শিবির নেতার পা কর্তন, পায়ে কোপ দেয় কিবরিয়া গুলি করে ফয়সাল

সোমবার বেলা ১টা ৪৭ মিনিট। ব্যক্তিগত কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের সামনে আসি। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৈহিদ আল হাসান তুহিনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন আমাকে ধাওয়া করে। আমি আরবি বিভাগের অফিস কক্ষে পালালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সামনে আমাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে আসে। কলাভবনের দক্ষিণ গেটে গাছের বেদিতে আমাকে ঘিরে রাখে।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আরবি বিভাগের পরীক্ষার কক্ষ থেকে রাবি ছাত্রশিবিরের মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক জিয়া উদ্দিন বাবলুকে আটক করে পুলিশ। এ সময়ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে ঘিরে রাখে। তারা বলতে থাকে তোমাকে কিছু বলা হবে। তুমি আমাদের সাথে থাকো। বিকেল ৪টার দিকে তুহিন আমাকে বলে তুমি কৌশিকদের সাথে (ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে) যাও। আমি তাদের কাছে বন্দী থাকায় তাদের কথা মতো তাদের সাথে কলাভবনের দক্ষিণ গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি।
দক্ষিণ গেটে ঢুকতেই বাঁয়ে ভবনের সিঁড়ি। সিঁড়ির নিচে ওরা ১০-১২ জন আমাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে কাওছার আহম্মেদ কৌশিক (ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) আমাকে জিজ্ঞাসা করে তুই ছাত্রলীগের ওপর গুলি করেছিস। এ কথা বলার সাথে সাথেই চাপাতি দিয়ে আমার ডান হাতে কোপ দেয় কৌশিক। আমি মাটিতে লুটে পড়লে কৌশিকের হাত থেকে চাপাতি নিয়ে আমার ডান পায়ে কোপ দিয়ে গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে দেয় গোলাম কিবরিয়া (ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক)। সে সময়ও আমার কিছুটা জ্ঞান ছিল। শুধু ডান হাত এবং ডান পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছিলাম না। গোড়ালি থেকে পা বিচ্ছিন্ন করার সাথে সাথে প্রথমে আমার ডান পায়ে ও পরে বাম পায়ের উরুতে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু। গুলি করার পরে আমার আর জ্ঞান ছিল না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হামলায় মৃত্যুর দ্বার প্রান্ত থেকে বেঁচে আসা বিশ্ববিদ্যালয় নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শিবিরের এই নেতা আরো বলেন, ‘ওরা আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করার জন্য আটকিয়ে রাখে। কিবরিয়া, রুনু ও কৌশিক আমাকে আঘাত করলেও ওদের সহযোগিতা করে রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি, মানব উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক সাবরিন জামিল সুস্ময় এবং ছাত্রলীগ কর্মী রিনেট, মিজান ও ডন।
গত সোমবার বেলা ১টায় আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৪০৭ নম্বর কোর্সের পরীা শুরু হয়। বিভাগের পরীার্থী শিবির নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলু পরীায় অংশগ্রহণ করছেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে বেলা দেড়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এবং নগরীর মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই ভবনের সামনের আমবাগানের ভেতরে অবস্থান নেয়। পরীা চলাকালীন বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ৩০৪-খ নম্বর ক থেকে শিবির নেতা বাবলুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ঘটনার আগে বেলা পৌনে ২টার দিকে শিবিরের আরেক নেতা রাসেলকে বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের ভেতর থেকে আটক করে ছাত্রলীগ। দুই ঘণ্টা আটকিয়ে রাখার পর বিকেল ৪টার দিকে কলাভবনের মূল ফটকের সিঁড়ির নিচে রাসেলকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও গুলির করে তবিত করে ছাত্রলীগ। পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সোমবার বিকেল থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ পর্যন্ত রাসেলকে অপারেশন থিয়েটারে রাখা হয়। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ।
তিনি বলেন, তার ডান পায়ের গোড়ালি কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। দুই উরুতে গুলি করা হয়েছে। এ ছাড়া তার দুই পা, দুই হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাসেল বিশ্ববিদ্যালয় নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক ছাত্র এবং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিার্থী। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার শালিকা থানার তিথুলিয়া গ্রামে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খন্দকার।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়ব শাহরিয়া বলেন, ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা পুলিশের সামনেই যেভাবে বর্বরোচিত কায়দায় রাসেলের ওপর হামলা চালিয়েছে যা খুবই দুঃখজনক। অবিলম্বে এই নৃশংস হামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পূর্ব জোন) তানভীর আলম চৌধুরী বলেন, রাসেলের ওপর হামলাকারীদের ধরার চেষ্টা চলছে। আশা করি অতি দ্রুতই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ধরতে পারব।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত

Post a Comment

Previous Post Next Post