জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ ||

জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের এমন পর্যবেক্ষণকে নজির রেখে জামায়াতের সব ধরণের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেতা নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এমন এক সময় এধরনের নির্দেশনা এল, যখন জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের দাবিতে সোচ্চার।

বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে জামায়াতের লগ্নি রয়েছে বলে মনে করা হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির আন্দোলনকারীরা বলে আসছে, এর মাধ্যমে দলটি আর্থিকভাবে পুষ্ট হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের দিন রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে পাঠানো একটি চিঠিতে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রিজওয়ানুল হুদা স্বাক্ষরিত ওই চিঠির সাথে দুই পাতার একটি বিবরণী ও ২১৬ পাতার একটি সংযোজনীও পাঠানো হয়েছে।

চিঠির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান জানান, সরকার যখন নির্দেশ দিয়েছে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। তবে চিঠি ও তার সাথে যেসব তথ্য-উপাত্ত অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে, প্রথমে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এসব ধরনের ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতটা করার সুযোগ আছে, সেগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে।
গণজাগরণ মঞ্চ জামায়াত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের দাবি জামায়াতের এসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এনে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলেও কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, তা স্পষ্ট করেনি।

ইসলামী ব্যাংক জামায়াত সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘স্লোগান ৭১’ এর তালিকায়। বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

এরআগের মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা আবু নাসের মোহাম্মাদ আবদুজ জাহের মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন বলে ইসলামী ঐক্যজোটের দাবি।

তার আগে পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী। তিনি ব্যাংকটির পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একই সাথে তিনি ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সদস্য ছিলেন। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নানও জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

এছাড়া জামায়াতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, রোগ নিরূপণী কেন্দ্র, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়। ব্যাংকের পাশাপাশি কয়েকটি বীমা প্রতিষ্ঠানকেও জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বলে মনে করা হয়।

এছাড়া কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম, পরিবহন কোম্পানি এবং কয়েকটি আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সারাদেশে অসংখ্য কোচিং সেন্টার ও স্কুল-কলেজও জামায়াতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বলে চিহ্নিত।

http://www.bdfirst.net/newsdetail/detail/200/171465

Post a Comment

Previous Post Next Post