মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শত শত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী শহরে নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হচ্ছে। এতে গোটা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে শত শত বিক্ষোভকারী শহরের রেলস্টেশন অবরোধ করে সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারা রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়। এতে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মাঈনুল হোসেন জানান, বিক্ষোভকারীরা রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দিয়েছে। তারা বেশ কয়েকটি সিগন্যাল ভেঙে ফেলেছে। তারা আমার কার্যালয়ে এসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সিগন্যাল বোর্ড, টেলিফোনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট পথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এর ফলে আখাউড়ার বাঘাচং স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, আযমপুরে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ও ভৈরবে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস আটকা পড়ে আছে বলেও জানান সহকারী স্টেশন মাস্টার।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে কয়েক হাজার যাত্রী আটকা পড়েছে।
এর আগে ভোররাতে ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমান (২২) নিহত হন। তিনি শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় আগামীকাল বুধবার সারা দেশে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষে মাওলানা মোবারক উল্লাহ এ হরতালের ঘোষণা দেন।
শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে হরতালের সমর্থনে মাইকিং করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ারা জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে মাদ্রাসাছাত্ররা। যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাটও। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন।
আজ সকাল থেকে এলাকায় দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
সদর থানার সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন বোস বলেন, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে। তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
গতকাল সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটের বিজয় টেলিকমের মালিক রনির সঙ্গে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) এক ছাত্রের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে এতে ছাত্রলীগ ও এলাকাবাসী যোগ দেয়। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আজ ভোরে মাদ্রাসাছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হতে শুরু করে।