ফেনীতে হিন্দুসম্প্রদায়ের ওপর ক্ষমতাসীনদের হামলায় অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাত: ভাঙচুর লুটপাট আহত ২০ ||

ফেনী: ফেনীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা হামলা চালিয়েছে। হামলায় এক গর্ভবতীর গর্ভে থাকা সাত মাসের বাচ্চা মারা গেছে। এ সময় হামলাকারীরা হিন্দুদের দোকান, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে এবং লুট-পাট চালায়।  এঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০ জন আহত হয়েছেন। আরও হামলার ভয়ে অর্ধশত পরিবার বাড়ী-ঘর ছেড়ে নৌকা ওঠে ছোটফেনী নদীতে আশ্রয় নেয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে নদীতে ভাসতে থাকা পরিবারগুলো বাড়ি ফিরে আসে। 

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা জেলেপাড়ায় বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনার জেরধরে সরকার দল সমর্থকরা হিন্দুদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল হক, ফেনী মডেল থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক শুকদেব নাথ তপন, জেলা পুজা পরিষদের সভাপতি রাজীব খগেশ দত্ত, লিটন সাহা, গনেশ ভৈমিক বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবারে লক্ষ্মীপুজায় আতশবাজী নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে হিন্দুদের কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাথিয়ারা গ্রামের সাহাবউদ্দিনের ছেলে ইকবালের নেতৃত্বে ৭/৮জন যুবক জেলেপাড়ায় গিয়ে জহরলাল দাসের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এসময় জেলেপাড়া অবস্থানরত নারী-পুরুষদের গালমন্দ করতে থাকে ইকবাল গ্রুপের ক্যাডারেরা। ওই সময় স্থানীয় সংখ্যালঘু নেতারা এ মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এর কিছুক্ষণ পর ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সম্রারাট ও ইকবালের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন সশস্ত্র যুবক জেলে পাড়ায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় হামলাকারীরা পাড়ার সামনে প্রতিবন্ধী স্বপন দাসের দোকান ঘরটিতে ব্যাপক লুট-পাট চালায়।

এ দৃশ্য দেখে হামলা ঠেকাতে পাড়ার লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা গণহারে লুট-পাট ভাংচুর ও স্থানীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাতে থাকে।

এ সময় হামলাকারীদের হাত থেকে আহত রবিন্দ্র দাসকে রক্ষায় তার স্ত্রী তুলসি রানী দাস (১৮) এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কনিকার ওপর নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। ঘটনাস্থলে অন্তঃসত্ত্বা তুলসি’র প্রচ- রক্তপাত শুরু হয় এবং ভোর রাতে মৃত বাচ্চা প্রসব করে। একই সঙ্গে হামলাকারীরাদের অস্ত্রের আঘাতে আলোরানী দাস (২৮), জহরলাল দাস (৪৫), শোভারানী দাস (৪৫), বিকাশ (২৪), শুকদেব দাস (১২), পরিমল দাস (৬০) সহ প্রায় ২০ গ্রামবাসী গুরুতর আহত হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিকের সাহায্য চেয়ে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় নিরাপত্তার হীনতায় প্রায় অর্ধশত পরিবার বাড়ী ঘর ছেড়ে নৌকা ওঠে ছোটফেনী নদীতে আশ্রয় নেয়। রাত সাড়ে ৯টায় ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব মোর্শেদ হামলার সংবাদ পেয়ে ২টি মোবাইল টিম পাঠালে পুলিশ আসার সংবাদে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনার স্থলে পৌঁছালে জেলে পরিবারগুলি নদী থেকে পুলিশের সহযোগিতায় বাড়ী ফিরে আসে। আহতরা রাতেই পুলিশের সহযোগিতায় ফেনী সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে তুলসি রানী দাশকে আশংকাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত নবজাতকের ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফেনী সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার ছরোয়ার জাহান জানায়, অধিক রক্তক্ষরণে গৃহবধূ তুলসি এখনো শংঙ্কা মুক্ত নয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজু ঘটনার সত্যতা স্বীকারে বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে এমন লংঙ্কাকা- দেখে আমি নিজেও হতাশা হয়েছি। কোন বিশেষ মহল এ হামলায় নেপথ্যে নেতৃত্বে দিয়েছেন। হামলাকরীরা সরকার দলের কোন পদে না থাকলেও সকলেই সরকার দলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এ ইউপি সদস্য। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে জহরলাল দাস বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় সম্রারাট, ইকবাল, আফছার, আজাদ, নশা, জনি, কাজী, সাগর, পারভেজ, জুয়েল, ইমন, রাজু, স্বপন, জিয়া, শাহীন, জাবেবেদ ও রাজুর নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন।

http://www.facebook.com/voiceofsenbag

Post a Comment

Previous Post Next Post