"শহীদ নিজাম উদ্দিন" যে ফুল ফুটতেই ঝরে গেলো

"শহীদ নিজাম উদ্দিন" যে ফুল ফুটতেই ঝরে গেলো
............. লেখক- মোহাম্মদ ইমদাদুল হক রায়হান।

♥"শহীদ নিজাম তুমি ছিলে ফুটন্ত এক ফুল,
ফুটেছিলে নোয়াখালীর সেনবাগের মাঠিতে,
তোমারি সুবাসে অনেকে পেয়েছিল কুল"♥

অবশ্যই তোমাদের মাঝে এমন একটি দল থাকা উচিৎ, যারা কল্যাণের পথে আহবান করবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।  আল- কোরআন।

মহান রাব্বুল আ'লামীনের এই ঘোষনার আলোকে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থকে আত্নপ্রকাশ করলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নামক ছাত্র সংগঠনটির। আধুনিক জাহেলিয়াতের সাথে সংগ্রাম করে আল্লাহর এই জমিনে সকল প্রকার যুলুম ও নির্যাতনের মুলোচ্ছেদ করে আল- কোরআন ও আল- হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা শুরু করে "বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির"।

আত্নপ্রকাশের সাথে সাথে কাফেলা তার মিশন নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেয় সারা দেশের উদ্দের্শে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সকল আন্দোলন সংগ্রামে যুগ যুগ ধরে যুলুমবাজ সরকারের  বিরুদ্ধে স্বৈরাচারীদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে ছাত্রশিবির রাজ পথে হরতাল মিছিল মিটিং এর কর্মসূচী আপোষহীন ভূমিকা নিয়ে কোঠর ভাবে পালন করেছে।

তৎকালীন নোয়াখালী জেলার সন্মানিত প্রথম সভাপতি মোঃ জাকির হোসাইন ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৭ সালে ঢাকার প্রোগ্রাম শেষ করে নোয়াখালীতে আসি এবং ৯ তারিখে বৃহত্তম নোয়াখালীর অন্যতম বিদ্যাপিট চৌমুহনী সরকারী এস. এ. কলেজের বাদশা মিয়ার ক্যাণ্টিনে ছাত্র সমাবেশ করে শিবিরের ঘোষনা দেই। তার হাতেই নোয়াখালীর প্রথম তুলে দেওয়া হয় শহিদী কাফেলার পতাকা। হাটি হাটি পা পা করে কাফেলা চলতে থাকে তার লক্ষ পানে এবং প্রিয়  হয়ে উঠে দ্বিতীয় আরব খ্যাত নোয়াখালীর মেধাবী ছাত্রদের কাছে।

তারই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তম নোয়াখালীর অন্যতম বিদ্যাপিট চৌমুহনী সরকারী এস. এ. কলেজের মেধাবী ছাত্র শহীদ নিজাম উদ্দিন প্রতিভাবান দায়িত্বশীলদের প্রচেষ্টায় শহিদী কাফেলায় অংশ গ্রহন করে স্মৃতির পাতায় তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেলেন। যার স্মৃতি গুলো আমাদেরকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। যার শুন্যতা আজও তার সাথীদের প্রতিটি রাত অশ্রু ঝরে, যে রক্ত গুলো জল হয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে, যে ফুল ফুটতেই ঝরে গেলো, নোয়াখালী উত্তর জেলা যার রক্তে উর্বর এবং প্রতিনিয়ত দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলের ডাক দিয়ে যায় তিনি হলেন চৌমুহনী সরকারী এস. এ. কলেজের মেধাবী ছাত্র আমাদের প্রিয় ভাই "শহীদ নিজাম উদ্দিন" ২০০১ সালের ২৮ আগস্ট সেনবাগের তৎকালীন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হয়ে চলে গেলেন প্রভুর কাছে, চির জান্নাতে।

