দেশজুড়ে এখন নিয়ন্ত্রণহীন মাদকের বিস্তৃতি, ক্রমেই হয়ে উঠছে সর্বগ্রাসী। ভয়াল মাদক মেধা, লেখাপড়া, তারণ্য, মনুষ্যত্ব, বিবেক, সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া-মমতা, ভালোবাসা, এমনকি পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে বাবা-মা, আবার বাবার হাতে সন্তান, স্বামীর হাতে স্ত্রী ও ঘনিষ্ঠজনের হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
আমাদের সেনবাগেও মাদকের বিস্তার হচ্ছে বহুগুনে, বেড়ে চলছে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। সেনবাগ উপজেলার প্রায় প্রতিটি হাট-বাজারে ও গ্রাম্য চায়ের দোকানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে মাদকের আসর বসে। হাত বাড়াইলে পাওয়া যায় মাদক। শুধু তাই নয় মোবাইল ফোনে অর্ডার দিলেও মোটরসাইকেল যোগে মাদক পৌঁছে যায় মাদকসেবীর কাছে।
সেনবাগ- কুমিলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় উপজেলার বেশীর ভাগ মাদক প্রবেশ করছে বক্সগঞ্জ হয়ে গাজিরহাট আলতার মোড় রুটে, দৌলখাঁ বাজার হয়ে কানকিরহাট রুটে, ফেনী হয়ে দরবেশেরহাট, নদীরপাড়, ইলিয়াছ মোড় হয়ে গাজিরহাট রুটে, চিলাদী ও বসন্তপুর হয়ে ছাতারপাইয়া রুটে। কোম্পানীগঞ্জ থেকে উপজেলার নলদীয়া, চন্দেরহাট, আইসের টেক,কুতুবের হাট রুটকে মাদক সরবারাহের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
সেনবাগ থানা পুলিশের বিশেষ কিছু অভিযানে কিছু ক্ষুদ্র মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও, ধরা ছোঁড়ার বাহিরেই রয়ে যাচ্ছে রাঘভ বোয়ালরা। তাছাড়া যেখানে মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে সরকার দলীয় কর্তাব্যক্তিদের লাল টেলিফোনের খবরধারী ও হলুদ খামের ভালোবাসা সেখানে প্রশাসন চোখ থাকিতে যেন অন্ধ। দেখা গেছে বিপুল পরিমান মাদকসহ হাতে নাতে ধরা পড়া আসামীরা কিছুদিন জেলে থাকার পর সরকার দলীয় কর্তাব্যক্তিদের টেলিফোনের জোরে জামিন পেয়ে যাচ্ছ। জামিনে এসে পুনরায় শুরু করে মাদক ব্যবসা।
সেনবাগের বেশীরবাগ মাদক ব্যবসায়ীরা সরকার দলীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবিত হচ্ছে । নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রভাবিত হয়ে চালাছে রমরমা মাদক ব্যবসা। যেখানে লাল টেলিফোনে খবরধারী, সেখানে প্রশাসন একেবারেই নির্বিকার, অসহায়। যার কারণে মাদক ব্যবসায়ীদের দাপট অনেক বেশী । এর ফলে সমাজে মাদকের ছড়াছড়ি ।
মাদকের কারণে দেখা দিচ্ছে সামাজিক অবয়। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে আজ সমাজপতিরা স্তব্ধ। আজকাল সমাজে মাদকসেবীদের উপর কেউ কথাও বলে না। প্রকাশ্যে দিবালোকে মাদক ক্রয় বিক্রি হলেও কেউ প্রতিবাদ করছে না। প্রতিবাদের ভাষা যেন কালো মেঘে ডাকা পড়ে গেছে। অপরদিকে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দিতে হয় বড় মাপের মাসুল , হারাতে হয় মান- সম্মান - ইজ্জত।
একজন পিতা-মাতার কাছে প্রিয় হলো তাদের আদরের সন্তান। অথচ সন্তানরা কি করছে , কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে চলছে , কি খাচ্ছে তার খোঁজ খবর রাখার সময় আজ যেন পিতা মাতাদের একেবারেই নেই। টাকা পয়সা আর ধন সম্পত্তি উপার্জনের পিছনে ছুটে বেড়াছেন দিনরাত। অথচ পিতৃস্নেহ মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে ও পিতা-মাতার মূল্যবান সম্পদ প্রিয় সন্তান সর্বনাশী মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্ত হয়ে তীলে তীলে ধ্বংস করে দিচ্ছে নিজেকে । এ সবের আমরা খবর রাখি কি ?
যারা এ সর্বনাশী ভয়াল মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার দেখা দেখি আপনার ছেলে-মেয়েরাও শিখছে এসব। একবারও কি ভেবে দেখেছেন, আপনার -আমার সন্তানরা কোন দিকে পা বাড়াচ্ছে ? কি হবে আগামী প্রজম্মের ভবিষ্যত ? কলম ছেড়ে, বই খাতা ফেলে তারা কোন অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। ভয়াল মাদকের থাবা থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সামাজিক ঐক্যের, প্রয়োজন আলেম -ওলামা , শিক্ষক, সুশীলসমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সকলের ঐক্যমত।
আসুন আমরা সকলে মিলে এই পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে শপথ গ্রহণ করি, মরন নেশা মাদককে না বলি সমাজ থেকে মাদক এবং মাদক সেবী মাদক ব্যাবসায়ী কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করি।
অন্ততঃ আপনার আমার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাদককে ‘না’ বলুন। আসুন না আমরা সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি ।
সেনবাগ প্রতিনিধি/দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ১৯ জুন ২০১৫।