ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে নাস্তিব্যবাদের প্রসার ঘটানো হচ্ছে: আল্লামা শফী ||

ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আড়ালে মূলতঃ নাস্তিব্যবাদের প্রসার ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ও দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মহাপরিচালক শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফী।

‘ইসলামি ব্যাংকিং একান্তই একটি ফ্রড বা প্রতারণা। ভুলের উপর নির্ভর করে ইসলামী ব্যাংকিং হচ্ছে, সুদ মানবিক চিন্তাধারার উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ভুলের উপর ভিত্তি করেই ইসলামিক ব্যাংকিং হয়েছে’  অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।

হেফাজত আমীর আরো বলেন, পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারার ২৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুদ সম্পর্কে বলেছেন, “যারা সূদ খায়, তারা ক্বিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মত। অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সূদ হারাম করেছেন। আরা যারা সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে”। এর পরের আরো বেশ কয়েকটি আয়াতে সুদের অপকারিতা ও নিষিদ্ধতা সম্পর্কে কুরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

হেফাজত আমীর বলেন, পবিত্র কুরআনের এই নির্দেশনা মতে অর্থমন্ত্রী সুদ ঘুষের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে ও অপব্যখ্যামূলক বক্তব্য দিয়ে মূলতঃ নিজেকে জাহান্নামী ও শয়তানে আসর করা মোহাবিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী এর আগে ঘুষ ও দুর্নীতির সপক্ষে সাপাই গেয়ে বক্তব্য দিয়ে ইসলাম অবমাননা ও অনৈতিকতার পক্ষ নিয়ে জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরী করেছিলেন। একের পর এক ইসলাম ও নৈতিকতার বিরুদ্ধে তিনি বক্তব্য দিয়ে যাবেন, এটা মেনে নেয়ার আর কোনই সুযোগ নেই। এটা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। যাচ্ছে তাই ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে কাউকে পার পেতে দেওয়া হবে না।
হেফাজত আমীর সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার ও কঠোর শাস্তি দাবী করে বলেন, হিজাব, বোরকা, সুদ-ঘুষ ও দুর্নীতি নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য দেয়ার অপরাধে এদের বিরুদ্ধে সরকারকে অনতিবিলম্বে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় তৌহিদী জনতার ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই আল্লাহ-রাসূলের অবমাননা ও ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য এদেশের আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা চলতে দিবে না।

তিনি বলেন, রাশিয়ার মতো একটি অমুসলিম রাষ্ট্রে গত জানুয়ারী মাসে যেখানে আইন করে মানবতার মুক্তির দূত রাসূল (সা.)এর কার্টুন ছাপানোকে অবৈধ ও বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত আমাদের দেশের মন্ত্রীরা একের পর এক ইসলামের বিরুদ্ধে জঘন্য বিষোদ্গার করে বক্তব্য দিবেন, এটা ভাবাই যায় না।

বর্তমান সরকারের সাবেক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ইসলাম ও নৈতিকতা বিরোধী বক্তব্যের উল্লেখ করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভা ও কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে এত ইসলাম বিদ্বেষী ও নাস্তিক্যবাদি কী করে স্থান পেল, তা জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরী করেছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি বাতিল এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা ও জোর-জুলুমের বিস্তারের পাশাপাশি রাসূল অবমাননা ও ইসলাম বিরোধী বক্তব্য গত কয়েক বছরে আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। তিনি ইসলাম বিদ্বেষীদের ব্যাপারে গণসচেতনতা তৈরীর জন্য দেশের আলেম সমাজ ও হেফাজতের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post