কলঙ্ক মুছতে ফের বিলবোর্ড নিয়ে আসছে আ.লীগ!

দুর্নীতি, গুম-খুন, হত্যা-অপহরণসহ নানা কলঙ্ক মুছে ফেলে আবারো হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরতে জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি। ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রচারণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এছাড়া নানামুখী সফলতা তুলে ধরতে একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হবে। এতে প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছরের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ নানা সফলতা তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ৬৫ বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। একটি দলের এর চেয়ে অর্জন আর কী হতে পারে।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পরই দেশকে যখন উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছানোর জন্য বঙ্গবন্ধু চেষ্টা করছিলেন, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তখন থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশে অপরাজনীতির প্রভাব পড়তে শুরু করে।

লেনিন বলেন, সমাজ কখনো একই গতিতে চলে না। জোয়ার-ভাটা আছে। বড় দল হিসেবে দলের মধ্যে সব নেতাকর্মীও এক রকম নয়। যেসব নেতিবাচক দিক আছে সেগুলা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ইতিবাচক দিকগুলো সামনে রেখে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার কাজ করছে। দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের দলের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
দলটির একাধিক নেতা জানান, আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগ ৬৫ বছরে পা দিচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কারণে বিভিন্ন সময় দলটি যেমন সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে তেমনি দলের আছে একটি গৌরবময় ইতিহাসও। আওয়ামী লীগ তার ৬৫ বছরের ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশে চারবার সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময় কিছু এমপি-মন্ত্রীর পাশাপাশি দলের প্রভাবশালী নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় যেমন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তেমনি অনেকেই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দল ও সরকারের জন্য সফলতা এনেছেন। সেসব ইতিবাচক দিক তুলে ধরে দলের তা স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি লিখিত ইতিহাস হয়ে থাকবে। সে জন্য একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতিসহ বড় বড় কেলেঙ্কারির সাথে দলের রাঘববোয়ালরা জড়িত হয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন যার জন্য দল ও সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

গত ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর দলের নেতাকর্মীরা একের পর এক গুম-খুন, অপহরণসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেক প্রভাবশালী নেতা মানুষের জমি দখলসহ বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে কোটিপতি বনে গেছেন। দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের দাপটে অনেকটা তটস্থ থাকেন সাধারণ মানুষ। এতে দলের অর্জন ম্লান হয়েছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অপরাধ দৃশ্যমান। বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিবেশী ভারতের দিকেও যদি লক্ষ করি তাহলে তাদের সফলতার পাশাপাশি অনেক কলঙ্কও রয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে আমাদের একটি বড় সফলতা রয়েছে। দল ও দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী। নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকা-ের জন্য দলের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে। সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছানোর জন্য ভবিষ্যতে আরো ভালো পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমন্বয়ক উপকমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। স্মরণিকা প্রকাশনা উপকমিটির আহবায়ক দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। স্মরণিকায় আওয়ামী লীগের জন্ম থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে দলের বীরোচিত ভূমিকা, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন, বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী আন্দোলন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জাতিসক্সেঘর এমডিজি পুরস্কারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ, সমুদ্রসীমা জয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অর্জন স্থান পাচ্ছে এবং গৌরবোজ্জ্বল অতীতের ওই চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।

এছাড়া উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কিছু অংশ ডিজিটাল ব্যানার, চার রঙের ফেস্টুন, পোস্টারের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এছাড়া দল ও সরকারের বিভিন্ন অর্জন প্রচারণার জন্য রাজধানীর প্রবেশপথসহ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মোড় ও পয়েন্টগুলোতে বিলবোর্ড টাঙানো হবে। ওই বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক, মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন অর্জনসহ ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান, পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমক ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন ও এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের তৃণমূলপর্যায়েও দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দলীয় সভাপতি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সফল করতে বিশেষভাবে নির্দেশও দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমন্বয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক অর্জন রয়েছে। গৌরবময় এসব অর্জন জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট ও পোস্টারের মাধ্যমে দলের অর্জনগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে। রাজধানী ঢাকাকে নতুন রূপে সাজিয়ে আগামী ২৩ জুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকে শুরু করে ২৮ জুন পর্যন্ত উৎসব পালন করা হবে।

উৎসঃ বিডিটুডে

Post a Comment

Previous Post Next Post