রোববার রাতে গুলশান কার্যালয়ে অনলাইন ভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্টদের সংগঠন ব্লু ব্যান্ড কল-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন,
আমি এখনও এত দূর্বল হয়ে যাইনি। আন্দোলনের মাধ্যমে জুলুমবাজ এ সরকারকে বিদায় করত পারব। আগামীদিনের আন্দোলনে আমি নিজেই রাজপথে থাকবো।
তিনি বলেন, দেশের তরুণদের শিক্ষাদীক্ষা ও প্রশিক্ষণে যোগ্য করে তুলতে হবে। তরুণদের হাতে দেশের আগামীদিনের নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। তার আগে এ জালিম সরকারকে বিদায় করতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আজকে দেশ মহাসঙ্কটে। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। বর্তমান সরকার যোগ্য ও মেধাবীদের জন্য চাকরির কোন সুযোগই রাখেনি। যুব সমাজ চাকরি চাইছে কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষাদীক্ষা দরকার। কিন্তু সরকার মালিকদের বাধ্য করছে, শিক্ষাদীক্ষা থাকুক না থাকুক আওয়ামী লীগের লোকজনদের চাকরি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ফার্স্ট ক্লাসেরও কোন দাম নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোক হলে থার্ড ক্লাস হলেও চাকরি হচেছ। তাহলে আমাদের ভবিষ্যত কি?
তিনি বলেন, আমি কোনদিন বলিনি যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের চাকরি হবে না। আমাদের সময়ে আওয়ামী লীগের বহু লোক চাকরি করেছে। তারা যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও অফিসার ভালো হলে তাদের চাকরি বা পদোন্নতিতে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করিনি। এখন ভাল অফিসারদের বিএনপি করার অপরাধে ওএসডি ও চাকুরিচ্যুত করছে।
খালেদা জিয়া বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা থাকা অবস্থায় আমার যে এপিএস ছিলেন তিনি ভাল অফিসার ছিলেন। ৫ই জানুয়ারির পর তিনি আর আমার এপিএস নেই। আমার এপিএস হওয়ার কারণে আজও সে পদোন্নতি পায়নি। কিন্তু আমাদের সময়ে শেখ হাসিনার এপিএসকে পদোন্নতি দিয়েছি। আওয়ামী লীগ-বিএনপির হিসেবে এ বৈষম্য করা খুবই খারাপ নীতি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো এখন অছাত্র দিয়ে ভরা। সেখানে তো অন্য কোন দলের ছাত্রদের থাকতে দেয়া হয় না। সেখানে শিক্ষক থেকে কর্মচারী সবাইকে আওয়ামী লীগ করতে হবে নইলে থাকতে পারবে না। তাই প্রতিনিয়ত আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে বিনিয়োগ নেই, মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকারের দুর্নীতি ও ভূলনীতির কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিদেশীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ দেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, দুর্নীতি, সুশাসন নেই। গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়ন হবে কি করে। গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা থাকবে কিভাবে, আর জবাবদিহিতা না থাকলে উন্নয়ন হবে কি করে?
তিনি বলেন, আমাদের দেশে গার্মেন্ট শিল্প বিকশিত হয়েছিল। এই খাতে বাংলাদেশ বিশ্বের দুইনম্বর স্থানে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু এখন গার্মেন্ট খাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে সমস্যা। মালিক ও শ্রমিক দুইপক্ষেই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। গার্মেন্ট মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছে। ব্যবসা ভালো না থাকলে মালিকরা টিকিয়ে রাখবে কি করে। ফলে বাংলাদেশ এখন চার নম্বরে চলে গেছে। শিল্পকারখানাগুলো বিদেশীরা কিনে নিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশী শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আজ তোমাদের দেখে আমি সাহস পেয়েছি। আমাদের পেছনে দেশের তরুণ সমাজের এমন একটি অংশ আছে যারা দেশকে নিয়ে চিন্তা করে। যাদের হাতে আগামীর বাংলাদেশ নিরাপদ। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। কারও গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকতে নয়। সেটা সত্যিকারের স্বাধীনতা নয়।
খালেদা জিয়া বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমশক্তি রপ্তানী বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের অনেকেই ফিরে এসেছে। শ্রমশক্তি না নেয়ার একটিই কারণ-সরকারের ভুলনীতি। কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল হবে। তাই সেখানে প্রচুর শ্রমিক নিচ্ছিল। সেখানে একটি ভোটাভুটির ব্যাপার ছিল। কাতারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও আছে। আমাদের ভোট দেয়া উচিত ছিল কাতারকে, কিন্তু দিয়েছে রাশিয়াকে। তারা বলল, বাংলাদেশ আমাদের ভোট দিল না, আমরা লোক নেব না। সেদিন আমার কাছে আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদুত এসেছিলেন।
তিনি বোঝাতে চাইলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন তারা শ্রমিক নেবে না। সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। সেখানে আমাদের শ্রমিকরা বড় কষ্টের মধ্যে আছেন। নতুন তো নিচ্ছেন না, যারা আছেন তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আমরা আস্তে আস্তে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছি। বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি।
দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