গ্রেফতার ও ঘুষ বাণিজ্যে ব্যস্ত সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি গৌছুল ||

টাকার নেশায় মুফতি মাওলানার বিরুদ্ধেও গণধর্ষণের মিথ্যা মামলা !

২৮ অক্টোবর ২০১৫,
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট :: গ্রেফতার ও ঘুষবণিজ্যের হঠাৎই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি গৌছুল হোসেন। তার বিরুদ্ধে এখন ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পাহাড়। তিনি এ থানায় যোগদানের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে পৌঁছে। উল্টো মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, চোরাচালানি, ছিনতাকারীসহ নানা অপরাধে জড়িত সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ৫ জানুয়ারির পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিরোধী রাজনীতিকদের গ্রেফতারের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার অর্থ লিপ্সার কারণে থানার সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। গত ২-৩ মাসে থানা এলাকায় ৫টি দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা আর জুয়া খেলা যেন ওই এলাকার স্বাভাবিক চিত্র। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এ অবস্থায় ২ মাস আগে থানায় অনুষ্ঠিত ওপেন হাউস ডেতে এসএমপি কমিশনারের কাছে এলাকাবাসী এসব চিত্র তুলে ধরেন।

এ সময় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে বিমানবন্দর থানাকে আলটিমেটাম দেন কমিশনার কামরুল আহসান। তবে এসএমপি কমিশনারের এ আলটিমেটাম পাত্তা না নিয়ে অর্থ বাণিজ্যের নেশায় ডুবে আছেন ওসি গৌছুল হোসেন। এছাড়াও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা রেকর্ড করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

তার ঘুষ বাণিজ্য থেকে সাধারণ মানুষ এমনকি মুফতি, হাফেজ, মাওলানারাও রক্ষা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি কয়েকজন আলেম-উলামার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো গণধর্ষণ মামলা রেকর্ড করে আলোচনায় এসেছেন তিনি।

এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ নগরজুড়ে চলছে তোলপাড়। হয়রানির শিকার এমনই একজন মো. শরিফ উদ্দিন সোমবার বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এসএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

আবেদনে ওসি গৌছুল ছাড়াও থানার ওসি (তদন্ত) মঞ্জুরুল আলম ও এসআই জহিরুল হকসহ ওসির বিভিন্ন অপকর্মের সহযোগী ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি বিদেশ পাঠানোর নাম করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠে জনৈক ইব্রাহিম জাহিদের বিরুদ্ধে। টাকা দেয়ার জন্য মাস দেড়েক আগে পাওনাদাররা নগরীর উপশহরের তার বাসা ঘেরাও করলে জামায়াত-শিবির হামলা চালিয়েছে প্রচার করে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নিয়ে আসা হয় ফোন করে। ফোন পেয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এসে আলেম-উলামাদের ওপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আসল ঘটনা বুঝতে পেরে ইব্রাহিম জাহিদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ইব্রাহিম জাহিদ জামিনে বেরিয়ে এসে পাওনাদারদের বেকায়দায় ফেলতে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেন। যার ধারবাহিকতায় পাওনাদার ৫ মুফতি, হাফেজ, মাওলানার বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট থানায় একটি সাজানো ধর্ষণ মামলা করেন। এয়ারপোর্ট থানার ওসি গৌছুলের পরামর্শে টাকার বিনিময়ে জোগাড় করা হয় মামলার বাদী। মোটা অংকের টাকায় বিনা তদন্তে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রতারক চক্রকে বাঁচাতে ওসি গৌছুল মোটা অংকের টাকায় গণধর্ষণ মামলাটি রেকর্ড করেন।

