তুরস্কের ইসলামিক পার্টি থেকে জামায়াতকে পত্র

তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মরহুম প্রফেসর নাজমুদ্দিন এরবাকানের (রঃ) সাদেত পার্টি সবসময় বিশ্বের মুসলমানদের বিপদের সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষ করে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী করে বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রাণপুরুষ জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করার পর থেকে তার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন আমরা আছি বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে ইস্তানবুলের বিখ্যাত কাদিকয় ময়দানে প্রায় ১ লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে বিশাল এক জনসভা আয়োজনের মাধ্যমে তারা তুরস্কসহ সারাবিশ্বের মুসলমানদের সামনে তুলে ধরেন বাংলাদেশের মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ, তারা জুলুম-নির্যাতনের শিকার। এরপর গতবছর ১৪ জনের প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে সাড়া ফেলে দেন। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার শাহাদাতের খবর টুইটারের মাধ্যমে সাড়া বিশ্বের কাছে জানিয়ে দেয়ার কাজটাও ভালভাবে আঞ্জাম দেন তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ জুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী সরকারের তথাকথিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে পা হারানো প্রিয় ভাই রাসেল আহমদের পরিবারের কাছে সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সাদেত পার্টির সহ-সভাপতি হাসান বিতমেজ। তিনি বিবৃতিতে বলেন, ‘’বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর উপর করা সরকারের নির্যাতনের খবরগুলো আমরা উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছি, এবং আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বিশেষ করে গত ১৭ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধামি ছাত্রের পা কর্তন করার বিষয়টিতে আমরা উদ্বিগ্ন এবং তীব্রভাবে এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাই।‘’ তিনি আরও বলেন, ‘’আহত ছেলেটির পরিবার এবং আওয়ামী সরকারের আমলে জুলুমের শিকার হয়ে শহীদ হওয়া সকল ভাইদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাই।’

সাদেত পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসান বিতমেজ প্রফেসর গোলাম আযম সম্পর্কে বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলনের সিফাহসালার প্রফেসর গোলাম আযম এবং জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমরা খুব উদ্বিগ্ন তারা এবং ট্রায়ালে থাকা বাকী জামায়াত নেতাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। নইলে বাংলাদেশ সরকারকে এর চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন এই নেতা।

জেনারেলদের যাবজ্জীবন কারাদ-

তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাস বড়ই বন্ধুর। অনেক বাঁধাবিপত্তি মাড়িয়ে ১৯৫০ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রবেশ করে এ দেশে। বহুজাতিক গণতন্ত্রে প্রবেশ পরও এ দেশটি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। চার চারবার সেনা ক্যু’র শিকার হয় এ দেশ। ২৭ মার্চ ১৯৬০ এবং ১২ মার্চ ১৯৭১ সালের সেনা বিপ্লবের পর ১৯৮০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ইতিহাসের জঘন্যতম সেনা বিপ্লব। এ সেনাবিপ্লবের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সোলাইমান দেমিরালকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়, তুরস্ক গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বেলি (পার্লামেন্ট) বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ১৯৬১ সালের সংবিধানকে করা হয় বিলুপ্ত। ঐ সেনা বিপ্লবে জড়িত থাকার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কেনান এভরান (৯৭) এবং তৎকালীন বিমান বাহিনী প্রধান ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য জেনারেল তাহসিন শাহিনকায়াকে (৮৯) যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ, শতশত মানুষকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা, শিশুসহ শতশত মানুষকে ফাঁসি দেয়াসহ ১২ সেপ্টেম্বরের সেনা ক্যু’তে জড়িত থাকার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সেনা ক্যুর জীবিত মূল হোতাদের মধ্য থেকে ৯৭ বছর বয়সী জেনারেল কেনান এভরেন এবং ৮৯ বছর বয়সী জেনারেল তাহসিন শাহীনকায়াকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা এবং ট্রেড ইউনিয়ন এবং ১৯৮২ সালের সেনা ক্যু’তে ক্ষতির শিকার ব্যক্তিরা জীবিত জেনারেলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আঙ্কারাস্থ পাবলিক প্রসিকিউশন ব্রাঞ্চ তদন্ত করে জীবিত তৎকালীন তিন জেনারেলের বিরুদ্ধে এবং নুরেমবার্গ আদালতের সকল শর্ত মেনে নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইনের ৭৬৫ নং ক্রিমিনাল কোড এর ১৪৬, ১৪৭, ১৫৩, ১৭৪, ১৭৯, ১৮০ এবং ১৮২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল তদন্ত শুরু করেন। এবং ৪ এপ্রিল ২০১২ সালে ট্রায়াল শুরু হয়। আঙ্কারায় গতকাল বুধবার মামলার শুনানির সময় কেনান এভরান আঙ্কারাস্থ হাসপাতালে এবং অপর অপরাধী তাহসিন শাহিনকায়া ইস্তানবুলস্থ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ছিলেন। শুনানি শুরু হলে তারা টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেন। মামলার রায় ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে তৎকালীন সেনা প্রধান এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি কেনান এভরান ‘আমি এই রায়কে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি’ এবং অপরদিকে তাহসিন শাহিনকায়া ‘এ রায় আমি মেনে নিলাম’ বলে তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সরকারি হিসেবে জানা যায়, ১৯৮০ সালের ক্যু’র পর ৬৫০০০০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। ২৩০০০০ লোককে সামরিক আদালতে অভিযুক্ত করা হয়। প্রায় ৩০০ জন লোক জেলখানায় মারা যান তাদের মধ্যে ১৭১ জনকে নির্যাতনের মাধ্যমে মেরে ফেলা হয় এবং ৪৯ ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় যাদের মধ্য থেকে একজন ছিল ১৭ বছরের কিশোর।

এদিকে তুরস্কের আদালত অভিযুক্ত অন্য ২৩০ জন সামরিক অফিসারদের আপিলের ভিত্তিতে তাদের অবস্থা তদন্ত করে পুনরায় বিচার করার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম

Post a Comment

Previous Post Next Post