মা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাবা চাকরিতে চট্টগ্রামে থাকেন। ঘরে আমি একাই ছিলাম। এ সুযোগে আমার চাচাতো ভাই জুয়েল হাওলাদার জোর করে আমাকে ধর্ষণ করে। আমার শরীর খারাপ ছিল। তার হাতে পায়ে ধরেও রেহাই পাইনি। চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে। এতে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। বিষয়টি এলাকার সবাই জেনে গেছে। জুয়েল এখন আমাকে বিয়ে করতেও রাজি হচ্ছে না। গত ৭ দিন ধরে সে গা ঢাকা দিয়েছে। এখন আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।’ বখাটে চাচাতো ভাইয়ের এমন নির্মমতার কথা বলে কেঁদে ফেলেন ঝালকাঠির নলছিটি সিনিয়র মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী।
গত ঈদের কিছুদিন পরের ঘটনা এটি। বখাটে জুয়েল হাওলাদার বরিশাল হাতেম আলী কলেজের এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে নলছিটি শহরতলীর কাঠেরপুল এলাকার নূরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে।
ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, ঈদের দুইদিন পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বামী চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে থাকেন। বড় ছেলেই তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। মেয়েকে একা ঘরে রেখে সবাই ব্যস্ত ছিল তার চিকিৎসা নিয়ে। এ সুযোগে ঘরের মধ্যে একা পেয়ে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে তার ভাসুরের ছেলে বখাটে জুয়েল হাওলাদার। এসময় কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলা হবে বলে তার মেয়েকে ভয় দেখানো হয়। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে এলেও বখাটে জুয়েলের ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি তার মেয়ে। ঘটনার দেড় মাস পড়ে হঠাৎ তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মেয়েকে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নিলে সে চিকিৎসা করাতে রাজি হচ্ছিল না। বিষয়টি তার সন্দেহ হলে মেয়েকে চোখের নজরে রাখেন তিনি।
ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রী জানান, মায়ের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে সে তার চাচাতো ভাই জুয়েলকে ফোন করে। ফোনে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জুয়েলকে জানায় সে। জুয়েল ১২ সেপ্টেম্বর রাতে তার জন্য গর্ভপাতের ওষুধ নিয়ে আসে। একটি খাওয়ানোর পরে জুয়েল আরো চারটি ট্যাবলেট তার মুখে দিয়ে চেপে ধরে। ওষুধ না খেলে ভাল হবে না বলেও হুমকি দেয় জুয়েল। ভাল হওয়ার পরে তাকে বিয়ে করবে বলেও জানায় জুয়েল। পরের দিন সকালে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এরপর থেকেই জুয়েল মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি জুয়েলের বাবাকে জানানো হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বরিশাল একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাফি করায় সে। এ খবর শুনে জুয়েলের বড়ভাই সোহেল হাওলাদার বরিশাল গিয়ে তার কাছ থেকে পরীক্ষার সকল কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়।
ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা জানান, খবর পেয়ে তিনি শনিবার চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। বিষয়টি তিনি (জুয়েলের বাবা) তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। এসময় তার বড়ভাই মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে বলেন। ঘটনাটি এলাকার সকলে জেনে গেছে, এখন অন্যত্র বিয়ে দিবো কি করে! এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েলের বাবা নূরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘আমার অনেক টাকা পয়সা আছে, এরকম ঘটনা ধামাচাপা দিতে সময় লাগবে না।’
এলাকাবাসী জানায়, এ ঘটনা থেকে উত্তরণের এক মাত্র উপায় হচ্ছে জুয়েলের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে। তা না হলে মা ও মেয়ে এলাকায় মুখ দেখাতে পারবে না। লজ্জায় তারা কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
এ ব্যাপারে জুয়েলের বাবা নূরুল ইসলাম হাওলাদারের বলেন, আমার সঙ্গে ছোট ভাইয়ের বিরোধ চলছে। তারা আমার কলের পানিও খায় না। এখন একটি মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমার ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকার লোকজনেও কি মিথ্যে বলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখন বরিশালে বাস-মালিক সমিতিতে আছি। আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।
নলছিটি থানার ওসি এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন,‘ বিষয়টি স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে শুনেছি। এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
www.facebook.com/Voiceofsenbag