বরকল উপজেলার ভূষনছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য দুলাল তালুকদারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানান অপকর্মের অভিযোগ এনেছেন এলাকাবাসী। এক পঙ্গু বাবা অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে ‘নষ্ট’ করে ওই আওয়ামী লীগ নেতা মেয়ের নগ্ন ছবি তোলেন। রাঙামাটি শহরের রিপোর্টাস ইউনিটি কার্যালয়ে ‘ভূষনছড়া এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী পরিবার’-এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। এতে বক্তব্য দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য মনোয়ার গাজী, মাহফুজ মিয়া, ক্ষতিগ্রস্ত ফারজানা আক্তার ববি ও নাসরিন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, ভূষনছড়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ভিডিপির পিসি দুলাল তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে ভূষন ছড়া-কলাবুনিয়ায় সন্ত্রাস করে আসছেন। প্রতিবাদ করলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারধরসহ নানান ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয় এলাকাবাসীকে। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, দুলাল তালুকদার এলাকার সুন্দরী মেয়েদের ভয়-ভীতি ও নানান প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তাদের দিয়ে অন্যজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন।
এ ব্যাপারে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগ জানানোর পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ভুক্তভোগীদের অনেকেই বরকল থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ করেন সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে এক পা-বিহীন পঙ্গু মনোয়ার গাজী অভিযোগ করেন, “আমার পঙ্গুত্বের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল তালুকদার আমার মেয়েকে নষ্ট করে। তাকে রাঙামাটি শহরের ‘হোটেল প্রবাসী’র রুমে নিয়ে জোর করে নগ্ন করে ছবি তোলে এবং এই ছবি দিয়ে এলাকার বিদেশফেরত যুবক মাহফুজ আলমকে ফাঁসিয়ে দেয়।” ধর্ষণের শিকার দাবিদার নাসরিন আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি ও আমার বাবা মামলার হাজিরা দিতে একদিন রাঙামাটিতে আসলে দুলাল তালুকদার আমাকে তার রুমে নিয়ে যায় কথা আছে বলে। এরপর দরজা বন্ধ করে আমাকে জোর করে নগ্ন করে ছবি তোলে দুলাল তালুকদার। এরপর দুলাল আমাকে ধর্ষণ করে এবং যেভাবে বলে সেভাবে কাজ করতে হবে জানিয়ে হুমকি দেয়, অন্যথায় আমার ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। এই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময় দুলাল তালুকদার আমাকে রাঙামাটির হোটেল প্রবাসীতে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। আমি অসহায় হওয়ায় দুলাল তালুকদার আমাকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগে মাহফুজকে জেল খাটায় এবং বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।”
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়েটি বলেন, “বাবা একজন পঙ্গু মানুষ হওয়ায় আমাকে দিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করিয়েছে দুলাল তালুকদার। কয়েক দিন আগে আমার নগ্ন ছবিগুলো ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মামুনের সাথে জড়িয়ে এডিট করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় দুলাল তালুকদারের ভাতিজা দাবিদার আরিফুল। দুলাল তালুকদারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আমি গত ৪ অক্টোবর বরকল থানা গিয়েছিলাম মামলা করতে। কিন্তু থানার দায়িত্বরত অফিসার আমাদের ঘটনা শুনে কোনো মামলা নিতে পারবেন না বলে জানান।
নিরুপায় হয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।” সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক এলাকাবাসী জানান, দুলাল তালুকদার সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে এবং আনসার ভিডিপির কমান্ডার (পিসি) পরিচয়ে এহেন কর্ম নেই যা তিনি করেন না। এলাকার সুন্দরী নারীকে তার শয্যাসঙ্গীনি হতে বাধ্য করেন অন্যথায় ওই নারী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। থানায় আইনি প্রতিকার চাইতে গেলেও মামলা গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নীলু বড়ুয়া বলেন, “আমি বর্তমানে কক্সবাজার অবস্থান করছি। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শহিদ উল্লাহর কাছে বিষয়টি তুলে ধরলে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় তার নিজ কার্যালয়ে ভিকটিমকে ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, অপরাধী কে, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।” রাঙামাটি জেলার আনসার বাহিনীর কমান্ডেন্ট অফিসার মো.লূৎফর রহমানের কাছে দুলাল পিসির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার বাহিনীর কেউ যদি অপরাধী হয় এবং পুলিশ যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে আমার বাহিনীর আইন অনুসারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।” বরকল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেনং রাখাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি শুনেছি এবং এই ব্যাপারে দুলাল তালুকদারকে জিজ্ঞাসাও করেছি। কিন্তু সে বিষয়টি অস্বীকার করেছে।” তবে তিনি বলেন, “দলের যত বড় নেতা-ই হোক না কেন, নারী কেলেঙ্কারির মতো ঘটনাগুলোর দায়ভার কোনো অবস্থাতেই দল বহন করবে না।”
www.facebook.com/Voiceofsenbag