গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সেনবাগ উপজেলার ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের ডমুরুয়া গ্রামে মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক সাহেবের নতুন ভবন উদ্ভধন কালে দোয়ার অনুষ্ঠান থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নির্দেশে পুলিশ সম্পুর্ন অন্যায় ভাবে আটক করে আমাকে সহ ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের নিরঅপরাধ জামায়াত নেতাদেরকে। বাদ পড়েনি ভবনের কাজ করা শ্রমিকরাও।
আমি সহ ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের জামায়াত সভাপতি মাওলানা আবুবক্কর ছিদ্দিক, সহসভাপতি অধ্যাপক আবুবক্কর ছিদ্দিক, শ্রমিক কল্যাণ সভাপতি মাওলানা আবদুল হালীম, ওয়ার্ড সভাপতি সাইফুল ইসলাম মোস্তফা, সোহেল, ফারুক, মিন্টু, রিয়াজ, সাইফুল, মহন, মঈন, মনির, রফিকুল ইসলাম সহ ইসলামী আন্দোলনের ১৪ বীর সেনাকে হাসিনা সরকার বন্দী করে রেখেছিল।
আমাদেরকে গ্রেফতারের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতারা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে নির্যাতন করে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে পঙ্গু করে দিতে। থানা হাজতে নেওয়ার পর পুলিশ বার বার আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করছিল যে তোরা জামায়াত শিবিরের কোন্ পর্যায়ের নেতা ? তোদের নির্দেশেই সেনবাগ উত্তর এলাকা জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীরা সংর্ঘবদ্ধ হয় আরো অনেক ধরনের প্রশ্ন। এক পর্যায়ে পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে এবং আমাদের পরিবারদের কাছে মোটা অংকের টাকার দাবী করে, টাকা না দিলে চিরতরে পঙ্গু করে দেবার হুমকি দেয়।
আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি, প্রার্থনা করেছি ধৈর্য্য ধারনের। আমরা নিশ্চিত আল্লাহ আমাদের সহায় ছিলেন। আমরা ওদের কাছে মাথা নত করিনি। ওরা আমাদেরকে ভয় ভীতি দেখিয়েছে বলেছে সারা জীবন শিকল পড়ে জেলে থাকতে হবে, কিন্তু তবুও আমাদের মনোবল ভাঙ্গতে পারেনি।
আমরা বলেছি, জেলে ভরে জুলুম করে আমাদের মন ভাঙ্গা যাবেনা, অত্যাচারের শিকল দিয়ে আমাদের মন বাধা যাবেনা। মোরা শক্ত হবো শিশিরের মত আসবে বিপদ বাধা যত, লক্ষ প্রাণের খুন ঝরাবো তবুও পরাজয় মানবোনা।
থানা হাজত থেকে জেলা কারাগারে যাওয়ার পর আমরা এক মুহুর্তের জন্যও হতাশ হইনি। কারন আমরা কারাগারে সান্নিধ্য পেয়েছি ইসলামী আন্দোলনের সিপাহসালার নোয়াখালী জেলা আমীর মাওলানা আবদুল মুনায়েম, শহর আমীর মাওলানা রুহুল আমিন সাহেবকে। যিনারা আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে বলেছিলেন “চিন্তা করোনা সাহস রাখ মেঘ কেটে যাবে”।
সান্নিধ্য পেয়েছি (বি ডি আর) ওস্তাদ সালাউদ্দিন সহ অনেক (বি ডি আর) এবং ইসলামী আন্দোলনেরর কর্মী, সাথী, সদস্য, রোকন, জেলা নেতা যারা তাদের বরকতময় চুম্বন এঁকে দিয়েছিলেন আমাদের কপালে।
আমরা দীর্ঘ আড়াই মাস কারা ভোগের পর মুক্তি পেলাম আওয়ামী জুলুম শাহীর কারাগার থেকে। আর মুক্তি পাওয়ার দিন কোলাকোলি করে আমাদের কপালে চুমু দিয়ে দোয়া করে বিদায় জানাতে জানাতে বলেছিলেন “যাও মুক্ত হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ঝাপিয়ে পড়, আমরাও আসছি। আল্লাহ তোমাদের সহায় হবেন”।
পরিশেষে আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠনের দ্বীনি ভাইয়েরা আপনারা যারা আমাদের ১৪ জন ভাইয়ের জামিনের ব্যাপারে তখন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন, দোয়া করেছেন, নফল রোজা রেখেছেন আল্লাহ তাদের সবাইকে জাযায়ে খায়ের দান করুক।
আমার দ্বীনি ভাইদেরকে বলবো আসলে আপনাদের এই ভালোবাসা একজন মজলুম কুরআনের কর্মীর প্রতি, কোনো ব্যক্তির প্রতি নয়। হতাশ হওয়ার কিছু নেই অন্ধকার যত গভীর হয় সূর্য তত দ্রুত উদিত হয়। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, অন্যান্য যে সকল মজলুম ভাইয়েরা এখনও যারা কারাগারে বন্দি, আল্লাহ তাদেরকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন। আমীন।
লেখক- এম এ এইচ রায়হান
কারা নির্যাতিত জামায়াত নেতা।