শীর্ষ স্থানীয় সাহসী চার মিডিয়ার কর্ণধার এখন কারাগারে ||

ঢাকা: দেশের শীর্ষ স্থানীয় সাহসী চারটি গণমাধ্যমের কর্ণধারেরা এখন কারাগারে। প্রবীণ সাংবাদিকরা বলছেন, এ ঘটনা নজিরবিহীন।

কারাবন্দি সম্পাদক ও মালিকরা হলেন- আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আলী ফালু, একুশে টিভির (ইটিভি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলী।

এই চারটি গণমাধ্যমই  বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত।

এর মধ্যে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে আটক করা হয় ২ ফেব্রুয়ারি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে বোমা হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে ৬ জানুয়ারি রাতে টেলিভিশন কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় আটক করা হয়। আটকের পর তাকে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকেও ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সালামকে গ্রেপ্তারের পর কেবল অপারেটরদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একুশে টিভির সম্প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

এর আগে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। এরপর তাকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। বর্তমানে অর্ধশতাধিক মামলায় তিনি কারান্তরীণ। বন্ধ রয়েছে আমার দেশ-এর প্রকাশনা।

দৃশ্যত গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক বিচারপতির কথোপকথন প্রকাশ করার কারণে দ্বিতীয় দফায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১০ মাস জেল খাটার পর তিনি মুক্তি পান।

এর আগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে দৈনিক নয়াদিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে। তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গত বছরের ২ নভেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।

পরে ৩০ নভেম্বর মীর কাসেম আলী বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করেন তার পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিন্ন মতের তিন মিডিয়া কর্ণধারকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার অন্য মিডিয়াগুলোর কাছে শীতল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।

ইংরেজি দৈনিক নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ আরটিএনএন-কে বলেন, এটা সরকারের নিন্দনীয় ও ভুল পদক্ষেপ। এর আগে দেশে এই ধরণের ঘটনা কখনো ঘটেনি। এটা নজিরবিহীন।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এটা মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই অবিলম্বে তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া উচিৎ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আলোচিত তিন মিডিয়া কর্ণধারকে জেলে পাঠানোর মাধ্যমে সরকার বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের জন্যই তারা এটা করছে। সামান্যতম নিরপেক্ষ যারা থাকছেন তাদের ধরে জেলে ভরছে সরকার।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ০৭ফেব্রুয়ারি,২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post