দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে দুটি বই জমা দিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। বই দুটি হল কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রণলায় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র এবং পিরোজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত পিরোজপুর জেলার ইতিহাস । আজ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বেঞ্চে সাঈদীর আপিল আবেদন শুনানীর সময় এ বই বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান। তিনি বলেন, এ বই দুটিতে পিরোজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের বিবরন রয়েছে এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে স্বাধীনতা বিরোধীদের নামও রয়েছে। কিন্তু বই দুটির কোথাও সাঈদীর নাম নেই। সাঈদী যদি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে এ বই দুটিতে অন্তত কোথাও না কোথাও সাঈদীর নাম থাকত।
তিনি বলেন, পিরোজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামক বইতে পিরোজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ননার পাশপাশি স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, শান্তি কমিমিটির লোকজনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোথাও সাঈদীর নাম নেই। এমনিক এ বইয়ে পিরোজপুর জেলার কৃতি সন্তানদের নামের যে তালিকা রয়েছে সেখানে সাঈদীর ছবিসহ তার পরিচিতি রয়েছে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন, মতিয়া চৌধুরীসহ আরো অনেকের নাম রয়েছে। এ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০৭ সালে যখন কোন রাজনৈতিক সরকার ছিলনা দেশে। তাছাড়া বইটি যারা সম্পাদনা করেছেন তাদের মধ্যে পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার জামালুল হক মনুসহ অনেক বড় বড় মুক্তিযোদ্ধরা জড়িত ছিলেন। এখানেও সাঈদী সাহেবের নাম নেই।
এসময় বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, মাওলানা সাঈদী যদি ১৯৭১ সালে কিছু করত তাহলে এ দুটি বইয়ে অবশ্যই তার নাম থাকত। এটা খুবই সিগনিফিকেন্স (তাৎপর্যপূর্ণ) একটা বিষয়। এছাড়া পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইয়ে পিরোজপুরের কৃতি সন্তানদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। এটিও খুবই সিগনিফিকেন্স। বইটি সম্পাদনার সাথে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নাম রয়েছে। তিনি জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এটাও ইমপরটেন্ট বিষয়।
এসময় অপর বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইয়ে জামায়াতের সম্পর্কেও আলোচনা রয়েছে। সেখানেও সাঈদী সাহেবের নাম নেই। অথচ দানেশ মোল্লা সেকেন্দার শিকদার এদের নাম বারবার এসেছে। কিন্তু সাঈদী সাহেবের নাম একবারও আসেনি।
এসময় বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বই থেকে কয়েকটি লাইন পড়ে শুনিয়ে বলেন, এখানে জামায়াত নেতা কাউখালির মাওলানা আব্দুর রহিমের নাম রয়েছে। কিন্তু মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।
তখন অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি খুবই অথেনটিক একটি বই। মাওলানা সাঈদী সাহেব যদি ১৯৮১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী কাজের সাথে জড়িত থাকত তাহলে এ বইটি এবং পিরোজপুর জেলার ইতিহাস নামক বইটি যেখানে পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিবরন রয়েছে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের নামের তালিকা রয়েছে সেখানে কোথাও না কোথাও তার নাম থাকত।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ শুনানী গ্রহণ করেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তিপেশ শেষে ৭ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তিপেশ শুরু হয়েছে। শুনানী আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
আজ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষে ৭ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা উপস্থাপন করে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান প্রমানের চেষ্টা করেন পাড়েরহাট ৭ মে ঘটনার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেননা।
তিনি বলেন, ৬ নং অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৮ জন সাক্ষী হাজির করেছে কিন্তু তাদের কেউই পাড়েরহাট বাজারের নন। কোন ভুক্তভোগীকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি। যারা আসছেন তারা কেউ ভুক্তভোগী নন। তিনি বলেন সাক্ষীদের কারো বাড়ি টেংরাটিলা, কারো বাড়ি চিথলিয়া, কারো বাড়ি হোগলাবুনিয়া এবং কারো বাড়ি বাজার থেকে দেড় দুই মাইল দুরে অন্য গ্রামে।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৭ নং অভিযোগে বলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম খানের বাড়িতে মাওলানা সাঈদীর দেখানো মতে লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় ।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহাজাহান বলেন, সেলিম খানের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে কিন্তু তাকে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে হাজির করেনি। হাজির করেছে দূরের লোক। আট নং সাক্ষী বলেছেন তিনি খালের ওপারে দাড়িয়ে সেলিম খানের বাড়িতে ধোয়া উড়তে দেখেছেন। কাজেই তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেননা এবং তিনি যে বলেছেন সাঈদীর দেখানো মতে আগুন দেয়া হয়েছে তাও সত্য নয়।
শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।