স্পিকারের ক্ষমতায় ভাগ

সংসদ সচিবালয়ে স্পিকারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। তার ক্ষমতায় ভাগ বসিয়েছে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়। সংসদ সচিবালয়ে নতুন কোন পদ সৃষ্টি কিংবা লোকবল নিয়োগে এখন থেকে ওই দুই মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। আইন অনুযায়ী এসবের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে স্পিকারকে। সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সচিবালয় আইনের ১৯(১) উপধারায় বলা হয়েছে, স্পিকার সংসদ সচিবালয় কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারির সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবেন। কমিশনের সদস্য হিসেবে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা। একই ভাবে আইনের ৫(১) উপধারায় বলা হয়েছে, সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব স্পিকারের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সর্বশেষ সংসদ কমিশনের বৈঠকে এসব আইন উপেক্ষা করে স্পিকারের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। বৈঠকে নতুন পদ সৃষ্টি ও লোকবল নিয়োগের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে কমিটির মতামত নিয়ে স্পিকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। স্পিকার কমিশনের প্রধান হিসেবে গত ১০ই জুন সংসদ কমিশনের প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। এর আগে ১লা জুন কমিশনের ২৫তম বৈঠক হয়। কমিশনের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, একটি নতুন পদ সৃষ্টি ও আগের পদে এক কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে স্পিকারের ক্ষমতায় ভাগ বসানো হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে এটা করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, স্পিকারের ক্ষমতায় ভাগ বসিয়ে মূলত আইনের সরাসরি লঙ্ঘন করা হয়েছে। কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদার সহকারী এস্টেট অফিসারের একটি পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে স্পিকার বলেন, বিধি মোতাবেক ইন্সপেক্টর (এস্টেট) ৫ বছর চাকরি সমাপ্তির পর সহকারী এস্টেট অফিসার হিসেবে পদোন্নতির কথা। কিন্তু সহকারী এস্টেট অফিসারের একটিমাত্র পদে একজনকে আত্তীকরণ করার ফলে বর্ণিত কর্মচারী পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারির পদোন্নতির বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্পিকারের এ নির্দেশনাকে কার্যকর করতে সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্পিকারের ক্ষমতায় ভাগ বসিয়ে ওই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ১৯৯৮ সালের ২৯শে নভেম্বর ইন্সপেক্টর (এস্টেট) পদে যোগ দেন একরামুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের সমাজকল্যাণ বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৬ বছর ধরে তিনি একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৩ সালে তিনি সহকারী এস্টেট অফিসার ও ২০০৮ সালে এস্টেট অফিসার পদে যোগ্যতা অর্জন করেন। একটিমাত্র সহকারী এস্টেট পদে দৈনিক ভিত্তিক একজন কর্মচারীকে আত্তীকরণ করায় আটকে যায় একরামুল হকের পদোন্নতি। ১১ বছর ধরে তিনি পদোন্নতির আশায় রয়েছেন। বিষয়টি স্পিকারকে জানানো হলে তিনি নতুন পদ সৃষ্টির নির্দেশনা দেন। একই ভাবে মাহাবুবুর রহমান নামের সহকারী বিতর্ক সম্পাদককে সহকারী পরিচালক (প্রকাশনা)-এর ফিডার পদে ফেরতের সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের বৈঠকে। সেখানেও সিদ্ধান্ত কার্যকরে স্পিকারের ক্ষমতায় ভাগ বসিয়ে জনপ্রশাসন ও অর্থমন্ত্রণালয়কে সংযুক্ত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯৪ সালের ১৮ই মে প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদের নিজস্ব সচিবালয় থাকবে। সংসদ সচিবালয় সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তরের প্রশাসনিক আওতায় থাকবে না। একই গেজেটে সংসদ সচিবালয়ের কর্তৃত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব স্পিকারের ওপর ন্যস্ত থাকবে। স্পিকার তার এ দায়িত্ব স্বয়ং পালন করবেন অথবা বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোন কর্মকর্তার ওপর অর্পণ করবেন। তারা জানান, কমিশনের ২৫তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। একই ভাবে স্পিকারের ক্ষমতায় স্পষ্টভাবে ভাগ বসানো হয়েছে।

উৎসঃ মানবজমিন

Post a Comment

Previous Post Next Post