♥যে ভাবে শহীদ হলেন♥

২৮ আগস্ট ২০০১, সকাল ১০ টা। শহীদ নিজাম উদ্দিন বাড়ী থেকে বের হয়ে রিক্সা যোগে সেবার হাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সেবারহাটের অধুরে ধর্মপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন হানিফ  মিয়ার দোকানের সন্মুখে পৌঁছলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত আক্রমন করে। শহীদ নিজাম উদ্দিন রিক্সা  থেকে পড়ে গেলে উপর্যুপরি কুপিয়ে তার মাথা শরীর ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে। হাত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। শহীদ নিজাম উদ্দিনকে প্রথমে সেনবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আনার পথে শাদাত বরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি........রাজিউন)।

♥মাইজদীতে শহীদ নিজামের প্রথম জানাযা♥

২৯ আগস্ট ২০০১ সকাল ১১ টার দিকে পোষ্ট মর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। রাতেই ডাকা থেকে শাহাদাতের খবর পেয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মফিজ ভাই ছুটে এসেছেন। ছাত্র ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ (সারাদেশ ব্যাপী) স্মারকলিপি পেশ, গণসংযোগ, দোয়া পালন ও ছাত্র গণজামায়েত করার কর্মসূচী ঘোষনা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাইজদী জামে মসজিদ চত্বরে সাড়ে বারোটায় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে মাইকিং হতে থাকে। দল- মত নির্বিশেষে চতুর্দিক থেকে লোকজন জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য মসজিদ চত্বরে জমায়েত হতে থাকে। লাশের গোসল সেরে যথাসময়ে জানাযার জন্য নিয়ে আসা হয়। এ সময় জানাযায় উপস্থিত ছাত্র জনতার মাঝে এক রিদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি  হয়। শহীদের সাথীরা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলে শোকাহতদের সান্তনা দেবার মত কারো সাহস হয়নি। এক পর্যায়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় জেলা সভাপতি মোশারফ ভাই শোককে শক্তিতে পরিনত করে সফল ভাবে পরর্বতী কর্মসূচী পালনের সহযোগীতা চাইলে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।

♥চৌমুহনী সেবারহাট ও শহীদের নিজ বাড়ীতে ২য়, ৩য়, ও সর্বশেষ জানাযা♥

বেলা ২ টা চৌমুহনীতে এবং সাড়ে ৩ টায় সেবারহাটে বিকাল ৪ টায় শহীদের নিজ বাড়ীতে ২য়, ৩য়, ৪র্থ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জানাযায় হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করেছে যে, শহীদ নিজাম উদ্দিনের শাহাদাত আল্লাহ কবুল করেছেন। প্রতিটি স্থানে শহীদের কফিন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। শ্রোতারা খুনিদেরকে ধিক্কার জানাতে থাকে। বাড়ীতে  সর্বশেষ জানাযা  শেষে শহীদের শোকাহত সাথীরা দাফন কার্য সমাধা করে।

♥সন্ত্রসীরা কেন শহীদ করলো নিজাম ভাইকে♥

উত্তম চরিত্র গঠন ছিলো নিজামের শাহাদাতের কারণ। আল্লাহর দিকে আহবান করাই ছিলো তার দোষ। সাহসিকতা প্রদর্শন  করাই ছিলো নিজাম উদ্দিন টার্গেটে পড়ার কারণ। সন্ত্রসীরা মনে করে ছিলো নিজাম উদ্দিন যদি এলাকাতে প্রাধান্য বিস্তার করে তাহলে তারা আর সন্ত্রাস  করতে পারবেনা। তাদের সন্ত্রাসের পথে নিজাম উদ্দিনই এক মাত্র বাধা। তাই তারা পথের বাধা দুর করতে হত্যার পথ বেছে নিলো। আমরা আল্লাহর দরবারে বিচার দিয়ে রাখলাম এবং দোয়া করি শহীদ নিজামের শাহাদাতের বিনিময়ে আল্লাহ যেন এদেশকে ইসলামের জন্য কবুল করেন। বাংলাদেশ কে সন্ত্রসীদের কবল থেকে মুক্ত করুন। শহীদ নিজামের  রেখে যাওয়া অপুর্নাঙ্গ কাজ সমাধা করার তাওফিক আল্লাহ আমাদের কে দান করুন। আমীন।

[আগামী ২৮ শে আগষ্ট ২০১৪ শাহাদাত বার্ষিকী সফল হোক সার্থক হোক]

Post a Comment

Previous Post Next Post