এ উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার প্রসার ও মুসলমানদের সংঘঠিত করে জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলামী শাসন প্রতিষ্টার লক্ষ্যে আন্দোলনের সুচনা করে জামায়াতে ইসলামী। এটি প্রথম দিকে পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হলে ও পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে স্বরুপে আতœ প্রকাশ লাভ করে। মাওলানা মওদুদী (রঃ) কাদিয়ানীরা মুসলমান নয় বলে কুরআন-হাদীসের আলোকে প্রমাণ করেন ও তাফহিমুল কুরআন তাফসিরের এর মাধ্যমে মানুষের সামনে কুরআনকে শুধু তেলোয়াতের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে জীবন্ত ভাবে উপস্থাপন করেন । কেউ কেউ ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরকে মওদূদীবাদী বলে থাকনে। সাইয়েদ মওদূদী (রঃ) তার লিখুনির মাধ্যমে সর্বাধিক ইসলামী সাহিত্যের ভান্ডার মুসলিম উম্মাহকে উপহার দিয়েছেন। যা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তিনি শিরক বিদ’আত ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে খুরধার লিখুনির মাধ্যমে চাপেটাঘাত করেছেন। তিনি ইসলামের মর্যাদকর নাম ব্যবহার করে ইসলামের স্বরূপ বিকিৃত কারীদের খোলস উম্মোচন করে মুসলমানদের সচেতন করার চেষ্টা করেছেন এবং ভ্রান্তির সাগরে তৎকালীন যারা হাবু ডুবো খাচ্ছিলেন তাদেরকে সোধরানোর চেষ্টা করেছেন। এ সব সত্য ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরে কিছু আলেম-ওলামা ও স্যাকুলাররা সংঘবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে থাকে। আল- জিহাদ বইটি লিখার পর কিছু আলেম ফতোয়া দিয়েছিলেন মওদুদী (রঃ) কে কাফের হিসাবে, কারণ তিনি ইসলামে মুসলমানদের জিহাদের ফরজিয়াতের কথা বলেছেন ও ইসলামী রাজনীতি মুসলমানদের জন্য ফরজ বলে উল্লেখ করেন। কারণ তখন আলেমদের মাঝে অনেকে মনে করতেন যে ইসলামে রাজনীতি হারাম। আলেমরা তার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন কিন্তু কোন সমালোচনা তার স্বাধীন চেতা ও সত্যানুসন্ধানী মন-মানসকে সত্য পথের প্রকাশ থেকে তাকে নিবৃত করতে পারেনি। যারা মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী লিখুনী ও কর্মকান্ডকে মওদূদীবাদ বলে ঘৃনাচ্ছলে প্রকাশ করেন সত্যিই তারা নির্বোধ। কারণ তিনি তার কোন লিখুনিতে বা বক্তব্যে কখনো তার দর্শন প্রচার করতে হবে বা তিনি একজন দাার্শনিক তা প্রচার করেনি। তিনি বিদºএকজন ইসলামী চিন্তাবীদ বা দার্শনিক হিসাবে সর্বমহলে মৃত্যু পরবর্র্র্তিতে প্রমানিত হলেও তিনি স্পষ্টভাবে তার লিখুনিতে বলেছেন জামায়াতের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে-“ ব্যক্তি হিসেবে আমার লিখুনিতে বা বক্তব্যে ভুল হলে সেটি পালনীয় বা গ্রহণীয় নয়। আমাদের সকলের অনুস্বরণীয় ও অনুকরনীয় গাইড লাইন হলো আল-কুরআন ও আল-হাদীস”। জামায়াতে ইসলামী মওদূদীকে অনুস্বরণের প্রচার বড়ই অবান্তর। কারণ কোন ইসলামী সংগঠন ব্যক্তির পুজা করতে পারে না। তাই তিনি তার কোন সন্তানকেও এ দলের আমীর নিয়োজিত করে যাননি,বরং আন্দোলনের নিয়ম মাফিক পরবর্তী যোগ্য লোকরাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এবং লিখক হিসেবে যে সত্য সুন্দর কথা গুলো লিখেছেন তা কি গ্রহণীয় নয়?
জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্টার পর থেকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় দ্বীপ্ত কাফেলা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। নিশ্চয় মওদূদী মতবাদকে প্রতিষ্ঠার জন্য নয়! জামায়াতে মওদূদীবাদ বলে কোন মতবাদের ও স্থান নেই। তাদের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট ভাবে বলা আছে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্টার প্রত্যয়ের কথা। আর যদি জামায়াত মওদূদীবাদ প্রতিষ্ঠার করার চেষ্টা করে থাকে তাহলে তারা কেন তাদের কর্মীদেরকে এ মতবাদ প্রতিষ্টার কথা বলে না? কেন তার জন্ম দিবস ও মৃত্যু দিবস পালন করে না? তাহলে কি বলবেন জামায়াত কর্মীরা তার বই পড়ে কেন? এতে বলতে হয় ইসলামী সংগঠনের রূপ রেখা এবং সাহিত্যের মাধ্যমে ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ নিয়ে তিনি যেভাবে ব্যাখা বিশ্লেষণ করেছেন ,সে ভাবে ক’জনের লিখুনি আছে? আমাদের সমাজের সমচদার ব্যক্তি বর্গ বলে আমরা যাদেরকে সমিহ করি তাদেরকে ও এসব হাস্যকর মন্তব্য করতে দেখা যায়। দেখা যায় শুধু মাত্র তার বা তার প্রতিষ্টিত দলের বিরুধীতা করার জন্য তার লিখুনিকে কাট সাট করে সামনের অংশ বা পরের অংশের বয়ান করে যাতে মানুষের মাঝে বিভান্তি ছড়ায়। দেখা যায় ঐ ব্যক্তি যে ধরনের তথ্য দিয়েছে তার লিখিত বিষয়টি পড়লে ব্যাখা আসবে অন্য রকম । আবার দেখা যায় যে বিষয়ে বলা হয়েছে সে বিষয় সম্পর্কে তার তেমন কোন বক্তব্য উল্লেখিত বইয়ে নেই। কিছু আলেম ওলামা বলে থাকেন তিনি সাহাবীদের সমালোচনা করেছেন-অথচ যারা এসব অভিযোগ না দেখেই বিশ্বাস করে তারা একবারের মত ও কি কি কারণে সমালোচনা করা হয়েছে তাকি খতিয়ে দেখেছেন? আবার আহলে সুন্নাতের দাবীদার এক পক্ষ দাবী করে থাকে মওদুদী আওলীয়া ইকরামের সমালোচনা করেছেন। বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করছেন অনেকে, আবার তার সম্পর্কে না জেনে ও অনেক বিভ্রান্তকর বক্তব্য দিচ্ছেন। কারো সম্পর্কে ভালো ভাবে না জেনে অথবা কারো থেকে শুনে মন্তব্য করা এটা অন্যের উপর বড়ই অবিচার। এ করণে কারো ব্যাপারে মন্তব্য করার আগে তার সম্পর্কে জানা জরুরী। নতুবা আরেকজনের ক্ষতি করতে গিয়ে নিজেই গুনহগার হবেন। যারা ইসলামী সংগঠন করতে ভাল বাসেন, যাচাই বাছাই করে যে কোন ইসলামী সংগঠনে যোগ দিতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ! এখন পৃথিবীর সর্বত্রই ইসলাম কায়েমের প্রত্যয়ে অনেক গুলো ইসলামী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ তার পথে আমাদের প্রচেষ্টা দেখতে চান। ইসলামী আন্দোলন বা সংগঠনের নেতৃত্বের সমালোচনা করতে গিয়ে আমরা কেউ যাতে তাগুতের সাহায্যকারী হয়ে না যাই।
মওদূদী (রঃ) যে সকল কারণে ইসলামী সংগঠন গুলোর নেতা কর্মীদের কাছে একজন মোজাহিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ, গাবেষক তা হলো তিনি এই উপমহাদেশে প্রথম ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজকের এ সময়ে বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। তিনি তাফহীমুল কুরআন তাফসীর করেন এবং সুবিশাল ইসলামী সহিত্যে ভান্ডার রচনা করেছেন। অনেক কুৎসা রটিয়ে বলে থাকেন জামায়াতে ইসলামী সাম্প্রদায়িক দল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ প্রমাণ করতে পারেনি জামায়াত লোকেরা অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের লোকদের উপর হামলা নির্যাতন করেছে। বরং অন্যধর্মাবলম্বীরাই অভিযোগে করেছে বন্ধুবেশীরাই তাদের উপর আক্রমণ করে জামায়াতের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। আরো যে সকল অভিযোগ আসে তা নিতান্তাই অবাস্তব, মুলত: এর অগ্রযাত্রাকে যাদের সহ্য হয় না তারাই বিভিন্ন অজুহাত তুলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে একে রুখে দিতে চায়।
মওদূদীবাদ বলে কোন মতবাদ নেই -- শিবির সভাপতি
Tags:
নিউজ শীর্ষ