অব্যাহতভাবে সরকার ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধে সাধারণ মানুষ ও বিরোধীজোটের নেতাকর্মীদের বিনাবিচারে হত্যা করছে। ৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনে জনগণ ভোট না দেয়ার প্রতিশোধ হিসেবে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া সোমবার রাতে গেট টুগেদার অনুষ্ঠানে এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে এ কথা বলেন।
ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সূত্রটি জানায়, বিরোধীজোটের আন্দোলনের কারণে বিএনপি- জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যার নির্দেশ ছিল। সম্প্রতি শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নির্দেশনা দেন সাধারণ জনগণকেও হত্যা করার। কারণ তারা আওয়ামীলীগকে এবার নির্বাচনে ভোট দেয়নি। জনগণ ভোট দিলে বিএনপি এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সফল করতে পারতো না। সরকারের জনভিত্তি না থাকায় বিদেশিদের চাপ বাড়ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মামলা নেই, জিডি নেই, আইনী কোন জটিলতা নেই এমন মানুষও রক্ষা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধের কবল থেকে। দিনে দুপুরে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারে মারছে। বন্দুক যুদ্ধের নামের নিয়মিতই চলছে প্রাণহানীর ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নিয়মিত বন্দুকযুদ্ধ কেড়ে নিচ্ছে শত শত প্রাণ।
সোমবারে এক রাতের ব্যবধানে ৬ জনকে হত্যা করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, নাশকতার সময় গণপিটুনিতে তারা মারা গেছে। কিন্তু সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহতদের শরীরে দেখা মিলেছে ৫৬ টির অধিক গুলির চিহ্ন।
এলাকাবসীদর বরাতে জানা গেছে, রাতে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। কোন গণপিটুনির ঘটনা ঘটে নি।
অবশ্য পুলিশ পরবর্তীতে ভাষ্য পাল্টে আবারো সেই নিয়মিত বক্তব্যই দিয়েছে। তারা বলেছে নিহত ব্যক্তিরা নাশকতা চালানোর চেষ্টা করলে এলাকাবাসীরা তাদের ধরে গণপিটুনি দেবার সময় কেউ হয়ত লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে পারে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, পুলিশই এসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
এদিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বিএনপি নেতা ওয়াদুদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওয়াদুদ একজন ঝুট ব্যবসায়ী। তার নামে মামলা বা জিডি কিছুই ছিল না। কিন্তু ওয়াদুদ ফোনে তার চাচাকে জানান, মিরপুর মডেল থানা পুলিশ তাকে আটক করেছে। কিন্তু থানায় গিয়ে ওয়াদুদের কোন সন্ধান মেলেনি। পুলিশ জানায় ওয়াদুদ নামের কাউকে তারা আটক করেনি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়। ওয়াদুদের মোটরসাইকেল তাহলে কিভাবে মিরপুর মডেল থানায় গেল?
ওয়াদুদের চাচার বরাতে জানা যায়, মিরপুরে ক্রসফায়ারে একজন নিহত হবার খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ওয়াদুদের লাশ শনাক্ত করে। তার মাথা, বুক ও পিঠ মিলিয়ে মোট ৬টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
এদিকে ঝিনাইদহে নিহত পলাশ ও দুলালের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশরাই তাদেরকে হত্যা করেছে। পলাশের বাবা ঝিনাইদহ ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশের একটি টিম পলাশকে ধরে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে।
গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধ। নিহতও হচ্ছে অনেকে। তবে দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নানা প্রতিবাদ এবং বিরোধীতার পরেও কোনভাবেই থামছে না কথিত বন্দুকযুদ্ধ। বিভিন্ন মহল থেকে বার বার বলা হচ্ছে, পুলিশ যে কাউকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসী বলে চালিয়ে দিয়ে ক্রসফায়ারে দিয়ে দিলেই প্রমাণ হয় না সে সন্ত্রাসী। তাই ভয়ংকর দ্বিধায় রয়েই গেছে ক্রসফায়ার।
তারা বলছেন, ক্রসফায়ারে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিক অথবা বিরোধী দল বিএনপি অথবা জামায়াতের নেতা-কর্মী। সরকার আন্দোলনের নামে কথিত সহিংসতার প্রচার-প্রসার করছে বিভিন্ন উপায়ে। কখনো আলোচনা সভা আয়োজন করে, কখনো বা সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করে গণমাধ্যমের সাহায্যে দেশ-বিদেশে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা যদি সরকার এত স্পষ্টভাবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে পারে তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, সাদা পোশাকে নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের নামে হত্যার ঘটনায় নিহতদের তালিকা কেন প্রকাশ করছে না আইনশৃংখলা বাহিনী। প্রশ্নটা হয়ত বেশ কঠিন, তবে জবাব দেওয়াটা সরকারের পক্ষে আরও কঠিন।
একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মহিম মিজান এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ এখন ভয়ঙ্কর ক্রসফায়ারের দেশে পরিণত হয়েছে।পুলিশ সাংবাদিকদের সামনেই ক্রসফায়ারে মানুষ মারছে কিন্তু আমরা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে বাধ্য হচ্ছি।
বিভিন্ন নাগরিকরা বলছেন, শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই কোন জনগণের জন্য তার মায়া নেই। তিনি পুলিশের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেছে তাই পুলিশকেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়েছে। আর তার বলি হচ্ছি আমরা সাধারণ জনগণ। শেখ হাসিনা মানুষ খুনের রাজনীতি বন্ধ না করলে একদিন জনগণই তাকে খুন করবে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যার সংখ্যা হাজার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক আদালতে হাসিনার নামে মামলা করা হয়েছে।
(সংবাদটি গুরুত্বপুর্ণ মনে হলে পেইসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)