বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, জাতীয় ঐক্যে বাধা হলেও ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত ‘ফ্যাক্টর’। আর বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিলে যে কোনো কৌশলে হলেও আওয়ামী লীগ নির্ঘাত জামায়াতকে নিয়ে নেবে। ’৯৬ সালেও আওয়ামী লীগ এই জামায়াতকে নিয়েই বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। কাজেই জামায়াত সম্পর্কে বিএনপিকে ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত মন্তব্য করেন জাতীয় সংসদে নোয়াখালীর সেনবাগ এলাকা থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সাবেক এই এমপি।
তিনি উগ্র-সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এখন গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষ কিছু বলতেও পারছে না, সইতেও পারছে না। আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। তেমনি সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমেরও কণ্ঠ চেপে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে। গত এক মাসেই প্রায় অর্ধশত অনলাইন পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আসলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর কঠোর দমননীতি চালিয়ে কোনোরকমের নির্বাচন ছাড়াই টিকে থাকতে চাচ্ছে সরকার। বর্তমান সরকারের এই দমননীতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, এখন প্রতিদিনই বিরোধী দলের কোনো না কোনো নেতা-কর্মীকে ঘর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ এখন যেন নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তনু-আফসানাদের খুনিকে ধরতে না পারলেও ফেসবুকে বা অনলাইনে সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডের কেউ এক লাইন সমালোচনা করলে তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনবারের চার্জশিটে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের নাম না থাকলেও এ সরকার ক্ষমতায় এসে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে প্রতিশোধপরায়ণতা থেকে তার নাম এই মামলায় জড়িয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের বর্তমান দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য। তিনি বলেন, বিগত উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের একপেশে ও প্রহসনের নির্বাচনে বিএনপি কখনই অংশ নেবে না। দেশের ভিতরে চলমান জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য গণতন্ত্রহীনতাকেই দায়ী করলেন এই রাজনীতিবিদ।
নিজের এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইচ্ছা এবং চেষ্টা থাকলে যে কোনো অবস্থাতেই নিজের এলাকায় সাংগঠনিক ভিত শক্ত রাখা সম্ভব। সারা দেশে কমবেশি ইউপি নির্বাচনে জোরজবরদস্তি হলেও সেনবাগ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিতেই এবার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তা ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে আগেই জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে এটা আদৌ সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জঙ্গি দমনের নামে পুলিশের বর্তমান অভিযান রীতিমতো গ্রেফতারবাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করছে পুলিশ। আর যারা টাকা দিতে পারছে না, তাদের কপালে নেমে আসছে চরম দুর্গতি। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় এখন এ অবস্থা চলছে। কিন্তু ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারছেন না। যারা দুই লাখ, তিন লাখ করে টাকা দিতে পারছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর যারা টাকা দিতে পারছেন না, তাদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবির পাশাপাশি তার দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই এমপি বলেন, ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার সর্বান্তকরণ চেষ্টা করছে। বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট ভাঙারও চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে আমাদের দলের ভিতরেও তাদের এজেন্ট ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।