কুরবানীর তাৎপর্য ও শিক্ষা : হাফেজ মাওঃ জসিম উদ্দীন চাঁদপুরী ||

পৃথিবীতে যেমন অনেক জাতির মানুষ রয়েছে, তেমনি রয়েছে তাদের আনন্দ বেদনা প্রকাশের বিভিন্ন ধরনের বিশেষ দিন। কিন্তু মুসলমানদের ঈদের আনন্দ ও অন্যানদের আনন্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের সওগাতসমৃদ্ধ হয়ে কুরবানীর মাধ্যামে, ত্যাগ তিতিক্ষার শিক্ষার মাধ্যমে আনন্দের অনুপম মাধুরী এনে দিয়েছে ঈদুল আজহা।তাই ঈদকে কেবল আনন্দের বা পানাহারের উৎসব বলে মনে করলে চলবে না, বরং ঈদের উৎসব পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন এবং প্রিয় জিনিস ত্যাগের যে মহান ও অনুপম তাৎপর্য রয়েছে, তা উপলদ্ধি করতে হবে।ধমীয় অনুশাসন পালনের পাশাপাশি ঈদুল আজহার উদ্দেশ্য হচ্ছে -সব মানুষের সাথে পারস্পরিক সদ্ভাব, আন্তরিকতা এবং ভদ্র-নম্র আচরণ করা।

এ জন্য গরীব -দুঃখী ও আত্নীয় -স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেয়া এবং তাদের সাথে বেশী বেশী মিলিত হওয়া প্রয়োজন। আর দিনের শুরুতেই ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় করতে হবে।ঈদের দিন সকালে মুসমানদের সাথে ময়দানে বা ঈদগাহে গিয়ে একত্রে নামায আদায় করতে হয়।আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ও খোলা ময়দানে গিয়ে ঈদের নামায আদায় করতেন। নবীজীর মতো মুসলমানদের ধনী -দরিদ্র এবং গরীব -সচ্ছল সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা কর্তব্য।এর মাধ্যমে আমরা একে অন্যের আনন্দ-বেদনার অংশীদার হতে পারি।

সুতরাং আমরা বলতে পারি, ঈদ হচ্ছে একটি অনুপম সামাজিক উৎসব।এ জন্যই ঈদুল আজহার উৎসব পালিত হ্য় ওয়াজিব নামায ও কুরবানীর মাধ্যমে।কুরবানীর ইতিহাসঃকুরবানীর ইতিহাস ততটা প্রাচীন যতটা প্রাচীন মানব-ইতিহাস।পৃথিবীর ইতিহাসে সবপ্রথম কুরবানী হলো প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)-এর দুই পুত্র হাবিল-কাবিলের কুরবানী। তবে আমাদের কুরবানীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভাস্বর ও উজ্জ্বল হয়ে আছে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কুরবানী।তিনি শুধু একটি স্বপ্নের ইঙ্গিতে আল্লাহকে রাজিখুশী করার মহান উদ্দেশ্যে চোখ বাঁধা অবস্হায় কুরবানী দিয়েছিলেন তাঁর কলিজার টুকরা নিজ পুএ ইসমাঈল (আঃ) কে কিন্তু আল্লাহর প্রয়োজন ছিল না ইসমাঈল আঃ এর। প্রয়োজন ছিল হযরত ইবরাহীম( আঃ) এর মন পরিক্ষা করার যে, আমার খলীল ইবরাহীম আমাকে খুশী করার জন্য তার প্রিয়তম বস্তু দান করতে পারেন কি না।হযরত ইবরাহীম (আঃ)পরিক্ষায় উর্ত্তীন হলেন।আল্লাহ তা’আলা ইসমাঈল(আঃ)কে সরিয়ে সেখানে রেখে দিলেন দুম্বা।আর তাই দুম্বাই কুরবানী হয়ে গেল।কিন্তু হযরত ইবরাহীম (আ: তার ধারনামতে পুত্রকেই কুরবানী দিলেন।ভেসে উঠল সেখানে জান্নাতী ছবি।হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর মুখ থেকে ছুরি চালনার সাথে সাথেই নিঃসৃত হচ্ছিল -‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।

তখন ফেরেশতাগণের মুখ থেকে নিগত হল,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। সেসময় ইসমাঈল (আঃ)উচছারন করলেন -আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।তাদের এ তাকবীরই আজ তাকবীরে তাশরীকরুপে পালন করা হয়।

কুরবানীর শিক্ষা:
______________

প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো মহান পিতা আছেন কিনা, যিনি মালিক কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে তার কলিজার টুকরো পুত্রকে নিজ হাতে জবেহ করতে প্রস্তুত,,,?কিন্তু হযরত ইবরাহীম (আ:) আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে সেই কঠিনমত আদেশ স্বেচ্ছায় হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলেন।এটাই হলো আল্লাহর প্রতি প্রকৃত আনুগত্যের সঠিক নমুনা। কুরবানী মুসলমানদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য,মহব্বত, প্রেম -ভালোবাসার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে উৎসাহ দেয়।হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী আজও সুর্যের মত প্রদীপ্ত, উজ্জ্বল এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা থাকবে।তাঁর এ কাজ আল্লাহর জন্য সুমহান কুরবানীর নমুনারূপে উম্মতে মুসলিমার জন্য অনুকরনীয় আর্দশ হিসাবে চিরদিন পালিত হবে।সেই ধারাবাহিকতার হিসাবে আজ সারা পৃথিবীর সব মুসলমান কুরবানীর বিধান পালন করে আসছেন।এই আত্নাত্যাগ বা কুরবানীর শিক্ষা হচ্ছে -সাচ্চা মুসলমান এবং আত্নত্যাগকারীরাই তো সেই বান্দা, যারা আল্লাহর জন্য তাদের সবকিছু কুরবানী করতে রাজি।তবেই তা হবে ইবরাহীম (আঃ)এর ত্যাগের নমুনা।মুসলমানদের জান ও মালের প্রকৃত মালিক আল্লাহ।

তাই তো আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন “বলুন আমার নামায,ইবাদাত -বন্দেগী, দান-খাইরাত, উৎসর্গ, জীবন-মরন সবকিছুই আল্লাহর জন্য।এ তথা কেবল মুখে বললে হবে না, বাস্তবজীবনে আল্লাহর দ্বীন কায়িমে এবং মুসলমানদের জান ও মাল আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করতে প্রয়াসী হতে হবে।গরীব -দুঃখী, ইয়াতীম মিসকীন মানুষ যখন কুরবানীর গোশত পেয়ে খুশী হয়, তখন মহান আল্লাহ খুশী হন।আবার কুরবানীর চামড়ার টাকাও গরীব -মিসকীনদের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করে।সর্বোপরি কুরবানীর শিক্ষা হলো, আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান কায়িম করার শিক্ষা গ্রহন করা তবেই কুরবানীর উদ্দেশ্য সফল হবে।

লেখক - হাফেজ মাওঃ জসিম উদ্দীন চাঁদপুরী

Post a Comment

Previous Post Next Post