১টি নয়, ২টি করে সন্তান নিন- প্রধানমন্ত্রী

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’ এই স্লোগান বাদ দিয়ে পরিবারগুলোকে দুটি করে সন্তান নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের এই স্লোগান বাদ দিতে চাই। স্লোগানের শেষের অংশটুকু বাদ দিয়ে আপনারা প্রচেষ্টা চালান।

বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এ স্লোগান নিয়ে এগিয়েছে। তারা বৃদ্ধের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কিছু দিন আগে আমি দুটি দেশ ঘুরে এসেছি। সেখানেও একই অবস্থা।

বিশ্বব্যাপী তরুণ সমাজের অভাব দেখা যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের তরুণদের সারা বিশ্বের জন্য ওর্য়াকিং ফোর্স হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে বাংলাদেশের বেশি জনগণকে বার্ডেন মনে করেন। কিন্তু আমি সেটা মনে করি না। এসব জনগণকে প্রশিক্ষিত করে সম্পদে পরিণত করতে হবে।

উন্নত দেশগুলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নীতি পরিবর্তন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন থেকে তারা স্লোগান পরিবর্তন করে পরিবারগুলো যাতে ২/৩টি সন্তান নেয় সে চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

নিয়ম মেনে সেবা না দিলে চাকরি থাকবে না

ডাক্তাররা নিয়ম মেনে চিকিৎসা সেবা না দিলে চাকরি হারাতে হবে হুশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট সময় সেবা দিতে হবে। না হলে চাকরি স্থায়ী হবে না, প্রমোশনও হবে না, এমনকি চাকরি হারাতেও হতে পারে।

তিনি বলেন, জনগণকে সেবা দিতেই হবে। একজন ডাক্তার তৈরি করতে অনেক খরচ। এ খরচ আসে গরীব মানুষের পকেট থেকে। এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জনগণের সেবক হিসেবে এসেছি। সেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌছেঁ দিতে হবে।

স্বাস্থ্যখাতে জনবল বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ৬ হাজার ২২১ সহকারী সার্জন ও ১ হাজার ২০ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে।

দ্রুত এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলেন তিনি।

নতুন নির্মিত হাসপাতালগুলোতে দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালুর নির্দেশ দেন তিনি।

ডাক্তাদের বাড়ি কেন্দ্রীক নিয়োগ দিন

গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ডাক্তারদের গ্রামে রাখার বিষয়ে আবারো জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ডাক্তারদের গ্রামে থাকা নিশ্চিত করতে তাদের নিজ নিজ এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুশির কথা ডাক্তার গ্রামে থাকতে শুরু করেছে। তবে এখন থেকে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেওয়ার সময় যার যেখানে বাড়ি তাদের সেখানে নিয়োগ দিলে ভালো। তখন এলাকার মানুষই তাদের চাপ দিবে। তারা বলবে আমাদের রেখে ঢাকায় গিয়ে বসে থাকেন কেন? অটোমেটিক্যালি একটা চাপ সৃষ্টি হয়ে যাবে।

নার্স সংকট নিরসনে নীতিমালা শিথিল করুন দেশে নার্সদের সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নার্সদের তীব্র সংকট রয়েছে। এ অভাব নিরসনে প্রয়োজনে বয়স্কদের বয়স সীমার বিষয়টি শিথিল করে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এজন্য নীতিমালা কিছুটা শিথিল করা লাগলে তা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সরকার সহযোগিতা করবে।

নার্সদের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে নার্সদের পড়াশুনা ডিপ্লোমা পর্যন্ত ছিলো সরকার নার্সদের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রির ব্যবস্থা করেছে। তাদের মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছে।

বিভাগ ও জেলা হাসপাতালে বার্ন ইউনিট ও টেলিমেডিসিন

গ্রামীন জনগোষ্ঠীর উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলা হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছি। ইতিমধ্যে জনগণকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

বর্তমানে দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

হাসপাতালের শিশু বিভাগকে আরো গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভাগ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে শিশু বিভাগ আছে। এটিকে আরো বিশেষায়িত করতে হবে।

সুষম খাদ্য নির্বাচনে জনগণকে সচেতন করতে প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর খাদ্যের জন্য হাহাকার নেই। এখন মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।

উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আগত রোগীর হিসেব রাখুন

উপজেলা হাসপাতালগুলোতে্ আগত রোগীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন উপজেলা হাসপাতালে কত রোগী আসে সে হিসেব বের করুন। উপজেলার জনসংখ্যা অনুযায়ী কত লোক হাসপাতালে আসে সে হিসেবও বের করতে হবে।
৩৬ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সচিব এমএম নিয়াজউদ্দিনসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
উৎসঃ বাংলানিউজ২৪

Post a Comment

Previous Post Next Post