লক্ষ্মীপুরে প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকা

লক্ষ্মীপুর জেলার সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির পেছনে পুলিশের অনিয়ম ও পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ ওঠেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশকে কিছু লোকের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে জেলায় খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৪০ জন খুন হয়েছে সেখানে। এসব খুনের রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের ব্যর্থতা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। গত ১৬ মে শাহ মিজান শরিফুর রহমান পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে খুব একটা অভিযান চালায়নি জেলা পুলিশ।

স্থানীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরিফুল ইসলাম যখন লক্ষ্মীপুরের ভারপ্রাপ্ত এসপি হিসেবে কাজ করতেন তখন অপরাধীদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিতেন। আর এ জন্য তার নাকের ডগায় অপরাধ সংগঠিত হলেও তিনি কোনও অপরাধীদেরও ধরতেন না।
পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতির কারণে জেলায় ১২ টি অপরাধী গ্রুপের উত্থান হয়েছে এবং আর এ পরিস্থিতিতে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করা সহজ হয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লক্ষ্মীপুরের সাবেক এএসপি শেখ শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন। বলেন, “এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ।”

সদর উপজেলা নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লক্ষ্মীপুরের মেয়র আবু তাহেরের ছেলে সালাউদ্দিন টিপু পুলিশের সহযোগিতায় নির্বাচনে কারচুপি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবু তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহমুদুল করিম দীপুকে নির্বাচনী এলাকা থেকে বিতাড়িত এবং ভোটের আগের দিন ১৬৯ টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০০ টি দখল করে নেন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

সালাউদ্দিন টিপু এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “যখন সবাই আমাদের সমর্থন করছে তখন কেন আমরা এমন কাজ করতে যাবো?”
এ অভিযোগ সম্পর্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি এম আলাউদ্দিন বলেন, “নির্বাচনে অনিয়ম সম্পর্কে তিনি শুনেছেন, তবে সেটা খুব বড় আকারের হয়নি।” কারা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

লক্ষ্মীপুরের মেয়র আবু তাহের বর্তমানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই দায়ী করেছেন।

সর্বশেষ ইসমাইল হোসেন খোকনকে (৩৮) পুলিশ হেফাজতে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। খোকনের পরিবারের অভিযোগ তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নানা অভিযোগের মুখে জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ এএসপি শেখ শরিফুল ইসলাম, ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহিদ, আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন এবং কমলনগর পুলিশ সেটশনের ইন্সপেক্টর আব্দুর জব্বারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

খোকনের স্ত্রী নাহিদা আক্তার গত ১৫ জুন জেলা ডিবি পুলিশের এসআই আবুল বাশার, দাশেরহাট এসআই কামাল, সহকারী এসআই সারওয়ার, সদর পুলিশের এসআই জিল্লুর রহমান এবং খোকনের তিন ভাই আবুল কাশেম, আবুল হাশেম এবং মানিককে আসামি করে লক্ষ্মীপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এখন অভিযোগ ওঠেছে, পুলিশ তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং তাকেও তার স্বামীর ভাগ্য বরণ করতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে।

সদর পুলিশ থানার এসআই জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি খোকনকে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “প্রতিপক্ষের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সে মারা গেছে।”

এদিকে, নতুন এসপি দায়িত্ব নেওয়ার পরে স্থানীয় ও রাজনৈতিক নেতারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করেছিলেন। তবে গত কয়েকদিনে নির্বিচারে সেখানে গ্রেফতার ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহে পুলিশ প্রায় ৫০০ লোককে গ্রেফতার করলেও মূল অপরাধীরা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, “পুলিশ পদক্ষেপ নিয়ে এটা ভালো লক্ষণ। আমরা আশা করি পুলিশ হত্যাকারী ও মূল অপরাধীদের গ্রেফতার করবে।”

লক্ষ্মীপুরের এসপি শফিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আগে কী ঘটেছে আমি জানি না। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে থাকা সব অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে।”

পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি এ ধরণের অভিযোগের কথা শুনছেন।

চার পুলিশ কর্মকর্তার বদলি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা রুটিন অনুযায়ী হয়েছে। তিনিও খোকনকে একজন অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, যে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সে মারা গেছে।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন

Post a Comment

Previous Post Next Post