নববধূকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে আ’লীগ নেতার ছেলে ||

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় বরের গাড়ি থেকে অপহরণ করে ববধূকে ধর্ষণ করেছে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন।

মঙ্গলবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালতে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন অপহৃত নববধূ।

নববধূ জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, “আমার সঙ্গে অপহরণকারী মোফাজ্জলের প্রেমের কোন সম্পর্ক ছিল না। বড় ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে তাকে চিনতাম। তার চারিত্রিক অধঃপতনের কথা আগে থেকেই জানতাম। তাই তার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতাম। কিন্তু  সে আমাকে উত্ত্যক্ত করত। পরে বিয়ের দিন জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গাজীপুরের একটি বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে।”

জবানবন্দিতে নববধূ তাকে বরের গাড়ি থেকে তুলে নেয়ার পর কোথায় কোথায় রাখা হয়েছে এবং তাকে কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন।

জবানবন্দি দিতে নববধূকে আদালতে হাজির করার আগে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ধর্ষণের প্রমাণ সংক্রান্ত ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পরে জবানবন্দি  রেকর্ড শেষে আদালত নববধূকে তার বাবার জিম্মায় দিয়েছেন।

অপহরণকারী মোফাজ্জল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাতেম আলীর ছেলে।

গত শুক্রবার রাতে বরযাত্রী বহরে মোফাজ্জলের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে অস্ত্রের মুখে নববধূকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় সরকারদলীয় ৮-৯ জন সন্ত্রাসী।

রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের র্যা ব-১১-এর একটি দল গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার জামালপুর মীরপাড়ার সামছুল হকের বাড়ী হতে নববধূকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী মোফাজ্জলকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে নববধূকে অপহরণের ঘটনায় সামছুল হকের স্ত্রী হালিমা খাতুন আদালতে সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি আদালতকে জানান, তার ছেলের দোকান থেকে জিনিসপত্র নিত মোফাজ্জল। সে হিসেবে মোফাজ্জলকে তিনি আগে দেখেছেন।

যেভাবে নববধূ উদ্ধার
আড়াইহাজারের নোয়াগাঁও চৌধুরী বাড়ি থেকে রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর পুটিয়া গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পথে রসুলপুর থেকে নববধূকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়।

মোফাজ্জল (২৫),আলমগীর (২০) ও রাকিবসহ ৮-৯ জন সন্ত্রাসী ২টি সিএনজিযোগে এসে বরের সাথে প্রাইভেট কারে থাকা নববধূকে তুলে নিয়ে মাধবদীর দিকে চলে যায় তারা।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হলে নববধূকে উদ্ধারে নামে র্যা ব। তারা নববধূর বড়ভাইকে দিয়ে অপহরণকারী মোফাজ্জলের মোবাইলে কৌশলে যোগাযোগ করেন। এ সময় কনের ভাই মোফাজ্জলের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে বোনকে একনজর দেখার জন্য বিনিত অনুরোধ করে।

তখন মোফাজ্জল তাকে নরসিংদী জেলার পলাশ থানাধীন বাসষ্ট্যান্ডে যেতে বলে। র্যাবের সাজানো ফাঁদে এভাবেই অপহরণ চক্র পা ফেলে। র্যাবের টিম বড়ভাইকে নিয়ে সেখানে ওৎপেতে থাকে। অপহরণকারীরা বারবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা নরসিংদীর পলাশ থানার জামালপুর গুদারাঘাটে যেতে বলে বড়ভাইকে। 

গুদারাঘাট এলাকা থেকে মোফাজ্জলের সহযোগী সুজনকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে র্যা পব। তার স্বীকারোক্তি ও শনাক্তমতে রবিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে গাজীপুরের মীরপাড়ার সামছুল হকের বাড়ি হতে নববধূকে উদ্ধার করে র্যা ব।

এ সময় নববধূর লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার, চারটি মোবাইল ফোনসেট ও ১৫ হাজার টাকাসহ মোফাজ্জল ও সহযোগী রুবলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার মোফাজ্জলকে তিন দিন ও অন্য দুজনকে দুদিন করে রিমান্ড দিয়েছে।

আরো আসামিরা ধরা পড়েনি, নববধূর বাবাকে হুমকি
নববধূর বাবা জানিয়েছেন, তার মেয়েকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় মূল অপহরণকারী মোফাজ্জলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মামলার অপর আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই আসামিরা হলো- জামাল উদ্দিনের ছেলে আলমগীর, ইসমাইল মেম্বারের ছেলে রাকিব, ইব্রাহিমের ছেলে ইয়াছিন, ফারুকের ছেলে ফাহিম ও রাসেল।

নববধূর বাবার অভিযোগ, বিয়ের দিন বরের গাড়ি থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ করা সত্ত্বেও আড়াইহাজারের উপজেলার টেকপাড়া এলাকার জয়নাল, ইসমাইল, সোরহাব ও হাতেম আলী এবং নোয়াগাঁও এলাকার তোফাজ্জল মামলা তুলে নিতে তাকে হুমকি দিচ্ছে। না হলে তার বাড়িঘরে আগুন দেবে। এতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

(সংবাদটি গুরুত্বপুর্ণ মনে হলে পেইসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)

Post a Comment

Previous Post Next Post