রাবিতে পা হারানো শিবির নেতার বর্ণনা

কৌশিকের চাপাতি দিয়ে পায়ে কোপ দেয় কিবরিয়া, গুলি করে রুনু

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের হাতে পা হারানো শিবির নেতা রাসেল আলম রামেক হাসপাতালের ৩১নং ওয়াডে বেডে শুয়েই বর্ণনা করলেন সেদিনের বর্বরতা। সোমবার বেলা ১টা ৪৭ মিনিটে ব্যক্তিগত কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে আসে নবাব লতিফ হল শিবির সেক্রেটারি রাসেল আলম। এদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৈহিদ আল হাসান তুহিনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিল। তাকে দেখামাত্র ধাওয়া করে। তাদের হাত থেকে বাঁচতে আরবি বিভাগের অফিস কক্ষের দিকে দৌড় দিলেও ছাত্রলীগের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি রাসেল। তাকে পুলিশের সামনে থেকেই ধরে নিয়ে গিয়ে শহীদুল্লাহ কলাভবনের দক্ষিণ গেটের গাছের বেদিতে বসিয়ে রাখে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে তাকে ঘিরে ধরে। পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আরবি বিভাগের পরীক্ষার কক্ষ থেকে রাবি ছাত্রশিবিরের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বাবলুকে আটক করে পুলিশ। এসময়ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাসেলকে ঘিরে রাখে। তারা বলতে থাকে তোমাকে কিছু বলা হবে। তুমি আমাদের সঙ্গে থাকো।
রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঘড়ির কাঁটায় বিকাল ৪টা হবে। এসময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তুহিন আমাকে বলে তুমি কৌশিকদের সঙ্গে (ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে) যাও। আমি তাদের কাছে বন্দি থাকায় তাদের কথামতো তাদের সঙ্গে শহীদুল্লাহ কলাভবনের দক্ষিণ গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি। দক্ষিণ গেটে ঢুকতেই বাঁয়ে ভবনের সিঁড়ি। সিঁড়ির নিচে ওরা (ছাত্রলীগ) ১০-১২ জন আমাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে কাওছার আহম্মেদ কৌশিক (ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) আমাকে জিজ্ঞাসা করে তুই ছাত্রলীগের ওপর গুলি করেছিস। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই চাপাতি দিয়ে ডান হাতে কোপ দেয় কৌশিক। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কৌশিকের হাত থেকে চাপাতি নিয়ে আমার ডান পায়ে কোপ দিয়ে গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে গোলাম কিবরিয়া (ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক)। সে সময়ও আমার কিছুটা জ্ঞান ছিল। শুধু ডান হাত এবং ডান পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছি না। গোড়ালি থেকে পা বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে আমার ডান পায়ে ও পরে বাম পায়ের উরুতে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু। গুলি করার পরে আমার আর জ্ঞান ছিল না।
শিবিরের এ নেতা আরও বলেন, ওরা আমাকে ঠা-া মাথায় হত্যা করার জন্য আটকিয়ে রাখে। কিবরিয়া, রুনু এবং কৌশিক আমাকে আঘাত করলেও ওদের সহযোগিতা করে রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি, মানব উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক সাবরিন জামিল সুস্ময় এবং ছাত্রলীগকর্মী রিনেট, মিজান ও স্থানীয় ছাত্রলীগকর্মী ডন।
সূত্র জানায়, গত সোমবার দুপুর ১টায় আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৪০৭ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা শুরু হয়। বিভাগের পরীক্ষার্থী ও শিবির নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে দুপুর দেড়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এবং নগরীর মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই ভবনের সামনের আমবাগানের ভেতরে অবস্থান নেয়। পরীক্ষা চলাকালীন বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ৩০৪-খ নম্বর কক্ষ থেকে শিবির নেতা বাবলুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ ঘটনার আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে শিবিরের আরেক নেতা রাসেলকে বিশ্ববিদ্যালয় শহিদুল্লাহ কলাভবনের ভেতর থেকে আটক করে ছাত্রলীগ। দীর্ঘ দু’ঘণ্টা আটকিয়ে রাখার পর বিকাল ৪টার দিকে শহীদুল্লাহ কলাভবনের মূল ফটকের সিঁড়ির নিচে রাসেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে ছাত্রলীগ। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সোমবার বিকাল থেকে গতকাল বেলা ১২ পর্যন্ত রাসেলকে অপারেশন থিয়েটারে রাখা হয়। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ।
তিনি বলেন, তার ডান পায়ের গোড়ালি কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। দুই উরুতে গুলি করা হয়েছে। এছাড়া তার দুই পা, দুই হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাসেল বিশ্ববিদ্যালয় নবাব আবদুল লতিফ হলের আবাসিক ছাত্র এবং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার শালিকা থানার তিথুলিয়া গ্রামে। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহেদ খন্দকার।ড়
রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পূর্ব জোন) তানভীর আলম চৌধুরী বলেন, রাসেলে ওপর হামলাকারীদের ধরার জন্য চেষ্টা চলছে। আশা করি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের শিগগিরই ধরতে পারবো বলে জানান তিনি।

উৎসঃ শিবির প্রচার বিভাগ

Post a Comment

Previous Post Next Post