শবেবরাতে করণীয় ও বর্জনীয়

লেখক-মো: ইমদাদুল হক রায়হান
সেনবাগ: শবেবরাত বা ‘লাইলাতুল বরাত’ এ ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে নিমগ্ন থাকা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মোসলমানের প্রধান কাজ। এই রাতের সূচনাতেই অর্থাৎ সূর্যাস্তকালে গোসল করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। অতঃপর মাগরিবের নামাজ পড়ে তাসবিহ-তাহলীল পাঠ করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।

এশার নামাজ পড়ে (বিতরের নামাজ বাকি রেখে) দুই রাকাত নিয়তে নফল নামাজ পড়তে পারেন। এর মাঝে কিছুক্ষণ পর পর দোয়া করবেন, দরুদ শরিফ পড়বেন, ক্বোরআন তিলাওয়াত করবেন। সেই সঙ্গে বেশি বেশি করে কাজ্বা নামাজগুলো আদায় করবেন। এভাবে পূর্ণ ফজিলতের আশায় সারারাত ইবাদাতের মাধ্যমে কাটিয়ে দিতে হবে।

এ রাতে তওবা-ইস্তেগফার করা, আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের পাপরাশি ক্ষমা লাভের জন্য প্রার্থনার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ রাতে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত ও পরদিন নফল রোজা রাখার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয় এবং ব্যক্তিজীবনে এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।

নবী কারিম (সা.) নিজেও এ রাতে কবর জিয়ারত করতেন এবং ইবাদতে নিমগ্ন হতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে র্স্পশ করবে না।’ (আবু দাউদ)

শবেবরাতে বর্জনীয়:

শবে বরাতে করণীয় আমলের সঙ্গে কতগুলো বর্জনীয় বিষয়ও সম্পৃক্ত আছে। এ রাতে অপব্যয় না করে এবং আতশবাজিতে অনর্থক অপচয় না করে সে অর্থ মানবকল্যাণকর কাজে বা গরীব-মিসকিনের মধ্যে দান-সাদকা করা অনেক সওয়াব ও বরকতের কাজ। শবেবরাতে আতশবাজি নয়, বরং ক্ষুধা ও দারিদ্রপীড়িত দেশ ও জাতিরকল্যাণ কামনা করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে শবেবরাতের বৈশিষ্ট্য অনুষ্ঠানের আড়ম্বরতার মধ্যে নয়, বরং চরিত্রের সাধনার মাধ্যমে দয়াময়ের করুণা লাভের আন্তরিক প্রয়াসই এর অন্তর্নিহিত কাজ।

এ রাতে অহেতুক আলোকসজ্জা করা, তারাবাতি জ্বালানো, আতশবাজি পোড়ানো, পটকা ফোটানো প্রভৃতি শরিয়ত গর্হিত কাজ। এতে অপসংস্কৃতির সঙ্গে যেমন সাদৃশ্য তৈরি হয়, তেমনি ইবাদতে যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটে। শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের এ বিষয়ে সর্তক করা অবশ্যকর্তব্য। প্রকৃতপক্ষে শবেবরাত উপলক্ষে আমাদের দেশে ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক অভূতর্পূব জাগরণ সৃষ্টি হয়।

ঈমানদার মানুষের মধ্যে অতুলনীয় এক ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা পরিলক্ষিত হয়। এ রাতে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করাই বান্দার একমাত্র কর্তব্য। তাই সৌভাগ্য আর রিজিক বরাদ্দের, জীবন-মৃত্যুর দিনক্ষণ নির্ধারণের রজনীতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে সর্বপ্রকার গোঁড়ামি ও শিরক থেকে পরিত্রাণ লাভের প্রার্থনা করা উচিৎ। আল্লাহ পাক যেন মুসলিম জাহানের সুখ-শান্তি ও কল্যাণের জন্য তার রহমতের দরজা সারা বছরই খুলে রাখনে— এটাই হোক আমাদের প্রার্থনা।

উৎসঃ পেইজবুক

এম/এ/আর/সেনবাগ

Post a Comment

Previous Post Next Post