নোয়াখালীর কয়েকটি উপজেলায় বেশ দাপটের সাথে চলছে মাদক ব্যাবসা সেই সাথে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেগমগঞ্জের চৌমুহনী রেল লাইনের ফুটপাত ঘুরে দেখা যায় সন্ধার পর দোকান গুলাতে অবাদে চলে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ, গাঁজা সহ (দোকানের সামনে কাপড় বুঝলিয়ে ভেতরে চলে ডি, ভি ডি, প্লেয়ারে পর্ন ভিডিও প্রদর্শন) চৌরাস্তা, কলেজ রোড়, কবিরহাট উপজেলার ধাঁনসিঁড়ি ইউনিয়ন, সুবর্নচর উপজেলার চরবাটা খাসের হাট বাজার, ভূঁইয়ার হাট বাজার, হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাট, রামগতি উপজেলার রামগতি বাজার, সদর উপজেলার সোনাপুর রেল স্টেশন এসব জায়গায় প্রতিদিন অবাদে চলে মাদক বিক্রি ও সেবন এসব জায়গায় ঘুরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়। যারা এ ব্যাবসার সাথে জড়িত তারা খুব ক্ষমতাধর তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলেনা।
এ ব্যাবসায় শীর্ষে রয়েছে চৌমুহনী ও চাটখিল উপজেলা, চাটখিল উপজেলা ঘুরে দেখা যায় অলিতে গলিতে মাদকের অবৈধ রমরমা বাণিজ্য। সেই সাথেপাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যাও। এদের মধ্যে অধিকাংশই বয়সে তরুন। মাদকে নেশাগ্রস্ত উঠতি বয়সী তরুন ও যুবকরা নেশার টাকা যোগাড় করতে এলাকায় চুরি ডাকাতি, ছিনতাই, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন প্রকার অপরাধ এবং অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা। মাদকের কারণে দাম্পত্য কলহ ও বিয়ে বিচ্ছেদের মত ঘটনাও ঘটছে অহরহ। চাটখিল গত ছয়মাস অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা প্রকার মাদকসহ ৩৫ জনকে আটক করেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন স্পটে অবাধে মাদক ব্যবসা চলছে।
চাটখিল উপজেলা উত্তরে কুমিল্লায় ও চাঁদপুর পশ্চিমে লক্ষীপুর ও রামগঞ্জ দক্ষিণে চন্দ্রগঞ্জ ও পূর্বদিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ার কারণে কুমিল্লা, লক্ষীপুর ও সোনাইমুড়ী উপজেলার ওপর দিয়ে সহজেই ব্যবসায়ীরা মাদক পৌছে দেয় স্পটগুলোতে। চতুর মাদক ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দিন থেকে চাটখিল পৌর শহরের মোহাম্মাদিয়া হোটেল প্রাঙ্গনে মনগাজী বেপারী বাড়ী, উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গন, চাটখিল উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্স ক্যাম্পাস, খোকন ভিডিও গলি, হালিমাদিঘীর পাড়, ভাওর মনতাজ মুহুরীর মার্কেটের পেছনে, বদলকোট রোডে শাপলা বোডিং, বদলকোট বাজার, ইসলামপুর বাজার, বানসা বাজার, পাল্লা বাজার, শোল্যা বাবু মার্কেট, জনতা বাজার, ছয়ানী ট্রাফিক মোড়, চাটখিল হাওলাদার বাড়ীর দরজা, খিলপাড়া পূর্ব বাজার, মল্লিকাদিঘীরপাড় বাজার, নয়নপুর সিএনজি ষ্টেশন, দশঘরিয়া বাজার, দশঘরিয়া পশ্চিম খালপাড়, শাহজাহান হাজীর নতুন বাড়ী, পরকোট হাধার বাড়ী, কালিতলা, সনাগাজী বাড়ীর দরজা, বিনাতলা, বাইশসিন্দুর বাজার, শাহাপুর ও সোমপাড়া বাজার, মানিকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকাসহ ভারতীয় ফেনসিডিল ও বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ, হিরোইন, গাঁজার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে মরন নেশা ইয়াবা ও ওরফে বাবা ট্যাবলেট সহ যৌন উত্তেজক ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের ট্যাবলেট ও পানীয়। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের আনাগোনা। মুঠো ফোনে মিসকল দিলেই গ্রাহকের কাছে পৌছে যায় কাঙ্খিত মাদক। চাটখিল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রকার মাদক সহ ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটকৃতদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও মাদক সেবনের দায়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবরাউল হাছান মজুমদার ২০ জনকে জরিমানা এবং ৩৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। ওসি জানান, গত কাসার ১৪ জুন থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে ১৯০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৬ কেজি গাঁজা, ৫০ বোতল ফেনসিডিল, ৩০ লিটার মদ, ৬৩ বোতল বিদেশী বিয়ার রয়েছে। একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন- পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের ধরতে মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে চুনোপুটিদের ধরতে পারলেও রাঘববোয়ালরা থেকে ধরাছোয়ার বাইরে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও মাদক সেবনের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এ ব্যাপারে চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর কবির ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মাদকের কুফল সম্পর্কে এলাকায় ও গ্রামে গ্রামে গনসচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারনা না থাকায় এর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এক্ষেত্রে অভিভাবক এলাকাবাসী ও তরুন সমাজকে মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তবেই সমাজে মাদকের প্রভাব কমে আসবে। চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: নাসিম উদ্দিন বলেন মাদক মুক্ত করতে পুলিশী অভিযান অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক ব্যবাসায়ী কিংবা সেবনকারীদের সঙ্গে যদি চাটখিল থানা পুলিশের কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা থাকে কিংবা প্রমান পাওয়া যায় এক্ষেত্রে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় ইউ,পি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সচেতন নাগরিকের দৃষ্টি আর্কষন করেন।গুনীজনদের সাথে এব্যাপারে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে সরাসরি বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনায়ের প্রতি জোর দাবী জানান।
নোয়াখালী প্রতিনিধি/এম এ আর/দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ০২ জানুয়রি ২০১৪।