ওই মামলার বাদী ছামিয়া আক্তার জকিগঞ্জের সোনাসার গ্রামের মৃত আবদুল খালিকের কন্যা বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ওই নামে কোনো গ্রাম নেই। মামলার প্রধান আসামি কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ গ্রামের রফিক উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র লায়েছ উদ্দিন একজন হাফেজ এবং মাওলানা। দ্বিতীয় আসামি মঈন উদ্দিন ওসমানীনগর থানার কুরুয়া বাজার দৌলতপুর গ্রামের ক্বারী ফরিদ উদ্দিনের পুত্র। তিনি হাফেজ এবং মাওলানা। ৩নং আসামি ফুজায়েল আহমদ জকিগঞ্জের নিয়াগুল গ্রামের মৃত আবদুস সোবহানের পুত্র। তিনি ঢাকা মালিবাগ কওমি মাদরাসা থেকে সর্বাধিক মার্কস পেয়ে মুফতি ডিগ্রিধারী। ৪নং আসামি মো. শরিফ উদ্দিন জকিগঞ্জের খলাদাপনিয়া গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের পুত্র। শরিফ নগরীর একজন ব্যবসায়ী এবং বিটিসিএলের ঠিকাদার। ৫নং আসামি মো. ফখরুল ইসলাম কানাইঘাট উপজেলার মজিদপুর গ্রামের মৃত মো. মতিউর রহমানের পুত্র। তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগকারী এবং হাফেজ মাওলানা মঈন উদ্দিনের দায়ের করা মামলার সাক্ষী।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওই ৫ আসামি মিলে এয়ারপোর্ট থানা সংলগ্ন হিলসাইট হলিডে হোম নামক হোটেলে ছামিয়া আক্তারকে একটি কক্ষে আটকে রেখে গণধর্ষণ করেন। তবে মামলার আসামি মাওলানা লায়েছ উদ্দিন, মাওলানা ফুজায়েল আহমদ, মাওলানা মঈন উদ্দিনসহ আসামিদের দাবি তারা সবাই পাওনাদার। দীর্ঘদিন থেকে নগরীর উপশহরের স্প্রিং টাওয়ারের বাসিন্দা ও জিন্দাবাজারের ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটির ফ্রিল্যান্স ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক ইব্রাহীম জাহেদের কাছ থেকে পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করে আসছিলেন। এর আগে ইব্রাহীম জাহেদ ভুয়া ভিসা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর থেকে দফায় দফায় পাওনাদাররা মিলে ইব্রাহিম জাহেদের বাসা ঘেরাও করেন। প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৭-৮টি মামলাও রয়েছে। মূলত ইব্রাহীম জাহেদ ও তার সহযোগীরা এয়ারপোর্ট থানার ওসি গৌছুল হোসেনকে ম্যানেজ করে কোনো প্রকার তদন্ত না করেই মিথ্যা ধর্ষণ মামলা রেকর্ড করিয়েছেন। যার এজাহারের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।

গণধর্ষণের স্থান হিলসাইড হলিডে হোমের জেনারেল ম্যানেজার মো. আলম খান জানান, ছামিয়া আক্তার হোটেলে প্রবেশের সব নিয়ম মেনে একটি ছেলেকে নিয়ে হোটেলে উঠেন। পরিচয় দেন তারা স্বামী-স্ত্রী। ছামিয়ার সঙ্গে যে ছেলেটি ছিল, সে ছিল শার্ট-প্যান্ট পরা ক্লিন সেভ করা এক যুবক। কানাইঘাট থেকে ডাক্তার দেখানোর জন্য সিলেটে এসেছে বলে কক্ষ ভাড়া নেন। এরপর ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর চলে যান। তাদের প্রবেশ এবং বের হয়ে যাওয়ার ফুটেজ হোটেলের সিসি টিভিতে ধারণ করা আছে।

আলম খান বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভুয়া, তাতে সন্দেহ নেই। ছামিয়া বেগমের সঙ্গে কোনো হুজুর ওই দিন হোটেলে অবস্থান করেননি। তিনি থানা পুলিশকে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখিয়েছেন বলে জানান।

এদিকে ছামিয়া আক্তার দাবি করেন, হুজুররা মিলে তাকে গণধর্ষণ করেছেন। তবে তাকে ওসমানী হাসপাতাল থেকে মামলা দায়েরের জন্য রেফার্ড করা হয়নি। থানায় গিয়ে তিনি মামলা করেন। এছাড়া, মামলা রেকর্ডের ব্যাপারে এয়ারপোর্ট থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। থানা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে ওই হোটেলের অবস্থান। অথচ, কোনো প্রকার তদন্ত না করেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি গৌছুল হোসেন বলেন, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলার এজাহার পাওয়ামাত্র আমি রেকর্ড করতে বাধ্য। মামলা রেকর্ডের পর তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠা এবং গ্রেফতার বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার থানায় কাউকে গ্রেফতার করা হলে তার ঠিকানা একমাত্র আদালত।

সূত্র : http://www.newsmirror24.com/news/details/Sylhet/13564

Post a Comment

Previous Post Next Post