চাঁদার দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি পুলিশের ||

৫ লাখ টাকার দাবিতে এক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে পেটাচ্ছিলেন। এ সময় ৫ লাখ টাকা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেয় পুলিশ।

গোলাম রাব্বি নামের এই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা এসব কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তিনি ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।

গোলাম রাব্বি বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা হতে কল্যাণপুরে বাসায় ফেরার পথে আসাদ গেটে ডাচবাংলা ব্যাংকের এটিএম ‍বুথে ঢুকে টাকা উত্তোলন করি। রাতে ফিরে বাসা ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। তখন রাত আনুমানিক ১০টা। বুথ থেকে বের হয়ে টাকা মানিব্যাগে ঢুকাতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি থেকে একজন এসে বললেন, ওই চল, স্যার তোর সঙ্গে কথা বলবে। সেখানে গেলে তারা আমাকে টেনেহিচড়ে গাড়িতে তোলে।'

রাব্বি আরো জানায়, গাড়িতে নেওয়ার পর এসআই মাসুদকে অন্য এক পুলিশ সদস্য বলে, স্যার, এই ব্যাটা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন। কিন্তু তার অ্যাকাউন্টে তেমন কোনো টাকা নেই। তখন ওই ‘স্যার’ বলেন, ‘ওই ব্যাটা তুই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করিস, আর বলিস তোর কাছে টাকা নেই। এমনিতেই টাকা নিয়ে আসবি। ৫ লাখ টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দেওয়া হবে। না দিলে কাল সকালে তোর লাশ বেড়িবাঁধে পাওয়া যাবে।’ এরপর সেখান থেকে পুলিশ তাকে গাড়িতে নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘোরাঘুরি করে।

রাব্বি বলেন, 'রাত আড়াইটা পর্যন্ত ওই পুলিশ সদস্যরা আমাকে বন্দুকের বাট ও লাঁঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। কাপড় খুলেও তারা আমাকে পেটায়, আর টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। এক পর্যায়ে মার সইতে না পেরে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলি, ঠিক আছে, আমাকে ফোন করতে দেন। টাকার ব্যবস্থা করি। এই বলে মোবাইল ফোন নিয়ে রেডিও ধ্বনির সাংবাদিক জাহিদ হাসানকে ফোন করি। সে আসতে চাইলে পুলিশ তাকে আসাদ গেট আড়ং এলাকায় আসার জন্য বলে।'

বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাব্বি বলেন, 'ফোন কেটে দেওয়ার পর ওরা পরামর্শ করে বলে, দেখ, তোকে নিয়ে যেতে যদি দুই-একজন আসে তবে কথা বলবো। আর যদি বেশি লোক আসে, তবে গাড়ি টান দিয়ে সোজা বেড়িবাঁধের দিকে যাওয়া হবে। এরপর তোকে গুলি করে লাশ ফেলে দেওয়া হবে। এ সময় আরেক পুলিশ সদস্য বলে ওঠেন, একে ছেড়ে দিলে তো কাল সকালে সবার চাকরি খাবে। সবাইকে জেলেও নিয়ে ছাড়বে।'

এদিকে সাংবাদিক জাহিদ হাসান রাতেই ১০/১২ জন সাংবাদিক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে নিয়ে আড়ং এলাকায় হাজির হন। বেশি লোকজন দেখে পুলিশ গাড়ি টান দেয়, কিন্তু আড়ং মোড়ে সিগনালে পড়ায় গাড়িটি থেমে যায়। এরপর জাহিদ হাসান ও তার সঙ্গীরা রাব্বিকে উদ্ধার করে।

রাব্বির বন্ধু ওসমান গণি জানান, প্রথমে পুলিশের কাছে গেলে তারা বলেন, ওর কাছে ইয়াবা ছিল, হেরোইন ছিল। তল্লাশি করে তাকে গাড়িতে তোলা হয়েছে। তাকে থানায় নিতে চাইলে তিনি বাকবিতণ্ডা করেন। এরপর আপনাদের ফোনে ডাকেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা পুলিশকে বলেন, 'এতোকিছু পেয়েছেন, তো তাকে থানায় নিয়ে মামলা দেন। এ কথার পরও পুলিশ আসাদ গেট এলাকা থেকেই তাকে নিয়ে যাচ্ছি- এরকম একটি লিখিত নিয়ে ছেড়ে দেন গোলাম রাব্বিকে।

রোববার সকাল ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর থানায় যান রাব্বি ও তার বন্ধুরা। সেখানে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগের একটি কপি মোহাম্মদপুর জোনের এসি ফারুকের কাছেও দেন। তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকারের অফিসে গিয়ে তাকে না পেয়ে ফিরে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টি তদন্ত শেষে জানানো হবে।

http://www.ittefaq.com.bd/capital/2016/01/10/50729.html

Post a Comment

Previous Post Next Post