জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন ভোটে নাকি আদালতের রায়ে!

১৯৭২ সালের আরপিও‘র ১৯ অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি কোনো মতবিরোধ বা সাংঘর্ষিক বিষয় জড়িত নেই বলে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের। এই আদেশের পর ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ সংসদ সদস্যদের বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার কোনো পথ খোলা রইল না। হাইকোর্টের এমন আদেশে মনে হচ্ছে মূলত ক্ষমতাসীন দলের সাথে সুরে সুর মেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

শুক্রবার ইংরেজি দৈনিক নিউএজ পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী আদালতের বিবেচনার ভিত্তিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই কারণ এই নির্দেশনা সংবিধানের পরিপন্থী নয়। কিন্তু সকলেই জানেন আদালতের রায়ে নয় বরং জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন। সেক্ষেত্রে আদালত রায় দিয়ে বিতর্কিত সাংসদদের বৈধতা দিয়ে সাময়িক পার করে দিলেও নৈতিকতার দিক থেকে তাদের পরাজয় হয়েছে। সুতরাং আদালত যদি রায় দিয়ে সাংসদ নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাহলে ভোটাধিকার, জনগণের সাংবিধানিক অধিকার বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যায়। তাহলে ভোট ভোট করে জনগণের সস্তা আবেগ কেনার কোনো প্রয়োজন নেই।

যেহেতু রায়ের পুরো কপি এখনো হাতে পাওয়া যায়নি তাই রায়টির বিপরীতে বিজ্ঞ বিচারকগণ কেনো এই ধরনের রায় দিলেন তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তবে ধারণা করা যেতে পারে মূলত ক্ষমতাসীন দলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের বৈধতা দিয়ে মূলত ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনটিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার। কারণ বিতর্কিত নির্বাচনটি নিয়ে এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে সরকার। আর সেজন্যই বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করে ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই ধরনের ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়েছে সরকার।

সংবিধান রক্ষার নামে, গণতান্ত্রিক যাত্রা অব্যাহত রাখার নামে ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করে সরকার টেকনিক্যালি বৈধতা অর্জন করেছে, তবে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনটি সংবিধান মোতাবেক হয়েছে তবে এই নির্বাচনেও মেকানিজম হয়েছে।

সরকার গঠন করার জন্য যখন সংসদের অর্ধেক আসন হলেই যথেষ্ট সেখানে অনেক আসনে একটি মাত্র ভোটও পড়েনি তার পরেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে তাই নির্বাচন, সরকার গঠন বিষয়টি টেকনিক্যালি সুন্দরভাবে সমাধা করা হয়েছে। তবে যেভাবে সরকার সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করেছে তাতে কিন্তু জনগণ ভোটাধিাকার প্রয়োগ করতে পারেননি, জনগণের সাংবিধানিক অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া যেসব আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতেও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন না অথবা উৎসব মুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচনে মাত্র ১০-১২ ভাগ ভোট পড়েছে। মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের কারসাজিতে জনবিছিন্ন ভোট অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ক্ষমতাসীন দলটি পুনরায় বিতর্কিতভাবে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সমর্থ হয়।

জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা, জনগণকে পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে বাঁধা দেওয়া, সরকার গঠনের অভিমত দেওয়া থেকে বিরত রাখার বিষয়গুলো দেখে মনে হচ্ছে মূলত ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা, বৈধতা নিশ্চিত করার ফলে সরকার বিচারিক ব্যবস্থায় নিজেদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করেছে। সুতরাং সরকার বিচারিক সাহায্য নিয়ে নিজেদের বৈধতা দেওয়া যতই চেষ্টা করুক সরকার সাংবিধানিক ধারাকে নৈতিকভাবে বাঁধাগ্রস্ত করেছে। সরকার সকল উপায় অবলম্বন করে জনগণকে বোকা বানিয়েছে। জনগণের নাম ভাঙ্গিয়ে কার্য উদ্ধার করে সেই বোকা জনগণকে কলা দেখিয়ে ক্ষমতার মসনদে আরাম করে বসেছে।

উৎসঃ নিউএজ

Post a Comment

Previous Post Next Post