দাগনভূঞা: ফেনীর দাগনভূঞায় নলদিয়া মেলাকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও একটি সংঘবদ্ধ চক্র মেলা আয়োজনের তোড়জোড় শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে সংঘবদ্ধ চক্র ফেনীর সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর মৌখিক অনুমতি রয়েছে বলে এলাকায় প্রচার করছে। এতে প্রতিবাদের ইচ্ছে থাকলে সাংসদের নাম উঠায় এলাকাবাসী ভয়ে তটস্থ।
জানা যায়, প্রতি বাংলা সনের ১ মাঘ থেকে দেওয়ান হাফেজ মোঃ ফকির আবদুর রশিদ (রহ.) এর ওফাত দিবস উপলক্ষে নলদিয়া মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি বলে একটি বিশস্ত সূত্রে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, আধ্যাত্মিক পুরুষ দেওয়ান ফকির আবদুর রশিদ (রহ.) এর ওফাত দিবস উপলক্ষে ফেনী ও নোয়াখালী জেলার মিলনস্থল দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বছরের ১ মাঘ থেকে সপ্তাহব্যাপি এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। বিগত ১৯৯৬ সালে মেলায় সন্ত্রাসী হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই, ব্যবসায়ীদের মালামাল লুট, জুয়া, অশ্লীল নৃত্য ও মাদক, চুরি ডাকাতিসহ নানা অপরাধ সংঘটিত এবং দু’জেলার বাসিন্ধাদের বিরোধের জের ধরে গত কয়েক বছর প্রথমে জেলা প্রশাসন মেলার অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে কখনো বস্ত্র ও তাঁত মেলা আবার কখনোবা কাঠ ও ফার্ণিচার মেলা নামে এ মেলার অনুমতি নেয়। এতে করে তাদের কৌশলে বার বারই পা দেয় দু’জেলার প্রশাসন। অপরদিকে গত ২০১৩ সালে ২০ জানুয়ারী রাতে তৎকালীন মেলা কমিটির কথিত সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস প্রকাশ সুরুজের ছেলে সজীব ও তার ৬ সহযোগীকে র্যাবের একদল কর্মকর্তা বিপুল পরিমান মাদক সহ আটক করে। পরেরদিন র্যাবের ডিএডি আলী হায়দার খান বাদী হয়ে দাগনভূঞা থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি ফেনী সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ বিচারাধীন রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা গেছে, অষ্টাদশ শতাব্দির শেষের দিকে আধ্যাত্মিক পুরুষ ওলিয়ে কামেল হাফেজ দেওয়ান ফকির আবদুর রশিদ (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আগমন করেন। পরবর্তীতে তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করা শুরু করেন এবং তার দীক্ষায় বহু মানুষ সেখানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কালক্রমে তিনি ইন্তেকাল করলে তার ভক্ত মুরিদানরা বিগত ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মত বার্ষিক ওরস মাহফিলের আয়োজন করে। ওরশ মাহফিলকে ঘিরে সেখানে দোকান পাট বসতে থাকে এবং দু’তিন বছরের মাথায় সেটি মেলায় রূপান্তরিত হয়। শুরুতে ওরসকে ঘিরে দোকান পাট ও মেলার উৎপত্তি ঘটলেও বর্তমানে ওরস আয়োজন নেই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষেই এ মেলা হোক তা চায়না। কেননা মেলাকে ঘিরে সেখানে আইন শৃংখলার অবনতির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপ বেড়ে যায়। তাছাড়া সামনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতির আশংকা দেখা দেয়।
এদিকে মেলার স্থানে চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোজাহেরুল ইসলাম সোহেল জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মেলার আয়োজনে অঘটন গঠতে পারে। উপরোন্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটবে।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা খানম মেলার বিষয়ে কিছুই জানেনা বলে জানান।
দাগনভূঞা থানার পরিদর্শক (ওসি) আসলাম উদ্দিন জানান, এবিষয়ে তিনি অবগত নন।