সিলেটে আবারও সেফটিপিন দিয়ে মুখ আটকিয়ে পৈশাচিকভাবে শিশু নির্যাতন ||

সিলেট অফিস : বেড়েই চলছে শিশু নির্যাতন। ক্রমেই এর রূপ নিচ্ছে ভয়াবহতায়। কিন্তু তবুও থেমে নেই এমন নির্মম শিশু নির্যাতন। সিলেটে পৈশাচিক শিশু নির্যাতনের থেমে নেই। ছোট বড় এমন অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। মাত্র কয়েক মাস আগে এমন একটি বর্বোরোচিত শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সিলেটে। সেই নির্যাতনে ভয়াবহতা এমটাই নির্মম ছিলো যে শিশুটি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। ১৩ বছরের শিশু রাজন হত্যাকাণ্ডের নির্মমতা বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল গোটা বাংলার মানুষকে। এমন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলো সিলেটসহ সর্বমহলে। বর্বোরোচিত নির্যাতনের মাধ্যমে রাজনকে হত্যার পর এবার সিলেটের জৈন্তাপুরে ১৪ বছরের এক শিশু উপর চালানো হয়েছে পৈশাচিক নির্যাতন। নির্যাতনের সময় যাতে শিশুটি চিৎকার করতে না পারে সে জন্য তার মুখ আটকিয়ে দেয়া হয় সেফটিপিন দিয়ে। শুধু সেফটিপিন নয় পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তার হাত। নির্যাতনকারী এতে ক্ষান্ত হননি, চালিয়েছেন আরো নির্মম নির্যাতন। নির্যাতনের সময় স্টিলের গ্লাস গরম করে ছ্যাকা দেয়া হয়েছে তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে। একজন কিংবা দুইজন. নয় মহিলাসহ পাঁচজন মিলে একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় মানুষরূপী হিংস্ররা। শিশু নির্যাতন নিয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। ছেলের উপর লোমহর্ষক নির্যাতনের বিস্তারিত ঘটনা বলতে গিয়ে বার বার মূর্ছা যান তার পিতা। এ ঘটনাকে টাকার বিনিময়ে রফাদফার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী আসামি পক্ষ। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুর পিতা বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে, এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতা জৈন্তাপুর থানা পুলিশ মামলার এজাহার নামীয় আসামি হানিফা বেগমকে শনিবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা যায়, জৈন্তাপুর থানার ঘাটেরছটি যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন। পেশায় তিনি একজন মৎস্যজীবী। প্রায় সময় মামলার এজাহার নামীয় আসামি আব্দুল হান্নান উরফে বেন্ডাই তার নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যায়। এজন্য মৎস্যজীবী আবুল হোসেন ১৪ বছরের শিশু কামরুল তাদেরকে নৌকা নিয়ে যেতে নিষেধ করার পর তার উপর ক্ষেপে যায় আব্দুল হান্নান গংরা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রোববার রাত ৮টার দিকে যাত্রপুর গ্রামের আজির উদ্দিনের বাড়ির সামন দিয়ে পিতার জন্য হাওরে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল কামরুল। এসময় আব্দুল হান্নান ও হানিফা বেগম কামরুলকে আটক করে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। হাত-পা বেঁধে সেখানে ঘণ্টাব্যাপী তার উপর চলে মানুষরূপী হিংস্রদের অমানবিক নির্যাতন। সেসময় নির্যাতন সইতে না পেরে কামরুল চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকার বন্ধ করে রাখতে মুখে সেফটিপিন আটকিয়ে স্টিলের গ্লাস গরম করে পিঠের মধ্যে ছ্যাকা দেয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে কামরুলের পিতাসহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জৈন্তাপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে শনিবার দুপুরে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির পিতা মো. আবুল হোসেন (৪৫) বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার জৈন্তাপুর থানায় মামলা (নং-৫) দায়ের করেন। মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা হচ্ছে, আব্দুল হান্নান উরফে বেন্ডাই, হানিফা বেগম, আব্দুল আলী, হেলাল উদ্দিন, আজির উদ্দিন আসামিরা জৈন্তাপুর থানার ঘাটেরছটি যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা। জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিউল কবীর বলেন, শিশু কামরুলকে নির্যাতনের ঘটনার মূল হুতা হানিফা বেগমকে পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে। অবশিষ্ট আসামিদেরকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।কামরুলের পিতা আবুল হোসেন জানান, আমার ছেলেকে নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছেলের ইচ্ছার কারণে আমরা তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। সোমবার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করবো।

www.facebook.com/Voiceofsenbag

Post a Comment

Previous Post Next Post