আজ ২৩ মার্চ। আমার জীবনের স্মরনীয় দিনগুলির মধ্যে অন্যতম দিন এটি। আজ আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার ১ম বার্ষিকী। ২০১৪ সালের এই দিনে পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে আমি অংশ গ্রহন করেছিলাম। এটি ছিল আমার জীবনের প্রথম কোন নির্বাচন। আমি কোনদিন কোন স্কুল-কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন সমিতির নির্বাচনেও অংশগ্রহন করিনি। আক্ষরিক অর্থেই এটি আমার জীবনের প্রথম নির্বাচন।
‘সাঈদী পরিবার’ পারিবারিক ভাবে সিন্ধান্ত নিয়েই আমাকে এই নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য মনোনিত করেছিল। জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে অংশ গ্রহনের পেছনে ঐতিহাসিক একটি কারনও ছিল। আপনারা জানেন, ২০১০ সালের ২৯ জুন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যা-বানোয়াট, কল্প-কাহিনী সাজিয়ে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিশ্বের অগণন মানুষের হৃদয় স্পন্দন, আমার আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করে। আজ দীর্ঘ প্রায় ৫টি বছর আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে জালিমের কারাগারে বন্দি আছেন।
আমার আব্বার বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ অভিযোগের ঘটনাস্থল হিসেবে যেটিকে দেখানো হয়েছে সেটি হলো পিরোজ পুরের জিয়ানগর উপজেলা। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট ২৮ জন স্বাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে স্বাক্ষ্য প্রদানের জন্য হাজির করানো হয়েছিল। তার মধ্যে ২২জন স্বাক্ষীই ছিল এই জিয়ানগরের, যারা কিনা ট্রাইব্যুনালে স্বাক্ষ্য প্রদান করেছে এই মর্মে যে, ১৯৭১ সালে জিয়া নগরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত সকল অপরাধের দায় ভার আল্লামা সাঈদীর (!!)।
এমনি একটি প্রেক্ষাপটে ‘সাঈদী পরিবার’ জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সিন্ধান্ত নেয়। আমাদের জানা ছিল, আমরা নির্বাচনে পরাজিত হলে সরকারের জন্য সুবিধা হবে সারা বিশ্বকে এটা দেখাতো যে সাঈদী যুদ্ধাপরাধী, তাই তার এলাকার লোকেরা তার সন্তানকে ভোট না দিয়ে প্রত্যাক্ষান করেছে। আমাদের এটাও জানা ছিল, এই জালিম সরকার নির্বাচনে আমাদেরকে পরাজিত করার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
আল্লামা সাঈদীকে গ্রেফতার করে সরকার প্রমান করতে চেয়েছে সাঈদী যুদ্ধাপরাধী আর আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে দেখাতে চেয়েছি, যুদ্ধাপরাধ নয় কোরআনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌছে দেয়াই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ, জনপ্রিয়তাই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ, ইসলামী আন্দোলন করাই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ।
জিয়া নগরবাসী স্বাক্ষী, আমাদের ধারনাকে সত্য প্রমান করে হেন অপকর্ম নাই যা সরকার দলীয় লোকেরা তাদের প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদেরকে নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য করে নাই। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন মেহেরবানীতে জনগন যেভাবে মাঠে ময়দানে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তাতে সরকার দলীয় লোক এবং প্রশাসনের পিছু হটে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা ছিলনা।
আল্লাহর দয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে এটা দেখাতে এবং প্রমান করতে সক্ষম হয়েছি যে, সরকার কোরআনের ময়দান থেকে আল্লামা সাঈদীকে দূরে রাখার জন্য, জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যই আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে। সরকার জিয়ানগরের তাদের দলীয় ২২জন সুবিধাভোগী লোককে ট্রাইব্যুনালে প্রশিক্ষণ দিয়ে হাজির করে প্রমান করতে চেয়েছে আল্লামা সাঈদী যুদ্ধাপরাধী অপরদিকে নির্বাচনের সময় জিয়া নগরের জনগন আমাকে ভোট দিয়ে প্রমান করেছে আল্লামা সাঈদী নির্দোষ, নিরাপরাধ।
পিরোজপুরবাসী সাক্ষী, আল্লামা সাঈদী যে ৩টি নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করছেনে তার প্রত্যকেটতিইতে পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধরে সংগঠক, স্বনামধন্য প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা আল্লামা সাঈদীর পক্ষে তাকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরশ্রিম করছেনে। আল্লামা সাঈদী যদি স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীই হতেন তাহলে স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধারা কী আল্লামা সাঈদীর পক্ষে এক মুর্হূতরে জন্যও কাজ করতনে ??
আল্লামা সাঈদীর যদি স্বাধীনতা বিরোধী কোন ভূমকিা থাকত, তিনি যদি যুদ্ধাপরাধীই হতেন তাহলে কি পিরোজপুররে মানুষ র্ধম-র্বণ নির্বিশেষে আল্লামা সাঈদীকে র্সবোচ্চ সংখ্যক ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতনে !!??
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জিয়া নগরের জনগন আল্লামা সাঈদীকে ভালো বাসে বলেই তারা আমাকেও ভোট দিয়ে এই উপজলোর চেয়ারম্যান নির্বাচিত করছেনে। ১৯৭১ সালে আল্লামা সাঈদী যদি জিয়ানগরের হিন্দুদেরকে জোর করে মুসলমান বানাতনে, নির্যাতন করতনে, লুটপাট করতনে, বাড়ি ঘরে আগুন দিতেন তবে কি এইসব মানুষরো আমার আব্বা আল্লামা সাঈদীকে ভোট দিতেন!!
আমাকে ভোট দিতেন ?????
সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আমাকে যারা ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লামা সাঈদী যুদ্ধাপরাধী নন, তাদের সকলকে আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা সাঈদীর পক্ষ থেকে, সাঈদী পরিবারের পক্ষ থেকে এবং আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন আমার আব্বার মুক্তির ফায়সালা করে দেন।
সাথে সাথে আমি আমার নিজের জন্য দোয়া চাই, যাতে করে জনগন যে পবিত্র দ্বায়িত্ব আমার উপর অর্পন করেছে তা আমি আমানতদারিতার সাথেই পালন করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাকে তাঁর দ্বীনের পথে অবিচল রাখুন, শযতানের সকল অসওয়াসা থেকে আমাকে হেফাজত করুন, জিয়া নগরকে নিয়ে আমার সকল স্বপ্নগুলো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর আপন কুদরতে বাস্তবায়ন করে দিন। আমীন, ইয়া রব্বাল আলামীন।
নিজস্ব প্রতিনিধি/দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/২৩ মার্চ ২০১৫।