শহীদ স্মরণে স্মৃতি চারন ............

শহীদ রাশিদুল হক রান্টুর বাবার কথা

বাবার সাথে ছোটবেলা থেকেই মসজিদে যাওয়ার অভ্যাস ছিলো রান্টুর। ক্লাস ফাইভ থেকেই নিয়মিত রোজা রাখতো। আমি কখনো অসুস্থ্য থাকলে খেতে না পারলে সেও খেত না। বাবার হাত নিজে ধুয়ে দিত, তারপর একসাথে খেত। মায়ের সাথে খুব মধুর সম্পর্ক ছিলো তার। মা অসুস্থ্য হলে বাড়ির সমস্ত কাজ নিজেই করতো। কোন কাজ দিলে তা সবসময় দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতো। কখনো জিদ হঠকারী আচরণ করতো না। ঈদে ভালো পোশাক দিতে না পারলে কখনো রাগ করতো না সে। বোনদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি। আন্দোলনের সব কথা বোনদের সাথে শেয়ার করতো।

খাবার নিয়ে কোন বাছ বিচার ছিলো না। বাড়িতে সাধারণ খাবার হলেও কোন দিন রাগ করেনি। আমার পায়ে ইনফেকশন জনিত ঘা হয়েছিলো- পরে তা অপারেশন করা লাগে। সেই সময় রাশেদ বাবার সমস্ত সেবা করে। নিজ হাতে ঔষধ খাওয়ানো, গোসল করানো সব কাজ সেই করতো।
তার ২২ বছরের জীবনে প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ কখনো আমার কানে আসেনি। সবসময় সংগঠন নিয়ে পেরেশানি থাকতো। একদিন তার গায়ে প্রচন্ড জ্বর, তবুও উপশাখা সভাপতি সাথী বৈঠক ডাকলে সে হাসতে হাসতে প্রোগ্রামে যায়।
সংসার চালাতে একটা টেইলার্সে দর্জির কাজ নেয় সে। একদিকে কাজ অন্যদিকে সংগঠন তার উপর অভাবের সংসার। তবুও হাসিমুখে কাজ চালিয়ে যেত সবদিকে, অবহেলা ছিলো না।
খেলাধুলায় বেশ ভালো পারদর্শিতা ছিল রান্টুর। পর পর আন্তঃওয়ার্ড ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। তাছাড়া ফুটবল ও ক্রিকেটেও ভালো খেলতো।
শহীদ হবার দিন দুপুর ২টায় সূরা বাকারা ১৫৩-১৫৭ আয়াতের উপর কুরআন ক্লাস পরিচালনা করে রান্টু। শহীদি তামান্না বুকে নিতে সকলকে আহবান জানায় রান্টু। যে সুধা সে নিজেই পান করে নজির সৃষ্টি করে গেল।
সেদিন দুপুরের খাবার রান্না করতে দেরি হলে মাকে বলে তাড়াতাড়ি খেতে দাও। তার মা নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। মা তাকে মিছিলে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিলে মাকে বলে জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। সাধারণ মৃত্যুর চেয়ে শহীদি মৃত্যু অনেক উত্তম।
দ্বীনের পথে আমার সন্তান জীবন দিয়েছে এতে আমার কোনই দু:খ নেই। দুনিয়ার বুকে এই খুনের বিচার না হলেও আখিরাতে হবে এই বিশ্বাস নিয়ে আজো প্রহর গুণছি। শহীদের পিতা হিসেবে আমি গর্বিত। আমার বিশ্বাস আমার ছেলেকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।

উৎস: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=721973297876229&id=100001906953415

Post a Comment

Previous Post Next Post