টুঙ্গিপাড়ার ভ্যান চালক ইমাম শেখের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকরি হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ইমামের ভ্যান গাড়িটি রাখা হবে যাদুঘরে। এ ছাড়াও ইমামের বাবা মানসিক রোগী আব্দুল লতিফ শেখের চিকিৎসা ও ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিকশা ভ্যানে বসে শুক্রবার সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় নিজ এলাকা ঘুরে দেখেন। হাস্যোজ্জ্বল শেখ হাসিনা কোলে নাতিকে নিয়ে বসেন ভ্যানের সামনের দিকে, অন্য পাশে ভাগ্নে ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। পেছন দিকে বসেন রাদওয়ানের মেয়ে ও স্ত্রী পেপি সিদ্দিক।
প্রধানমন্ত্রী যে ভ্যানে বসে পৈত্রিক এলাকা ঘুরে দেখেন তার চালক ইমাম শেখ। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া উপজেলার পাটগাতী সরদার পাড়া গ্রামে। ১৭ বছর বয়সী ইমাম ভ্যান চালান দুই বছর ধরে। পরের দিন শনিবার ইমাম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বারবার একটি চাকরি দেয়ার কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমার ভ্যানে চড়ে ঘুরবেন- এমনটা কোনোদিনও কল্পনা করতে পারিনি। এ আনন্দে শেষ পর্যন্ত আর মনের কথা বলতে পারিনি।’
বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্যান চালনার দৃশ্য বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এর মধ্যে শনিবার রাতেই ভ্যান চালক ইমাম শেখের চাকরীর বিষয়টি মোটামোটি জানাজানি হয়।
গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে বিমান বাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির স্কোয়ার্ডন লিডার হারুন-উর-রশিদ টুঙ্গিপাড়ার সরদারপাড়া গ্রামে ইমাম শেখের বাড়িতে গিয়ে ইমাম শেখের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। এরপর তিনি ইমাম শেখের অসুস্থ পিতার চিকিৎসা ও ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন ইমামের মা শাহানূর বেগমের হাতে। এ সময় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির স্কোয়ার্ডন এ্যাসিট্যান্ট লিডার দেলোয়ার হোসাইনসহ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালেই বিমান বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল তার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার সরদার পাড়ায় পৌঁছে। সেখান থেকে ইমামকে জেলা শহরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ রুহুল আমিন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ দাউদ উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ধর্ম-বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহম্মদ আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, সকালে বিমান-বাহিনীর কর্মকর্তারা তার গোপালগঞ্জ শহরস্থ বাসায় আসেন এবং সেখানেই মোঃ ইমাম শেখকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থানকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামবাসীদের অত্যন্ত কাছে চলে যান এবং ইমাম শেখের ভ্যানে চড়ে গ্রাম-এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি ইমামের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের পরিবার সম্পর্কে জানেন। পরে ভ্যান থেকে নেমে ইমামকে বেশকিছু টাকা দিতে গেলে টাকা না নিয়ে বরং সে যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, তাতে প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সকলেই তার প্রতি মুগ্ধ হয়েছেন এবং প্রশংসাও করেছেন।
ইমাম শেখের সততার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পরে বিমান-বাহিনীর পক্ষ থেকে তার জন্য একটা সুব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একারণেই মোঃ ইমাম শেখের জন্য বিমান-বাহিনীর এ উদ্যোগ বলে জানান তিনি ।
বিমান বাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটির স্কোয়ার্ডন লিডার হারুন-উর-রশিদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইমামকে বিমান বাহিনীতে চাকরি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার নিয়োগপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভ্যান আমরা যশোর নিয়ে যাচ্ছি। পরে এ ভ্যান যাদুঘরে পাঠানো হবে
ইমামের মা শাহানুর বেগম বলেন , ১৭ বছর বয়সী ইমাম ভ্যান চালান দুই বছর ধরে। পঞ্চম শ্রেণিতে আটকে যায় ইমামের পড়াশোনা। এখন জীবনযুদ্ধ চলে ভ্যান চালিয়ে, যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। তার বাবা আব্দুল লতিফ শেখ মানসিক রোগী, মা গৃহিণী। ইমাম শেখরা দুই ভাই, তিন বোন।
ভ্যান-চালক মোঃ ইমাম শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু’র সন্তান, তিনি আমাদের ‘আপা’। সেদিন তিনি এতোগুলো ভ্যানের মধ্য থেকে আমার ভ্যানে চড়ে বসেছিলেন, তাতেই আমি ধন্য হয়ে গেছি। টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়ে আমার জীবন সার্থক হয়েছে।
রিপোর্টে পাঠকের মন্তব্য ছিলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কখনো ট্রেনে চড়বেন না, এতবড় যাদুঘর আমাদের নেই!