ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকার নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সমালোচকরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেগুলিতেই বেশি সরব। শেখ হাসিনার পুরস্কার সেখানে ঢেকে যাচ্ছে তিরস্কারে।
ব্রিটেনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার মূল্যায়নধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্যদের বক্তব্যও স্থান পেয়েছে।
সাক্ষাৎকারে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ এবং ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও নাকচ করে দাবি করেন, ‘‘জনগণ চায়, তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হোক। আমি তাদের সেই চাহিদা পূরণেই কাজ করছি। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও চাকরির ব্যবস্থা করছি।”
তবে শেখ হাসিনা সম্পর্কে নিজেদের বিশ্লেষণে ভিন্ন কথা বলেছেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সামরিক কর্মকর্তা।
মাহফুজ আনাম দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল রাখার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন।
সাম্প্রতিক জরিপে যে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তা-ও অস্বীকার করেননি।
তবে শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করে মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘‘গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে এখন গণমাধ্যমের সমালোচনাও বন্ধ করতে চাইছে।”
আতাউর রহমান গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কর্তৃত্বমূলক শাসন এখন এক ব্যক্তির শাসনের দিকে যাচ্ছে। এর ফল হিসেবে গণতন্ত্র এখন খাদের কিনারায়।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে দেশে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
তবে ঢাকায় কর্মরত জাতিসংঘের কর্মকর্তা রবার্ট ওয়াটকিনস সে আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘যতদিন অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে, জনগণ কাজ পাবে, সরকার অন্ন দিতে পারবে, ততদিন জনগণ হয়ত গণতন্ত্র নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন হবে না।’
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় গার্ডিয়ানকে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য চাওয়া হয়েছিল। সেখানে অধিকাংশ পাঠক নেতিবাচক মন্তব্যই করেছেন।
আমিনুল হক সম্প্রতি টাঙ্গাইলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেই হয়তে জানতে চেয়েছেন, ‘রাস্তায় গুলি করে সাধারণ মানুষকে মারছেন, সেটাও কি সেবার মধ্যে পড়ে?
মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রধানমন্ত্রীকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন এবং দেশ পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন।
আনিক হাসান মনে করেন, শেখ হাসিনাকে জনগণ, ‘সেবিকা হিসাবে চায় না, তবু তিনি সেবার নামে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছেন।’
অমিত কুমার সম্ভবত সব রাজনীতিবিদের প্রতিই আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই তার মতে, ‘বাংলাদেশেরর কোনো রাজনৈতিক দলই মানুষের কথা ভাবেনা, নিজের দলের এবং নিজেদের স্বার্থের জন্যে করে। আম জনতার কথা কেউ ভাবে না।’
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ঈদুল আজহা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের বাইরেই থাকছেন এই ঈদে।
খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আজ যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ১ অক্টোবর পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে থাকবেন তিনি।
৮ দিনের এ সফর চলার সময় পরিবেশ নিয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অফ দি আর্থ’ এবং তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) পদক গ্রহণ করবেন তিনি।
অথচ এ সব খবর সেভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসছে না। সমালোচনা এবং তিরস্কারের নীচে পড়ে আছে শেখ হাসিনার দু-দুটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির খবর।
www.facebook.com/Voiceofsenbag