ্দিন উমরের লেখার উদ্ধৃতি দেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার আগে কিংবা পরে কখনোই জনগণের উপর ভরসা রাখেনি, জনগণের আশা আকাক্সক্ষা বুঝতে পারেনি। জনগণের কাছে স্বীকৃতি না পেয়ে এরা এখন আদালতের মাধ্যমে শেখ মুজিবের স্বীকৃতি চায়। শেখ মুজিবের “অসমাপ্ত আত্মজীবনী“ বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিব ১৯৩৮ সালে মারামারির দায়ে জীবনে প্রথম কারাগাওে যান। ওই সময় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, শেখ মুজিব রামপদ নামে একজনকে হত্যার জন্য আঘাত করেছেন। ওই মামলায় সাতদিন জেল খাটেন শেখ মুজিব। তিনি বলেন, পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ভয়ংকর চরিত্রের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রমনা কালীমন্দিরের জায়গাটি দখল করে নেয়া হয় তার শাসনামলেই। সিরাজ শিকদারকে বিনাবিচারে হত্যা করে সেটি আবার গর্ব করে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে বলে সংসদকে কলংকিত করার ইতিহাস শেখ মুজিবেরই রয়েছে। ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিলো শেখ মুজিবের শাসনামলে। তারেক রহমান বলেন, এই হলো শেখ মুজিবের চরিত্র।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে অনেকেই বলেন মোনাফেকের দল। তাদের কথায় কাজে মিল নেই। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় যাকে তাকে যখন তখন রাজাকার আখ্যা দিলেও শেখ হাসিনার পরিবারেই রাজাকারের বংশবিস্তার হচ্ছে। তারেক রহমান অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশাররাফ হোসেন ফরিদপুরে ৭১ সালের নামকরা রাজাকার। তার পিতা নুরা রাজাকারের নাম ফরিদপুরে রাজাকারদের তালিকায় ১৪ নাম্বারে। নুরা মিয়া শান্তি কমিটির স্থানীয় সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা রাজাকারদের সঙ্গে আত্মীয়তা করলেও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু সেটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ সেলিমের বেয়াই প্রসিদ্ধ রাজাকার মুসা বিন শমসের। এটিও শেখ হাসিনা নিজেই প্রকাশ করে দিয়েছেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, তাই রাজাকারের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে তাদের হয়ত কোন সমস্যা নেই, কিংবা বিষয়টি হতে পারে নিতান্তই তাদের পারিবারিক বিষয়, সেইক্ষেত্রে আমরা কোন মন্তব্য করতে চাইনা কিন্তু নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে আওয়ামী লীগ যখন যাকে তাকে রাজাকার বলে অপবাদ দেয় তখন জনগণ স্বাভাবিকভাবেই এইসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার অধিকার রাখে।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবের কোন সমালোচনা করা যাবেনা বলে যারা মনে করেন, তাদের কাছে প্রশ্ন, কেন সমালোচনা করা যাবেনা। শেখ মুজিব শয়তানও না আবার ফেরেশতাও না। তিনি একজন মানুষ এবং একজন মুসলমান। এ কারণে আমি তার কবরও জেয়ারত করেছি। একইসঙ্গে তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার সমালোচনাও হবে - এটাই স্বাভাবিক।
অতীতমুখিতা বাদ দিয়ে আগামী প্রজন্মকে ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের প্রতি আহবান জানান তারেক রহমান। ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়ায় শেখ মুজিবের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ৭১ এ পাকিস্তানের দোসর যারা ইয়াহিয়া টিক্কা খানের রুপী খেয়ে যারা ঢাকায় আয়েশে নয়মাস কাটিয়ে দিয়েছেন, দেশ ও গণতন্ত্র এখন তাদের কাছে বন্দী। আবারো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চলমান অপশাসন থেকে জনগণকে মুক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান তারেক রহমান।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বেয়াদবদের দল। এটি ভারতের দালাল ও ফ্যাসিবাদী দল। ভারতের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দেয়ার চক্রান্ত বিএনপি রুখে দেবে বলে তিনি হুশিয়ারি দেন। বিএনপির এই নেতা চলমান আন্দোলনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আন্দোলনে কারা মাঠে থাকে তার তালিকা প্রণয়নের জন্য তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের পরিবারের কোনো ভুমিকা নেই। যদি শেখ হাসিনা দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন, তাহলে কেন তিনি তাঁর স্বামীকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠালেন না? প্রশ্ন রাখেন রিজভি। এ প্রসঙ্গে মাও সেতুং-এর পরিবার এবং জিয়াউর রহমানের পরিবারের উদাহরণ টানেন তিনি।
রিজভি আহমেদ বলেন, অপপ্রচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে - তারা মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা যেন কন্ট্রাক্ট নিয়েছে। এতো কিছুর পরও সত্য বেরিয়ে আসছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যদি শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেনই তাহলে ইতিহাস লেখাতে বিচারপতি নিয়োগ দিতে হচ্ছে কেন? শামসুদ্দিন মানিকদের দরকার হচ্ছে কেন? কারন স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিব পরিবারের সম্পৃক্ততা ছিল না।
উৎস: আমারদেশ/ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪,